কক্সবংলা ডটকম(১৯ জানুয়ারি) :: দেশের শেয়ারবাজারে বেঁধে দেওয়া ফ্লোর প্রাইস নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরাও বলে আসছিলেন একমাত্র ফ্লোর প্রাইসের কারণেই চাঙ্গা হচ্ছে না শেয়ারবাজার।
অবশেষে দীর্ঘ দেড় বছর পর শেয়ারবাজার থেকে ‘ফ্লোর প্রাইস’ প্রত্যাহার করে নিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
যদিও সূচকে প্রভাব ফেলে এ রকম ৩৫টি কোম্পানিতে ফ্লোর প্রাইস বহাল রয়েছে, তবুও এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতো ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ায় ঘুরে দাঁড়াবে দেশের শেয়ারবাজার।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন সীমা) তুলে নিয়েছে গত বৃহস্পতিবার। ফলে এই সপ্তাহ থেকে ৩৫টি কোম্পানি ছাড়া বাকিগুলোর ওপর ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকছে না।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কমিশন ৩৫টি কোম্পানি বাদে বাকিগুলোর ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়েছে। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া কোম্পানিগুলোতে স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকার কার্যকর হবে। আর ফ্লোর প্রাইসের আওতায় থাকা কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কমিশন আশা করছে, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কারণে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং বাজারে গতি ফিরে আসবে। শেয়ারবাজারে লাগাতার পতন ঠেকাতে না পেরে, গত চার বছরে কয়েক দফায় শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
জানা যায়, বৈশ্বিক সংকটের কারণে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন রোধে প্রথমবার ২০২০ সালের ১৯ মার্চ ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়, যা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয় ২০২১ সালের ১৭ জুলাই। এরপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই দ্বিতীয় দফায় সব শেয়ারের দরে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে সংস্থাটি।
পরবর্তীতে ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর ১৬৭ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিদিন একটি-দুটি শেয়ার কেনাবেচার বিপরীতে ১ শতাংশ হারে দর কমতে থাকায় ২০২২ সালের ১ মার্চ তৃতীয় দফায় ফের ১৬৭ শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি।
যদিও এ সিদ্ধান্তে সাময়িকভাবে হয়তো বাজারে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কারণে বাজার তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে। বিএসইসির আদেশে ৩৫টি কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখার কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ডিএসইএক্স সূচকে অন্তর্ভুক্ত যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে এবং যাদের শেয়ারের দামের উত্থান-পতন সূচকের ওপর প্রভাব ফেলে, মূলত সেগুলোর ওপরই ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখা হয়েছে।
এর বাইরে অবশ্য কয়েকটি কোম্পানিকে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়া দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে এ তালিকায় রাখা হয়েছে।
ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলাম ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার ব্যাপারে। কারণ একমাত্র ফ্লোর প্রাইসের কারণেই দেশের শেয়ারবাজার একেবারে ঝিমিয়ে গেছে। লেনদেন তলানিতে ঠেকেছে, সূচকে পতন ঘটেছে।
কিন্তু অনেক দিন ধরে আমরা এ বিষয়ে বলে এলেও আমাদের কথা কর্ণপাত করেননি নীতিনির্ধারকরা। যে কারণেই হোক বা যেভাবেই হোক ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়ে বিএসইসি শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াবে শেয়ারবাজার।’
Posted ৩:৪১ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta