মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বঙ্গবন্ধু : শতবর্ষের দূরত্বেও পথপ্রদর্শক

শনিবার, ১৫ আগস্ট ২০২০
511 ভিউ
বঙ্গবন্ধু : শতবর্ষের দূরত্বেও পথপ্রদর্শক

কক্সবাংলা ডটকম(১৫ আগস্ট) :: বঙ্গবন্ধু যখন স্কুলের ছাত্র, পাড়া-প্রতিবেশী আর সহপাঠীদের গ-িতেই কাটছিল জীবন, যখন তিনি শেখ মুজিব পরিচয়ের চেয়ে খোকা নামেই বেশি পরিচিত তখন থেকেই তার নেতৃত্বগুণের পরিচয় মিলছিল। স্কুলজীবনেই বালক মুজিব তৎকালীন অবিভক্ত বঙ্গের প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা একে ফজলুল হক এবং পরবর্তীকালের অখ- পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নজর কেড়েছিলেন। বালকের সাহস, অধিকারবোধ এবং প্রতিনিধিত্বের গুণ মুজিবের তার প্রতি তাদের আকৃষ্ট করেছিল। উভয়েই কলকাতায় গেলে দেখা করার পরামর্শ দেন। মুজিবের জন্য যেন রাজনীতির বৃহত্তর অঙ্গন আপনিই তৈরি হয়ে উঠেছিল।

স্কুলপর্ব শেষ করে ভর্তি হলেন কলকাতার বিখ্যাত ইসলামিয়া কলেজে। ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর, যুক্ত হলেন মুসলিম লীগের রাজনীতিতে। তখনকার প্রগতিশীল বাঙালি নেতা আবুল হাশিমের কাছে রাজনীতির পাঠ নিয়েছেন। সেই সময়কার বাস্তবতায় তরুণ মুজিব ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমির দাবিকে যৌক্তিক মনে করেছেন এবং পাকিস্তান আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দাঙ্গার সময় উভয় সম্প্রদায়ের বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ালেন। আর দেশভাগের পর কলকাতা ছেড়ে পাকিস্তানে এলেন, তৎকালীন পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকায়।

শুরুতেই নবীন রাষ্ট্র যেন হোঁচট খেল। এক হাজার মাইলের ব্যবধানে দুটি ভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতির মানুষের অঞ্চল নিয়ে একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে নেতৃত্বের যে প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা এবং পরমতসহিষ্ণুতার প্রয়োজন তার অভাব ছিল প্রকট। কেন্দ্রে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয় গোড়া থেকেই। আর তরুণ রাজনৈতিক কর্মীটি উপলব্ধি করলেন মুসলিম লীগের নেতৃত্ব জমিদার-জোতদার ও আমলা-ব্যবসায়ীদের কাছেই কুক্ষিগত। তাদের বিবেচনায় সাধারণ মানুষের কোনো স্থান নেই। ১৯৪৯ সালেই তাই বড়লোকের দল ছেড়ে জনগণের দল গড়ার জন্য মওলানা ভাসানী ও টাঙ্গাইলের শামসুল হককে নিয়ে তৈরি করলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ। কিন্তু রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে খোদ জিন্নাহই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দাবি উপেক্ষা করলেন। অচিরেই এটিও স্পষ্ট হল যে কেবল বাংলা ভাষা নয়, বাঙালির কৃষ্টি-ঐতিহ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার বিরূপ, বৈরী।

পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই অধিকার আদায়ের সৈনিক মুজিব কারাগারে নিক্ষিপ্ত হলেন। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আরও অনেকের মতো শেখ মুজিবেরও পাকিস্তান নিয়ে সব স্বপ্ন ভেঙে গেল। তিনি উপলব্ধি করলেন, আগামী দিনের অধিকারের বিষয় ধর্ম বা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের স্বার্থ নয়, ভাষা-কৃষ্টি তথা জাতিগত পরিচয় ও ঐতিহ্য এবং তা রক্ষা ও আদায়ের সংগ্রামই হবে আগামী দিনের রাজনীতি। দল থেকে ধর্মীয় পরিচয় তুলে দিলেন, মুজিবের লক্ষ্য হলো অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল সমাজ গঠন ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ক্রমেই বলিষ্ঠ ভূমিকা, সুস্পষ্ট বক্তব্য, দৃঢ় অবস্থান, সাংগঠনিক দক্ষতা এবং অসংখ্যের প্রতিনিধিত্ব করার মানসিকতায় তিনি বাঙালির নির্ভরযোগ্য নেতায় পরিণতি লাভ করেছেন।

গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকজুড়ে পাক সরকার পূর্ব পাকিস্তানকে ঘিরে কেবলই চক্রান্ত চালিয়েছে, আমাদের অধিকারবঞ্চিত করেছে, বঞ্চনা-পীড়নে কোণঠাসা করে রাখতে চেয়েছিল বাঙালিকে। কিন্তু তারা সফল হয়নি। এর প্রধান কারণ ততদিনে এ জাতি তাদের যথার্থ নেতার সন্ধান পেয়ে গেছে। ফলে চরম দমন-পীড়নের মধ্যেও এই দুই দশকজুড়েই বাঙালি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে এগিয়ে গেছে। কোনো প্রতিকূলতাই লড়াকু জাতিকে দমাতে পারেনি। ছাত্র-জনতা পুলিশ-আর্মির গুলির মুখে বুক পেতে দাঁড়িয়েছেন, কারফিউ ভেঙে রাজপথে মিছিল-সমাবেশ করেছেন, জেল-জরিমানাকে গ্রাহ্য করেননি। কোনো নিষেধ, ভ্রকুটি, শাস্তির হুমকির পরোয়া করেনি মানুষ। কারণ একটিই, তাদের এমন একজন নেতা আছেন যার ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখে নির্ভর করা যায়। এতকাল মানুষ দেখেছে নেতাদের দোলাচল, ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থের আপস, প্রলোভন কিংবা হুমকির কাছে নতি স্বীকার। মুজিবের মধ্যে তারা প্রথম পেল দৃঢ় মেরুদ-ের অটল এক নেতাকে, যিনি সবার মধ্যে থেকেও সবার চেয়ে এগিয়ে। যিনি ভাই, বন্ধু কিন্তু একই সঙ্গে নেতাও;

যার দরদি মনের পরিচয় কে না পেয়েছে, আর প্রয়োজনের সময় পেয়েছে নেতার অনমনীয় সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয়। মানুষ তার পেছনে কাতারবন্দি হলো, তাকে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ডাকল বঙ্গবন্ধু, স্লোগান দিলÑ এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ, বাংলাদেশজুড়ে বঙ্গবন্ধু। এই ছিল জনগণের দৃঢ়বিশ্বাস। তাদের আস্থা ও বিশ্বাস, প্রীতি ও শ্রদ্ধা, প্রত্যাশা ও প্রত্যয় মিলে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন ইতিহাসের অনন্য নায়ক। আপামর মানুষের অন্তর তিনি এমনভাবে জয় করেছিলেন যে, একাত্তরে তার অনুপস্থিতিতেও তিনিই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা।

তাই স্বাধীন বাংলাদেশে, যুদ্ধবিধ্বস্ত এক জনপদে, যখন একটি সরকার দীর্ঘযাত্রার প্রস্তুতিতে হিমশিম খাচ্ছে তখন মুক্তিযুুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত জাতির মধ্যে নেতার হত্যাকারী লুকিয়ে থাকবে এমনটা কেউ ভাবতে পারেনি। কিন্তু চক্রান্তকারী বেইমান তো আসলে হিসাবের বাইরের মানুষ।

তার হত্যাকা-ের পর দুই দশক ধরে চলল বাংলাদেশকে ফের পাকিস্তান বানানোর অপপ্রয়াস। চেষ্টা চলল জনগণের এবং ভাবী প্রজন্মের মনে যেন নেতা মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা জন্মানোর সুযোগ না ঘটে। তাকে এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের ও সেই সঙ্গে এর চেতনাকে চাপা দেওয়ার কৌশল চলতেই থাকল। কিন্তু শেখ মুজিব বেঁচে রইলেন কবির হৃদয়ে, গায়কের কণ্ঠে, শিল্পীর তুলিতে, সাংবাদিকের ভাষ্যে, রাজনৈতিক কর্মীর চেতনায়, সংস্কৃতিকর্মীর সৃজনশিল্পে। মুজিব কখনো কেবল ইতিহাসের পাতায় আবদ্ধ থাকার মানুষ নন, কেবল গবেষকের ডিগ্রির উপাদানমাত্র হয়ে থাকতে পারেন না। তিনি বাঙালির চেতনায় বরাবর জীবন্ত, প্রাসঙ্গিক, তার প্রেরণা, রাজনীতির পথনির্দেশক। মৃত্যু তাকে বাঙালির হৃদয় থেকে ছিনিয়ে নিতে পারেনি। শতবর্ষের দূরত্বেও তার স্মৃতি একটুও ম্লান হয়নি। বরং তা আরও উজ্জ্বল, অমোঘ এবং অনুসরণীয় হয়ে উঠেছে দিনে দিনে।

আবুল মোমেন : কবি, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক

511 ভিউ

Posted ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৫ আগস্ট ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com