মো: ফারুক,পেকুয়া(১৩ জুলাই) :: সারাদেশের মত গত কয়েকদিনের ধারাবাহিক বৃষ্টির কারণে কক্সবাজারের উপকূলীয় পেকুয়া উপজেলায় পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে হাজার মানুষ।
পানি চলাচলের একমাত্র মাধ্যম স্লুইচ গেটগুলো প্রভাবশালীরা দখল ও জাল বসিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার পর পানি বের হতে না পারায় এমন সর্বনাশ হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে লিজকৃত এসমস্ত স্লুইচ গেটগুলো দ্রুত উম্মুক্ত ও পানি চলাচলের ব্যবস্থা না মহামারি অাকার ধারণ করবে পেকুয়ায় এমন অভিমত এলাকাবাসীর। অনেকে ইজারা বাতিলের দাবীও জানিয়েছেন।
জানা গেছে, পেকুয়া সদর ইউনিয়নে কামালের বাড়ি সংলগ্ন ১টি, নুরু উদ্দিন বাড়ি ১টি, সাবেক গুলধী খালের উপর ১টি, পেকুয়া বাজারে ১টি, বাঘগুজরা বাজার সংলগ্ন ৩৫, ৩৬ ও ক-৩৬নং ৩টি, সিরাদিয়া মসজিদ সংলগ্ন ১টি, জালিয়াখালীতে ১টি স্লুইচ গেট রয়েছে।
তার মধ্যে সিরাদিয়া ও জালিয়াখালী স্লুইচ গেট দুইটি মৎস্য চাষের জন্য বন্ধ করে রেখেছে প্রভাবশালীরা। বাকি স্লুইচ গেটগুলোতেও মাছ ধরার জাল বসানোর কারণে স্বাভাবিকভাবে পানি চলাচল করতে পারছেনা। অব্যাহত বৃষ্টির কারণে জমিয়ে থাকা পানি বের হতে না পারায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে সদর ইউনিয়নের টেকপাড়া, বলির পাড়া, সাকুর পাড়া, সিরাদিয়া, নন্দীর পাড়া, হরিনাফাড়ি, জালিয়াখালী, মেহেরনামা সহ অারো কয়েকটি গ্রামে। এসমস্ত এলাকার মানুষ দূর্বিসহ জীবন পার করছে এখন।
সদর প্যানেল চেয়ারম্যান মাহাবুব অালম বলেন, সদরে ৯টি স্লুইচ গেট থাকলেও ২টি স্লুইচ গেট ছাড়া বাকিগুলো পানি চলাচল রয়েছে। সিরাদিয়া ও জালিয়াখালী স্লুইচটি পানি চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দিলে সদরের মানুষ পানিববন্ধী হয়ে থাকবে না।
বারবাকিয়া ইউনিয়নে জালিয়াকাটায় ১টি, মৌলভী বাজারে ১টি, বাজার পাড়ায় ১টি, ইউনিয়ন পরিষদে ১টি, জালাল অাহমদের বাড়ির সামনে ১টি, বারাইয়্যাকাটায় ১টি, হুদা মিয়ার বাড়ির সামনে ১টি স্লুইচ গেট রয়েছে। এসমস্ত স্লুইচ গেটগুলোতে মাছ ধরার জাল বসিয়ে পানি চলাচলের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। তার মধ্যে মৌলভী বাজার স্লুইচ গেটটি দখল করে রাখায় পানি চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে প্যানেল চেয়ারম্যান অানিসুর রহমান বলেন, তার ইউনিয়নে সব স্লুইচ উম্মুক্ত রয়েছে। মৌলভী বাজার স্লুইচ গেটটি তিনি পানি চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দিয়েছেন।
টইটং ইউনিয়নে হাজ্বির পাড়ায় ১টি স্লুইচ গেট রয়েছে। তা বন্ধ করে রেখেছে একই এলাকার ইসলাম ও ছিদ্দিক নামের দুই ব্যক্তি। চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এস্লুইচ গেটটি দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাদেরকে উম্মুক্ত করার জন্য বারবার বলেছি। কিন্তু তারা কিছুতেই শুনতেছেনা।
উজানটিয়া ইউনিয়নের সাবখালী খালে উপর পেনাসিঙ্গা পাড়ার ৫২ নং স্লুইচ, পূর্ব উজানটিয়া রুপালী বাজার ৫১ নং স্লুইচ ও পশ্চিম পোকখালী খালের উপর ৫৪ নং স্লুইচগুলো দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা। তার মধ্যে অাওয়ামী রাজনীতির এক ব্যক্তি ও এক ইউপি সদস্য জড়িত রয়েছে। জড়িত রয়েছে ওয়াহেদ, রুবেল, এমজারুল ও মোস্তাফাসহ অারো কযেকজন। তাদের কারণে স্লুইট গেট বন্ধ থাকায় পানিতে ডুবে অাছে উজানটিয়া ইউনিয়ন।
চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মানুষের সুঃখ দুঃখ বুঝেনা রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা। তাদের কারণে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। বিষয়টি অামি ইউএনও মহোদয়কে বলেছি।
শিলখালী ইউনিয়নে দুইটি স্লুইচ গেট রয়েছে। নন্ন্যার মিয়ার বাড়ি ও টিন্ডুর পাড়ার স্লুইচ গেট দুইটি জাল বসিয়ে পানি চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে নিশ্চিত করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন।
মগনামা ইউনিয়নের শরৎ ঘোনা, সোনালী বাজার, দক্ষিণ মগনামা কালার পাড়া, চেপ্টা খালী, লঞ্চঘাটে স্লুইট গেট রয়েছে। স্লুইচ গেটগুলো পানি চলাচলের জন্য উম্মুক্ত থাকলেও অাকারে অনেক ছোট। যার কারণে যেভাবে পানি বের হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছেনা। মগনামার স্লুইচ গেটগুলো দ্রুত সংস্কার করার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা।
চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম বলেন, বৃষ্টির অাগে অামি স্লুইচ গেটগুলো উম্মুক্ত করেছি। তবে স্লুইচ গেটগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন। অাকারে অনেক ছোট। প্রচুর পানি বের হতে অারো বড় স্লুইচ গেট দরকার।
রাজাখালীর ভোলার মুখে, সুন্দরী পাড়া, মিয়ার পাড়া, রব্বত অালী পাড়া, হাজির পাড়া, নতুন ঘোনা-দশের ঘোনায় স্লুইচ গেট রয়েছে। মিয়ার পাড়ায় স্লুইচ গেটটি দখল করে রেখেছে অাবদু ও হাজির পাড়ায় স্লুইচ গেটটি দখল করে রেখেছে মনুর অালী। তাদের কারণে বেশ কিছু এলাকা পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে।
প্যানেল চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া বলেন, রাজাখালীতে স্লুইচ গেটগুলোতে পানি চলাচল রয়েছে। পানি বের হওয়ায় জলাবদ্ধতাও কমে গেছে।
এদিকে পেকুয়ার মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়ায় শুকানো খাবার, বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। রোগ বালায়ও ছড়িয়ে পড়ছে। এখনও পর্যাপ্ত ত্রাণ সহযোগীতা না পাওয়ায় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসীরা।
এবিষয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহাবুব উল করিম জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য জরুরী ভিত্তিতে শুকনা খাবার ব্যবস্থা করেছি যা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ইউনিয়নে বিতরণ করা হয়েছে তবে আমরা আরো ত্রাণের জন্য উর্ধ্বতম মহলকে জানিয়েছি আশা করছি তা দ্রুত আমাদের কাছে আসবে। আমরা যে স্লুইচ গেটে জাল বসানোর খবর পেয়েছি তা সাথেই সাথেই উঠিয়ে দিয়েছি। এরকম খবর পেলে অবশ্যই জরুরী ব্যবস্থা নেয়া হবে।