নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(১৭ অক্টোবর) :: পেকুয়ায় সবুজ বাংলার নকল বীজ ধানে সর্বনাশ হয়েছে কৃষকের। সবুজ বাংলার বীজে প্রতারিত হয়েছেন শত শত কৃষক। এতে করে চলতি আমন মৌসুমে ফলন বিপর্যয়ের শংকা দেখা দিয়েছে পেকুয়ায়।
প্রতারিত এ সব কৃষক এখন মাথায় হাত দিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। নকল বীজ ব্যবহৃত হওয়ায় উপজেলার মগনামা ও উজানটিয়া ইউনিয়নসহ বিপুল এলাকার ফসলী জমিতে সবুজের সমারোহ বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌছেছে।
এতে করে উপজেলার ৭ ইউনিয়নে হাজার হাজার কৃষক মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সবুজ বাংলা নামের একটি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্টান চলতি আমন মৌসুমে বীজ প্যাকেটজাত করে।
তারা এ সব বীজ নিজস্ব মোড়কে বাজারজাত করেছে। আকর্ষনীয় ও দৃষ্টিনন্দন প্যাকেট মোড়ক করে প্যাকেট ভর্তি বীজ পেকুয়াসহ বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ দেয়। কৃষকরা বীজ ধান ক্রয় করে বীজতলা তৈরী করে। এ সব বীজ থেকে উৎপাদিত চারা জমিতে রোপন করে।
চলতি আমন মৌসুমে সবুজ বাংলা কৌম্পানী হাজার হাজার প্যাকেট বীজধান পেকুয়ায় বাজারজাত করে। কৃষক বীজের চাহিদা মেটাতে এ সব বীজ বিভিন্ন বীজভান্ডার ও দোকান থেকে ক্রয় করে।
জানা গেছে, সবুজ বাংলার এ সব বীজ খুবই নিন্মমানের। অপরদিকে বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্টান বিশুদ্ধ বীজ প্যাকেট না করে তারা এসব প্যাকেটে নকল বীজ প্যাকেটজাত করে।
সর্বোচ্চ মুল্যে বীজধান বিক্রি করে এ প্রতিষ্টানটি। তাদের প্রতিকেজি বীজধান বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকার বেশী। ৫ কেজি ওজনের একটি বীজ ধানের প্যাকেট বিক্রি হয়েছে খুচরা মুল্য ৫৭০ টাকা। প্যাকেটে কৌম্পানীর নিজস্ব লগো আছে। প্যাকেটের উপর বীূজ ব্যবহার ও করনীয় সম্পর্কিত নির্দেশিকাও প্রচলন করা হয়েছে।
বলা হয়েছে এ সব বীজ বাজারজাত করতে কৃষি মন্ত্রনালয়ের পরীক্ষামুলক সনদ তাদের আছে। তাছাড়া এ সব বীজ কৃষি অধিদপ্তর থেকে প্রত্যায়িত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের বিপুল কৃষক আমন ফসল ফলাতে সবুজ বাংলার বীজ সংগ্রহ করে।
জানা গেছে, সবুজ বাংলার মুল বিক্রি এজেন্ট পেকুয়াতে নেই। তারা বিক্রয় প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন চকরিয়া পৌর এলাকায়। তবে পেকুয়া বাজারের বীজধান ও কীটনাশক বিক্রেতার কয়েকটি প্রতিষ্টানকে তারা খুচরা ডিলার হিসেবে ধান বিক্রির অনুমতি পত্র দেয়।
কৃষকরা জানান, পেকুয়া বাজারের মেসার্স শাহাদাত এন্টারপ্রাইজ চলতি আমন মৌসুমে সর্বাধিক বীজধান বিক্রি করে কৃষকদের।
ওই প্রতিষ্টানের প্রতি কৃষকদের আস্থাভাব প্রকট। তারা বহুজাতিক কৌম্পানীর নির্ভেজাল বীজধান বিক্রি করে থাকে। ওই সুবাধে কৃষকদের আগ্রহের কমতি ছিলনা প্রতিষ্টানটির প্রতি।
এ বছর শাহাদাত এন্টারপ্রাইজ থেকে কৃষক বীজধান ক্রয় করেছেন সবুজ বাংলা কোম্পানীর। তবে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থও কৃষক। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের শত শত কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। ফসলী জমিতে সবুজের সমারোহ ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
এ ইউনিয়নের মিয়াজীপাড়া, মুহুরীপাড়া, সিকদারপাড়া, পশ্চিমকুল সহ আরও অধিক এলাকায় বিলে আমন ধানে প্রচুর ভেজাল বীজে সয়লাব হয়েছে। বর্তমানে ধানগাছে কাইছথোর অনেক কুঁশিতে ধানের থোর বের হয়েছে।
তবে ভেজাল বীজ বীজতলা হওয়ায় ধানের তারতম্য এক একরকম হয়েছে। কিছু লম্বা আবার কিছু বেটে। অধিকাংশ কুশি অকার্যকর হয়েছে। বীজ বিশুদ্ধকরন না হওয়ায় অধিকাংশ ধান কাঁচা অবস্থায় পেকে গেছে। সেটিকে কৃষি বিজ্ঞান অপরিপক্ক হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে।
মুহুরীপাড়ার আবদুল খালেক, ফরিদুল আলম, আক্তার হোসেন, মনিরুল ইসলাম, মগঘোনার নুর মোহাম্মদ, আলী হোসেন, আবু ছৈয়দ, মিয়ানি, মিয়াজিপাড়ার আবদুল হক, নুর মোহাম্মদ, কালন মেস্ত্রীসহ কৃষকরা জানায়, সবুজ বাংলায় আমাদের কপাল পুড়েছে। ধান গোলায় তোলা যাবে না। সর্বনাশ হয়েছে। বিআর ৩৩, ৩৯ বীজধানে সবচেয়ে ভেজাল হয়েছে।
এ ব্যাপারে বীজ প্রস্ততকারী প্রতিষ্টানের চকরিয়া এলাকার জিয়া উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। সবুজ বাংলা তাদের প্রতিষ্টান বলে স্বীকার করেছেন। তবে তিনি ভেজাল বীজ উৎপাদন করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, অনেক সময় কৃষকরা বীজতলায় সময় ক্ষেপন করে থাকেন। এ সব বীজ জমিতে ফলনে সহায়ক হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ,এইচ,এম মনিরুজ্জামান রব্বানী জানায়, এ ধরনের উপযুক্ত প্রমাণাদি কৃষকরা সংরক্ষন করে থাকলে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকাসহ যোগাযোগ করতে বলেন। অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ওই কোম্পানীর বিরুদ্ধে।
Posted ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta