শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

পূজিবাজারে সী পার্লের শেয়ারে বড় পতনের নেপথ্যে

বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩
38 ভিউ
পূজিবাজারে সী পার্লের শেয়ারে বড় পতনের নেপথ্যে

ককসবাংলা ডটকম(২৭ ডিসেম্বর) :: গত ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সী পার্ল রিসোর্টের শেয়ারদর ছিল ১৮০ টাকা ৩০ পয়সা।২৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) কোম্পানিটির শেয়ারদর নেমেছে ১০০ টাকা ৭০ পয়সায়। মাত্র ১০ কর্মদিবসে কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে ৭৯ টাকা ৬০ পয়সা বা ৭৯.০৪ শতাংশ।

এদিকে, গত ২০ ডিসেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ১৩৭ টাকা ৭০ পয়সা। গত তিন কর্মদিবসেই কোম্পানিটির শেয়ার সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন দরে ক্রেতাশুন্য অবস্থায় লেনদেন হয়েছে। এই তিন দিনই কোম্পানির আতঙ্ক ছড়ানো সেল প্রেসার দেখা গেছে। বড় বড় সেল দিয়ে দিনের শুরুতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে ক্রেতাশুন্য অবস্থায় লাখ লাখ শেয়ারের বিক্রির চাপ দেখানো হয়েছে। আজ ক্রেতাশুন্য করার পর লেনদেনের শেষ পর্যন্ত ২২ লাখের বেশি শেয়ার বিক্রি করার প্রস্তাব দেখা গেছে।

বাজারে গুঞ্জন রয়েছে, রাজিব নামে কোম্পানিটির বড় এক বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কোম্পানির লোকজনের হঠাৎ করে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। ওই দ্বন্দ্বের জেরেই ১৮০ টাকার ওপরে লেনদেন হওয়া কোম্পানিটির শেয়ার টানা পতন দিয়ে ধস নামানো হয়েছে।

মুনাফার আশায় কোম্পানিটির শেয়ারে যারা বিনিয়োগ করেছেন, তারা শেয়ারটির এমন ধস দেখে হতবাক। অনেকে এখন পথে বসার উপক্রম। তারা বলছেন, এমন অস্বাভাবিক সেল প্রেসার দিয়ে যারা শেয়ারটির দাম ধসিয়ে দিয়েছে, তাদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় আমাদের পথে নামতে হবে।

আবদুর রহমান নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, কোনো শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ এক দিনের বেশি বাড়লে ডিএসই শেয়ারটির পেছনে উঠেপড়ে লেগে যায়। অথচ সী পার্লের শেয়ার টানা মেরে ধসিয়ে দিয়েছে, ডিএসই বা কোনো কর্তৃপক্ষের এখন কোনো রকম সাড়াশব্দ নেই। তারা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, শেয়ারবাজার কী দেখার কেউ নেই? বিনিয়োগকারীরা কী কোনো বিচার পাবে না?

এই বিষয়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, সী পার্ল রিসোর্ট শেয়ারের সাম্প্রতিক লেনদেন বিএসইসি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনে যদি অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়, তাহলে বিএসইসি অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নিবে।

ফিরে দেখা সী পার্ল রিসোর্টের শেয়ার

গত ২০২১ সালে ১২ ডিসেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৪২ টাকা ২০ পয়সা। যা ছিল আগের ২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২২ সালে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির দর ছিল স্বাভাবিক উঠানামা। ২০২২ সালে ১ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারদর দাঁড়ায় ৫৭ টাকা ১০ পয়সায়। এরপর থেকে কোম্পানিটির শেয়ারদর টানা বাড়তে থাকে। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৭ টাকা ৬০ পয়সায়।

এরপর কোম্পানিটির শেয়ারদর ধীরগতিতে সংশোধন হতে থাকে। ১০ অক্টোবর ২০২২ তারিখে ১১৯ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়। ওইদিন বিকেলে কোম্পানিটির ১৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ডের ঘোষণা আসে। এর পরের দিন থেকেই দর বাড়তে থাকে শেয়ারটির। রেকর্ড ডেটের আগ পর্যন্ত শেয়ারটির দর বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৮ টাকায়।

রেকর্ড ডেটের পর চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত কিছুটা স্বাভাবিক উঠানামার মধ্য দিয়ে লেনদেন হতে দেখা গেলেও পরবর্তীতে আবারও টানা বাড়তে থাকে। চলতি বছরের ৯ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়ে দাঁড়ায় ৩২০ টাকা ১০ পয়সায়। যা ছিল কোম্পানিটির রেকর্ড দাম।

এরপর কোম্পানিটির শেয়ারদর আবারও সংশোধন হতে থাকে। কিন্ত অস্বাভাবিক টানা কমতে থাকে ২৫ এপ্রিল থেকে। পরবর্তীতে ১৫ মে পর্যন্ত টানা দর কমে ১৮৩ টাকা ৪০ পয়সায় দাঁড়ায়। অর্থাৎ এক মাসের কম সময়ে কোম্পানিটির দর কমে যায় ১২০ টাকা।

পরবর্তীতে আবারও কোম্পানিটির দর বাড়তে থাকে। কিন্ত ৩২০ টাকা আর ছুঁতে পারেনি। ২৫ জুলাই পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারদর উঠানামায় কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও আগের স্থানে আর উঠে আসতে পারেনি।

এরপর থেকে শেয়ারদর আবারও ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে, যা আজ মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত অব্যহত থাকে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৫০ টাকার নিচে শেয়ার কিনে কারসাজিকারীরা ৩২০ টাকায় শেয়ার বিক্রি করে কয়েক গুণ মুনাফা করলেও ৩২০ টাকায় শেয়ার কিনে বা তার নিচে শেয়ার কিনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ারটি থেকে বের হতে পারেনি। কারণ তাদের কেনার পর শেয়ারটির দাম আর তাদের কেনা দামের ওপরে যায়নি। যদিও সেই সময়ে বাজারে গুঞ্জন রটানো হয়েছিল, শেয়ারটির দাম ৫০০ টাকা হবে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজারে একটি চক্র নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য কিছু কোম্পানিটিকে টার্গেট করে থাকে। তারা টার্গেটকৃত কোম্পানিটির বেশিরভাগ শেয়ার ক্রয় করে নানাভাবে গুজব রটিয়ে দর বাড়িয়ে দেয়। তাদের গুজবে আকৃষ্ট হয়ে বেশি মুনাফার আশায় না বুঝেই সাধারণ বিনিয়োগকারীর ওই শেয়ারে উচ্চ দরে বিনিয়োগ করে। এতে চক্রটি উচ্চ দরে শেয়ারটি ছেড়ে দিয়ে নিজেরা অস্বাভাবিক মুনাফা করে সটকে পড়ে। পরবর্তীতে তারা দর কমানোর জন্য নেতিবাচক গুজব রটিয়ে শেয়ারটির দর ফেলে দিয়ে আবারও কম দরে ক্রয় করে। এরপর আবারও তারা গুজব ছড়িয়ে শেয়ারটির দর বাড়িয়ে বিক্রি করে বেরিয়ে যায়। এতে বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বাজারে অবস্থা এমনিতে নেতিবাচক। সূচক একদিন বাড়েতো দু’দিন কমে। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ করে মুনাফা তুলে আনা কষ্টকর। এরপরও কিছু শেয়ারে মুনাফার আশায় বিনিয়োগ করি। এমন প্রত্যাশায় সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ারে বিনিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু মুনাফা-তো দূরের কথা, এখন মুল পুঁজি ফিরে পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছি। বেশ কিছুদিন ধরেই কোম্পানিটির শেয়ারদর ধারাবাহিকভাবে কমছে। বাড়ার কোন লক্ষণই দেখছি না।

এমন অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, শেয়ারটির কারাসজিতে জড়িতদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আরও বড় ঘাটতি তৈরি হবে।

এই বিষয়ে কয়েকজন বিনিয়োগকারী বলেন, এর আগে ৪২ টাকা থেকে শেয়ারটি ৩২০ টাকায় নিয়ে যাওয়ার কারসাজিতে কোম্পানিটির লোকজনের সঙ্গে টিটু নামে এক বড় বিনিয়োগকারী ছিল। ওই বিনিয়োগকারী এক সময়ে এজিএম পার্টির নেতৃত্ব দিয়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মালিকদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে অর্থ হাতিয়ে নিত। সী পার্ল রিসোর্টের শেয়ার কারসাজি করে সেই টিটু এখন শত কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে।

এরপর শেয়ারটির দাম যখন ২১০ টাকা ঘরে লেনদেন হয়,তখন কোম্পানির লোকজনের সঙ্গে টিটুর দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। টিটু তখন ক্ষুব্দ হয়ে শেয়ারটির পতন ঘটায়। এক পর্যায়ে শেয়ারটির দাম যখন ১৫০ টাকার ঘরে নেমে যায়, তখন রাজিব নামে আরেক বড় বিনিয়োগকারী কোম্পানি লোকজনের সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর শেয়ারটির দাম ২১৫ টাকার ওপরে তোলা হয়। তারপর মুনাফা নিতে থাকে ওই বিনিয়োগকারী। শেয়ারটির দাম যখন ১৯০ টাকা নিচে নেমে আসে, তখন কোম্পানির লোকজনের সঙ্গে রাজিবেরও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তারপর থেকে শেয়ারটির দামে নেমে আসে বড় বিপর্যয়। রাজিবই এখন প্রতিদিন বড় বড় সেল দিয়ে শেয়ারটির দামে ধস নামাচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ধসের মধ্যেও কোম্পানিটির শেয়ার বড় আকারে লেনদেন হচ্ছে। গত রোববার কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৯ লাখ ৫০ হাজারর বেশি। যা ছিল গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আজও (মঙ্গলবার) কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে প্রায় ১৯ লাখ ১৭ হাজার।

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটির শেয়ার দামে এমন ধস নামার কোনো কারণ নেই। কোম্পানির কর্মকর্তা বলছেন, ব্যবসা এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। বিশেষ করে কক্সবাজারে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার পর সব হোটেল ও মোটেলের ব্যবসায় নতুন গতি দেখা দিয়েছে।

সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি ১৭ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে ৫ টাকা ৮১ পয়সা। আগের বছর কোম্পানিটি ডিভিডেন্ড দিয়েছিল ১৫ শতাংশ ক্যাশ। ওই বছর শেয়ার প্রতি মুনাফা ছিল ১ টাকা ৩৪ পয়সা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’২৩) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে। ১ টাকা ৬২ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ২৭ পয়সা।

সর্বশেষ শেয়ারদর অনুযায়ি কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত-পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ১৫.৫৪।

38 ভিউ

Posted ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com