কক্সবাংলা ডটকম(২৪ জানুয়ারী) :: প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশে যে রেমিট্যান্স পাঠায়, তার ৩৩ দশমিক ৬৩ শতাংশই ব্যয় হচ্ছে পরিবারের লোকদের খাওয়া-পরা সহ ভোগ-বিলাসের ব্যয় মেটাতে। আর শিক্ষা ও চিকিৎসায় ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং আসবাবপত্র ও অন্য সামগ্রী ক্রয়ে ১০ দশমিক ৫৬ শতাংশ রেমিট্যান্স ব্যয় হচ্ছে।
বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগে যাচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ৪৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এর মধ্যে জমি-ফ্ল্যাট ক্রয়ে ১৮ দশমিক ৯১ শতাংশ, আর্থিক খাতে সঞ্চয় স্কিম, বীমা পলিসিতে ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে ১৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে।
প্রবাসী কর্মীর অর্থের উপযোগিতার ধরন নির্ণয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক জরিপে ওপরের তথ্য উঠে এসেছে। বিদেশ থেকে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স গ্রহণকারী ১০ ব্যাংকের ৮৩টি শাখার মাধ্যমে এ জরিপ চালানো হয়। এজন্য ২০১৪ সালে দেশের ১২টি জেলায় ৪১৫ জন রেমিট্যান্স ভোগকারীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
জরিপে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি ‘ইউটিলাইজেশন অব ওয়ার্কার্স রেমিট্যান্সেস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণার অংশ হিসেবে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রাপ্ত অর্থের ব্যবহার বিশ্লেষণ করা হয়।
দেখা গেছে, রেমিট্যান্স হিসেবে আসা ৩৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ অর্থই ব্যয় হচ্ছে খাদ্য ও পরিধেয় ব্যয় মেটাতে। বছরভিত্তিক হিসাবে এ খাতে ব্যয় ক্রমান্বয়ে বাড়তে দেখা গেছে।
২০০৯ সালে খাওয়া-পরায় ব্যয় হতো ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশ অর্থ। ২০১৩ সালে এ খাতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ দশমিক ৭৩ শতাংশে। পরবর্তী এক বছরে বাড়ে আরো প্রায় ১ শতাংশ।
দক্ষতাভেদে প্রবাসীদের আয়ে তারতম্যের পাশাপাশি আয়কৃত অর্থের বিবিধ উপযোগিতার হারেও আনুপাতিক পার্থক্য রয়েছে। প্রবাসী দক্ষকর্মীর পরিবারে রেমিট্যান্সের ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ খাওয়া-পরায় ব্যয় হয়।
মোটামুটি দক্ষ— এমন প্রবাসীর পরিবারে খাদ্য ও পোশাক খাতে ব্যয় ৩৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর অদক্ষ প্রবাসীর পরিবারে রেমিট্যান্সের ৪৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ অর্থই ব্যয় হয় খাওয়া-পরা বাবদ।
রেমিট্যান্স ব্যবহারের ধরন সম্পর্কে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, প্রবাসী আয় গ্রহণ করা অধিকাংশ পরিবারই বিনিয়োগ করে না। এসব পরিবার বিভিন্ন উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করলে কর্মসংস্থানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেত। তাই পরিবারগুলোর বিনিয়োগ না করার কারণ নির্ণয় করা উচিত।
আমার মতে, এর অন্যতম কারণ কোথায়, কীভাবে ও কী ধরনের বিনিয়োগ করতে হবে, তা তারা বুঝতে পারেন না। এজন্য সরকারের পক্ষ তাদের বিনিয়োগ বিষয়ে সচেতন ও উৎসাহিত করতে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
গবেষণায় দেখা যায়, ৬০ দশমিক ৮৮ শতাংশ প্রবাসীরই শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত। আর উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত পড়েছে ১৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ প্রবাসী। ডিপ্লোমা ডিগ্রি রয়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবাসীর। স্নাতক সম্পন্নকারী প্রবাসী ১১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আর ৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবাসীর স্নাতকোত্তর ও ১ দশমিক ৩৮ শতাংশের পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে।
জরিপের তথ্যমতে, প্রবাসীদের মধ্যে ২২ দশমিক ৮৭ শতাংশ দক্ষ, ৪৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ মোটামুটি দক্ষ ও ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশ অদক্ষ। বেশির ভাগ প্রবাসীর বয়স ৩৫ বছর বা তার চেয়ে কম। মোট প্রবাসীর মধ্যে নারীকর্মী ৪ শতাংশ।
প্রবাসীদের ৭৩ শতাংশই বিদেশ যেতে ১ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেছেন। এক্ষেত্রে ৫ লাখ অথবা তার চেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করেছেন মোট প্রবাসীর ১১ শতাংশ।
দক্ষ-অদক্ষ নির্বিশেষে এক-তৃতীয়াংশ প্রবাসীই উপার্জিত অর্থ তাদের স্ত্রীর কাছে পাঠায়। জরিপ চলাকালে আওতাভুক্ত প্রবাসীদের বেশির ভাগ ১০ বছর অথবা তার চেয়ে কম সময় বিদেশে অবস্থান করছিল। দেখা গেছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের আয় বেড়েছে।
বছরে ৫ লাখের কম টাকা পাঠিয়েছেন এমন প্রবাসী ২০০৯ সালে ছিল জরিপভুক্তদের ৫৪ শতাংশ। ২০১৩ সালে এ হার কমে হয় ৪১ শতাংশ। একইভাবে ১০ লাখ টাকার বেশি অর্থ প্রেরণকারী প্রবাসীর হার ২০০৯ সালে ছিল ১৮ শতাংশ। ২০১৩ সালে এ হার বেড়ে হয় ২১ শতাংশ।
Posted ২:২৬ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta