কক্সবাংলা ডটকম(২৮ অক্টোবর) :: বাস্তব কল্পনার থেকেও বিচিত্র, অদ্ভূত। এ যে শুধু কথার কথা নয় তাই চাক্ষুষ করল শনিবারের যুবভারতী। প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে স্পেনের মুখের গ্রাস ছিনিয়ে প্রথমবারের জন্য অনুর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ ঘরে তুলল ইংল্যান্ড। অসম্ভব কারণ, ২-০ স্কোরে পিছিয়ে থেকে ২-৫ গোলে জেতা মিরাকল ছাড়া কম কি? বৃথা গেল স্পেনের সের্জিও গোমেজের জোড়া গোল। দ্বিতীয়ার্ধের ব্রিটিশ ঝড়ে চুরমার হয়ে গেল স্প্যানিশ আর্মাডা। চোকার্স তকমা ঘুচলো না তিনবারের ফাইনালিস্ট স্পেনের। এক নয়নাভিরাম, দুর্ধর্ষ ম্যাচের সাক্ষী থাকল প্রায় ৬৬ হাজার ফুটবলপ্রেমী। যুবভারতীতে জয় হল ফুটবলের।
রূদ্ধশ্বাস। টানটান উত্তেজনা। গোল-পালটা গোল। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ। গতি বনাম স্কিল। কী ছিল না ম্যাচে? এমন ফাইনাল ম্যাচই তো চায় দর্শক। একটা অসাধারণ ম্যাচের সব গুণাগুণ, রসদই মজুদ ছিল এদিন। যুবভারতীর ৬৬,৬৮৪ জন দর্শক অনেক স্মৃতি ঘেঁটেও এমন ম্যাচের কথা মনে করতে পারছেন না। কোন বিশ্বকাপের ফাইনালে এমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল মনে করতে পারছেন না অনেকেই।
ইউরো কাপে এই স্পেনের কাছেই হেরেছিল দাদারা। সেই হারের মধুর প্রতিশোধ নিল ছোটরা। ফডেনের জোড়া গোল আর ব্রাজিল ম্যাচের নায়ক ব্রিউস্টার, গিবস-হোয়াইট এবং গুয়েহির একটি করে গোলের সুবাদে ফাইনালে স্পেনকে ৫-২ ফলে হারাল ইংল্যান্ড। ব্রিটিশদের ইতিহাস সৃষ্টির সাক্ষী থাকল তিলোত্তমা।
প্রথমার্ধে কিন্তু স্প্যানিশ আর্মাডার আক্রমণে ব্রিটিশ রক্ষণভাগ টলমল লাগছিল প্রায়। ম্যাচের দশ মিনিটেই গোল পেয়ে যায় সের্জিও গোমেজ। তারপর ৩১ মিনিটে ফের তার গোল।
বিরতির ঠিক আগে ৪৪ মিনিটে ইংল্যান্ডের হয়ে স্পেনের গোলে বল জড়ায় ব্রাজিল ম্যাচের নায়ক ব্রিউস্টার। বিরতির পর স্পেনকে আর ম্যাচে ফিরতে দেয়নি ফডেনরা। ৫৮ মিনিটে গিবস-হোয়াইট, ৬৯ মিনিটে ফডেন, ৮৪ মিনিটে গুয়েহি এবং ৮৮ মিনিটে আবার ফডেনের গোলে উড়ে যায় স্পেন। তিকিতাকা ফুটবলের ভরাডুবি হয় যুবভারতীতে। একটা অবিশ্বাস্য জয় ছিনিয়ে নেয় ইংল্যান্ড। ৭ ম্যাচে ৮ গোল করে গোল্ডেন বুটের মালিক হয় ইংল্যান্ডের ওয়ান্ডার কিড রিয়ান ব্রিউস্টার।
গোল্ডেন গ্লাভস পায় ব্রাজিলের গোলকিপার গ্যাব্রিয়েল ব্রাজাও। এদিন ফিফার প্রেসিডেন্ট ইনফান্তিনো, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এআইএফএফ-র সভাপতি প্রফুল প্যাটেলের উপস্থিতিতে ট্রফি তুলে দেওয়া হয় ইংল্যান্ডের ফুটবলারদের হাতে। লিনেকার, বেকহ্যাম, রুনিরা যা পারেননি তাই করে দেখাল ফডেন-ব্রিউস্টাররা। তাদের দীর্ঘদিন মনে রাখবে ফুটবলের শহর কলকাতা।
এর আগে কেবল তিনবার বিশ্বকাপ খেলেছিল ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৭ দল। দুই বছর পরপর হওয়া এই বিশ্বমঞ্চে ২০০৭ ও ২০১১ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে বিদায় নেয় তারা। গতবার (২০১৫) তো গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিয়েছিল।
থার্ড বয়ে অভিযান শেষ ব্রাজিলের
উলট পুরাণ৷ তৃতীয় স্থান নির্ণায়ক ম্যাচে মনে করা হয়েছিল, মালিকে চাপে রাখবে ব্রাজিল৷ হল ঠিক তাঁর উল্টো৷তবে শেষটায় জোড়া গোলে ম্যাচ জিতে যুব বিশ্বকাপের থার্ড বয়ের জায়গা পাকা করল পাউলিনহো-লিঙ্কনরা৷
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য সত্যিই সচল হল ব্রাজিলের পরিচিত উইং প্লে৷ আর বল পজিশনে অ্যাডভানটেজ রেখে চাপটাও দারুণ ধরে রাখতে শুরু করে অ্যালানরা৷তাতেই প্রথম গোল৷
পরে পাওয়া চোদ্দ আনা সেই গোলেই তৃতীয় স্থান পাকা করল নেইমারদের জুনিয়াররা৷৫৫ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে অ্যালনের শট সহজেই বাঁচিয়ে ফেলার বদলে কেরামতিতেই সমস্যা বাড়িয়ে ভিলেন হয়ে গেলেন মালির তেকাঠির রক্ষাকর্তা কইটা৷ দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে মালির জালে বল ঢুকতেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে ব্রাজিল কোচ আমাদেও৷
ম্যাচ শেষে সেই মারাত্মক ভুলটা মেনে নিতে পারেননি কইটা৷মাটিতেই পড়েছিলেন দীর্ঘক্ষণ৷ শেষ পর্যন্ত রিসার্ভ বেঞ্চে ফুলবলাররা তাঁকে মাঠ থেকে টেনে তোলে৷শেষটায় মালির কোচ স্বয়ং এসে বোঝানোর পর মাঠ ছাড়েন এই গোলকিপার৷ দ্বিতীয়ার্ধে রক্ষণের ভুলে আরও একটা গোল হজম করতে হয় মালিকে৷ ৮৮ মিনিটে মালির বক্সে একাধিক পাশ খেলে আফ্রিকান জায়েন্টদের জালে বল জড়ান অ্যালবার্তো৷
রক্ষণ ও গোলরক্ষকের জোড়া ভুলকে অবশ্য ডিফন্ড করলেন মালি কোচ৷ ম্যাচ শেষে কোমলা বলেন, ‘গোলরক্ষকরাও তো মানুষ, ভুল তাদের দাড়াও হয়৷’ আর মালির এমন পারফরম্যান্স দেখে ব্রাজিল কোচ মাথা পেতেই মেনেই নিলেন,‘ব্রাজিল জিতলেও আসল খেলাটা খেলেছে মালিই, আমাদের দলতো দাঁড়াতেই পারেনি৷ ভাগ্য ভাল তিন নম্বরে শেষ করলাম৷’