মোসলেহ উদ্দিন,উখিয়া(১০ মার্চ) :: কক্সবাজারের উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বেশ কিছু রোহিঙ্গা নাগরিক স্বপরিবারে পালিয়ে গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন। তারা বলছে, যেসব রোহিঙ্গা মিয়ানমারে স্বচ্ছল জীবন যাপন করেছে এসব রোহিঙ্গারাই মুলতঃ ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তারা উখিয়ার বিভিন্ন গ্রামে বাসাবাড়ীতে ভাড়া নিয়ে স্থায়ী ভাবে বসবাস করার সুযোগ নিচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাদের ছেলে-মেয়ে চাকুরী করছে তারা সেখানকার বাংলাদেশ এমভেসীর মাধ্যমে বাংলাদেশী হিসোবে যাবতীয় কাগজপত্র তৈরী করে তাদের পরিবার পরিজনদের নিয়ে যাচ্ছে।
বালুখাল্রী কুতুপালং এর একাধিক রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের যে প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পাদন হয়েছে তা দ্বায়সারা। কারণ মিয়ানমারের মগরা যেটা মুখে বলে সেটা করেনা। ওই চুক্তিমতে, অনেকেই মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়ার বিষয়টি খোলাখুলি না বললেও এ নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
স্থানীয় পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এস গফুর উদ্দিন বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২৫ শতাংশ ধর্নাঢ্য পরিবার। যাদের ছেলে-মেয়েরা আরব আমিরাত, সৌদিআরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। ৭৫ শতাংশ পরিবারের মধ্যে ২০ শতাংশ পরিবার কিছুটা স্বচ্ছল। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে উন্নত জীবন যাপনের জন্য গোপনে দালালের মাধ্যমে ক্যাম্প ত্যাগ করছে। ৫৫ শতাংশ পরিবার একেবারেই হতদরিদ্র। যারা মিয়ানমারের চাইতে এখানে ভালো আছেন বলে রোহিঙ্গারা স্বীকার করেছে।
এসব রোহিঙ্গাদের দাবী তাদের বসতভিটা ফিরে যাওয়ার নিশ্চিয়তাও স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ নিশ্চিত হলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে। হাছু মিয়া নামের এক রোহিঙ্গা জানান, কুতুপালং ক্যাম্প থেকে ইতিমধ্যে দুই শতাধিক পরিবার বিদেশে চলে গেছে। এখন সেখান থেকে আত্মীয় স্বজনের কাছ মিয়ানমারে যাওয়ার ব্যাপারে খোজ খবর নেয়।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোহাম্মদ নুর জানান, গত ১মাসে ২শতাধিক রোহিঙ্গা নাগরিককে ক্যাম্পে দেখা যাচ্ছেনা। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে কুতুপালং ডি-১ ব্লকের মোঃ জুবাইর, মোঃ আলম, নুর মোহাম্মদ, আব্দুল লতিফ, মোঃ ইউছূপ, আবু তাহের, মোঃ আবু তাহেরসহ অনেকেই মালয়েশিয়া চলে গেছে। এছাড়া কুতুপালং ই-২ ব্লকের আতাউল, আলী জুহার সৌদি আরবে ছৈয়দ নুর, নুরুল আলম, কামাল উদ্দিন কাতার চলে গেছে। কিভাবে গেছে জানতে চাইলে রোহিঙ্গা আবদুল আমিন জানান, প্রবাসে অবস্থানরত তাদের স্বজনেরা পাসপোর্ট ভিসা সহ যাবতীয় কাগজপত্র পাঠিয়েছে।
স্থানীয় অভিযোগ, আইনশৃংখলা বাহিনী পাসপোর্ট সংশ্লিষ্টদের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে সংঘবদ্ধ দালালের মাধ্যমে বিপূল টাকা ব্যয় করে রোহিঙ্গারা বিদেশে পাঁড়ি জমাচ্ছে। রোহিঙ্গা ভিত্তিক পুলিশ বিশেষ শাখার এসআই বোরহান উদ্দিন জানান, রোহিঙ্গারা বিদেশে পাড়ি দেওয়ার কথা শুনেছি। পাসপাের্ট অফিস থেকে যেসব কাগজপত্র ভেরিফিকেশনের জন্য আমাদের হাতে আসছে তা খুবই যতœ সহাকারে যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। চৌকিদার, দফাদার, মেম্বারও চেয়ারম্যানদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে যাতে ভুলক্রমেও কোন রোহিঙ্গা নাগরিক বিদেশে যেতে না পারে।
কুতুপালং ক্যাম্পে আশিত্র রোহিঙ্গা নাগরিক ডাক্তার জাফর আলম জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির উপর নির্ভর করে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে। যাদের বেশী টাকা আছে তারা স্থানীয় দালালের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাড়া বসবাস করছে। পরে সুবিধামত সময়ে ভূয়া পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। যারা আর্থিকভাবে কিছুটা স্বচ্ছল তারা প্রত্যাবাসনে নিরোৎসাহীত হয়ে ছড়িয়ে ঠিটিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়া উপজেলা সদর রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, রোহিঙ্গাদের ৪ হাজার একর বসভুমির উপর একত্রিত করে কাটা তারের বেড়া দিয়ে নিরাপদ বেষ্টনীর মধ্যে রাখার প্রয়োজন। পাশাপাশি রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্রে চলে যেতে না পারে তজ্জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীকে আরো সজাগ থাকার মতামত ব্যক্ত করেন।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের বলেন, ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে যাওয়া প্রতিরোধের জন্য রোহিঙ্গাদের তল্লাশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর লোকজন যাত্রীবাহি গাড়ীতে তল্লাশী চালিয়ে জারী রেখেছে। আইডি কার্ড, নাম-পরিচয়, এমনকি চেয়ারম্যান-মেম্বারের নাম জানা আছে কিনা জানতে চাইছে। যারা বলতে পারছেনা তাদেরকে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
Posted ১:১৪ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১১ মার্চ ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta