কক্সবাংলা ডটকম(২৬ ডিসেম্বর) :: করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। গত সপ্তাহ থেকে ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরু হয়েছে। কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষায় প্রথম ভ্যাকসিন হিসেবে ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি করোনার টিকা দেয়া শুরু হয়। এরপর দ্বিতীয় ভ্যাকসিন হিসেবে মডার্নার উদ্ভাবিত টিকাও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। চলতি সপ্তাহ থেকে মডার্নার টিকাও মানব শরীরে প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
ফাইজার ও মডার্নার তৈরি করোনা টিকার মধ্যে মৌলিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। ফাইজারকে যুক্তরাষ্ট্রের জায়ান্ট ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি হিসেবে ধরা হয়। অন্যদিকে মডার্না যার সংক্ষিপ্ত রূপ আরএনএ। এটি ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের কেমব্রিজভিত্তিক একটি বায়োটেক সংস্থা।
ফাইজার ও মডার্নার দুটি টিকাই একই ধরনের কাজ করে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগের সচিব আলেক্স অজার বলেছেন, ফাইজার ও মডার্নার টিকার মধ্যে কয়েকটি মূল পার্থক্য রয়েছে। যা মডার্নার টিকাকে ‘আরও নমনীয়’ করেছে।
মডার্না ও ফাইজারের উভয়ের টিকা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রায় ৯৫ শতাংশ কার্যকর।
সিএনএন-এর ‘নিউ ডে’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এফডিএর টিকা উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. পল অফিট বলেন, দু’টি টিকা মোটামুটি এক বৈশিষ্ট্যের বলে আমার মনে হয়।
মডার্না ও ফাইজারের প্রস্তুতকৃত টিকাগুলো হলো এমআরএনএ টিকা। যদিও কিছুটা ভিন্ন কাঠামো রয়েছে। আর এজন্য পরিবহন ও সংরক্ষণ করার পার্থক্য রয়েছে। সংরক্ষণের জন্য মডার্নার টিকা অনেকটা স্বস্তিদায়ক। এই টিকাটি ফাইজারের টিকার মতো উচ্চ মাত্রার ঠান্ডায় রাখতে হবে না।
ফাইজার আবিষ্কৃত টিকা সংরক্ষণ করতে হয় মাইনাস ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। মাত্র পাঁচদিন এই ভ্যাকসিন রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা যাবে।
অন্যদিকে মডার্নার টিকা সংরক্ষণ করতে হবে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বাড়ির ফ্রিজেও এই টিকা রাখা যাবে। ৩০ দিন পর্যন্ত ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে এই টিকা স্থানান্তর করা সহজ।
এই দুই ভ্যাকসিনের তুলনা করলে দেখা যায়, ফাইজারের ভ্যাকসিনগুলি হাসপাতালের মত প্রতিষ্ঠিত অবকাঠামো ও বড় প্রতিষ্ঠানে বেশি ব্যবহৃত হবে। অন্যদিকে, স্থানীয় চেইন বা ফার্মাসিস্টের মত ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানেও মডার্নার টিকা ব্যবহার করা যাবে।
মডার্নার টিকাটি ৪ সপ্তাহের ব্যবধানে দু’বার ১০০ মাইক্রোগ্রাম করে ডোজ হিসাবে দেয়া হয়। আর ফাইজারের ভ্যাকসিনের দুই ডোজ ২১ দিনের ব্যবধানে ৩০ মাইক্রোগ্রাম।
অনুমোদিত হলে মডার্না ভ্যাকসিনটি ১৮ এবং তার চেয়ে বেশি বয়সীদের মধ্যে ব্যবহার করা হবে। ফাইজারের ভ্যাকসিনটি ১৬ এবং তার বেশি বয়সীদের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
ফাইজারের টিকার মতো, মডার্নার টিকা আরএনএ বা এমআরএনএ সরবরাহ করে। যা জেনেটিক কোডের একটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে শরীরকে শেখায় যে কিভাবে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে হবে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে। একবার ইনজেকশন দেয়ার পরে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। যদি কোনো ব্যক্তি টিকা নেয়ার পর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন তাহলে অ্যান্টিবডি ভাইরাস প্রতিরোধে কাজ শুরু করে।
সম্প্রতি মডার্নার টিকার বিষয়ে এফডিএ ৫৪ পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, টিকাটিতে বিশেষ কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। মারাত্মক ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। এফডিএ বলছে, ৩০ হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষায় মডার্নার টিকা ৯৪.১ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
Posted ১:২৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta