কক্সবাংলা ডটকম(১২ ডিসেম্বর) :: বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের বিভাগীয় সমাবেশের আগে আগে পুঁজিবাজারে করুণ চিত্র তৈরি হলেও শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ হওয়ার পর ধীরে ধীরে গতি ফিরতে শুরু করেছে পুঁজিবাজারে।
টানা দ্বিতীয় দিনের মতো সূচক বৃদ্ধির পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইতে লেনদেন ১২ কর্মদিবস পর ছাড়াল পাঁচ শ কোটি টাকার ঘর।
আগের দিনও লেনদেন গত বৃহস্পতিবারের উত্তেজনার তুলনায় বেড়েছিল ১২০ কোটি টাকার মতো। সোমবার সেখান থেকে বাড়ল আরও দেড় শ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে ৫৬৮ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এর আগে সবশেষ পাঁচ শ কোটি ছাড়িয়ে লেনদেন হয় গত ২৩ নভেম্বর। আর সোমবারের চেয়ে চেয়ে বেশি লেনদেন হয় এক মাস আগে গত ১৪ নভেম্বর। সেদিন হাতবদল ঞয় ৭১৪ কোটি টাকার বেশি।
বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কার মধ্যে দেশে রিজার্ভের পতন ছাড়াও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নিয় উৎকণ্ঠার কারণে গত মাস দুয়েক ধরেই পুঁজিবাজার টালমাটাল। ফ্লোর প্রাইসের কারণে শ তিনেক কোম্পানির শেয়ার একটি নির্ধারিত দরের নিচে নামতে না পারার বাস্তবতার মধ্যে লেনদেনও দৃশ্যত আটকে ৭০ থেকে ৮০টি কোম্পানিতে।
কোনো দিন ৬০টির বেশি, কোনো দিন ৭০ টির বেশি, কোনো দিন ৮০টির বেশি কোম্পানির ক্রেতা উধাও হয়ে যায়। আর দুই শতাধিক কোম্পানির ক্রেতা থাকলেও লেনদেন হওয়া শেয়ারের সংখ্যা খুবই কম।
এর মধ্যে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে রাজনীতিতে উত্তাপের কারণে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন কমতে কমতে দুই শ কোটি টাকার ঘরে নেমে যায়।
তবে শেষমেশ নানা শঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে সমাবেশটি হয়েছে শান্তিপূর্ণ। আর বিএনপি যে কর্মসূচি দিয়েছে, তাও অনেকটাই নমনীয়। আর এরপর থেকেই হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন বিনিয়োগকারীরা। ধীরে ধীরে সক্রিয় হতে শুরু করার ইঙ্গিত মিলছে।
এর মধ্যে আবার রিজার্ভের ইউটার্ন, বিশ্ববাজারে পণ্য ও জ্বালানির মূল্য কমে আসতে থাকা, নভেম্বরে রপ্তানি প্রথমবারের মতো পাঁচ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম, গত বছরের তুলনায় নভেম্বরে আমদানি অর্ধেকে নেমে আসা, রেমিট্যান্সের পতন থামা- সব মিলিয়ে অর্থনীতির এখন ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অর্থনীতি আর রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা থাকলে পুঁজিবাজারেও বিনিয়োগকারীরা ফিরবেন বলেও মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
লেনদেন বৃদ্ধির সঙ্গে কমে এসেছে লেনদেন না হওয়া কোম্পানির সংখ্যাও। অর্থাৎ আগের দিনের যতগুলো কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছিল তার চেয়ে বেশি সংখ্যক কোম্পানির শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে।
এদিন ৩৫৬টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের দিন এ সংখ্যাটা ছিল ৩১৪। তার আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৯০ কোম্পানির শেয়ার।
লেনদেনের সঙ্গে দরবৃদ্ধির সংখ্যাও বেড়েছে। দরপতনের তুলনায় এ সংখ্যা চার গুণের বেশি। ১৭টি কোম্পানির দরপতনের বিপরীতে দর বেড়েছে ৭৪টির।
এর প্রভাবে আগের দিনের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি সূচক বেড়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৬৬ পয়েন্টে, যা ২১ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সূচকের অবস্থান এর চেয়ে বেশি ছিল ১৩ নভেম্বর, ৬ হাজার ৩০৪ পয়েন্ট।
আজ একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি এমন শেয়ারের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪টিতে। এর মধ্যে ২টির লেনদেন বন্ধ ছিল লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের কারণে।
আগের দিন এ সংখ্যাটা ছিল ৭৬, যার মধ্যে ছয়টির লেনদেন বন্ধ ছিল লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের কারণে। তার আগের দিন একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি ৮৯টি কোম্পানির।
এ ছাড়া অপরিবর্তিত দরে লেনদেন হয়েছে ২৬৫টির, যার প্রায় সবই ফ্লোর প্রাইসে রয়েছে। আগের দিন অবশ্য এমন কোম্পানির সংখ্যা ছিল ২৪৩টি।
তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটি ১ হাজার ৫৮৫ বারে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫১৬টি শেয়ার লেনদেন করে। যার বাজার মূল্য ৬ কোটি ৮ লাখ টাকা।
তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কোহিনুর কেমিক্যালস লিমিটেড। আজ কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৩৩ টাকা ৯০ পয়সা বা ৮.৭৪ শতাংশ। শেয়ারটি সর্বশেষ ৪২১ টাকা ৮০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।
তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে সোনালী আঁশ লিমিটেড। আজ কোম্পানিটির ৪১ টাকা ২০ পয়সা বা ৮.৭৩ শতাংশ বেড়েছে।
গেইনার তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে- পেপার প্রসেসিং, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, বসুন্ধরা পেপার মিলস, ওরিয়ন ইনফিউশন, বিডিকম অনলাইন, ইস্টার্ন হাউজিং ও জিমিনী সী ফুড লিমিটেড।
সর্বোচ্চ দর পতন ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টসের
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ দর পতন হয়েছে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টসের ব্লেন্ডার্স লিমিটেডের।
সূত্র মতে, সোমবার (১২ ডিসেম্বর) কোম্পানিটির আগের দিনের তুলনায় শেয়ার প্রতি দর কমেছে ১৬৮ টাকা ৮০ পয়সা বা ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ।
ফলে দরপতনের শীর্ষে উঠে এসেছে কোম্পানিটি।
দরপতনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুন্নু এগ্রো মেশিনারির শেয়ার দর কমেছে ২২ টাকা ৪০ পয়সা বা ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
আর মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ৫ টাকা ৫০ পয়সা বা ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ শেয়ার দর কমায় শীর্ষ তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে।
দর পতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে- রূপালী লাইফ ইন্সুরেন্স, মুন্নু সিরামিক, বিডি থাই ফুড, মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্স, বেঙ্গল উইন্ডস, বাটা সু এবং সী-পার্ল হোটেলের দর কমেছে।