কক্সবাংলা ডটকম(৪ মে) :: দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষপণের প্রস্তুতি হিসেবে বহনকারী রকেটের স্ট্যাটিক ফায়ার টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাডে ৪ মে রাতে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ শেষে আজই স্যাটেলাইটটি উৎক্ষপণের চূড়ান্ত সময় নির্ধারণ করা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে স্যাটেলাইটটি উেক্ষপণ করা হবে। এতে ব্যবহার হবে ফ্যালকন-৯-এর সর্বশেষ সংস্করণ ব্লক ৫। এক দশকের গবেষণার ধারাবাহিকতায় নতুন এ সংস্করণ তৈরি হয়েছে। রকেটটির দুটি অংশ— ফার্স্ট ও সেকেন্ড স্টেজ।
এর মধ্যে ফার্স্ট স্টেজে রয়েছে স্পেসএক্সের উদ্ভাবিত নয়টি মার্লিন ইঞ্জিন। আর সেকেন্ড স্টেজে রয়েছে একটি ইঞ্জিন। রকেটের ফার্স্ট স্টেজটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য। সেকেন্ড স্টেজের ওপরে রয়েছে পেলোড, যা স্যাটেলাইটটিকে বহন করবে।
ফায়ার টেস্টে মূলত উেক্ষপণের আগে রকেটের ইঞ্জিনগুলোকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে দেখা হয়। এ সময় রকেটের ইঞ্জিনগুলো পূর্ণ শক্তিতে চালানো হয়। সাড়ে তিন থেকে সাত সেকেন্ড স্থায়ী এ পরীক্ষায় পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে উেক্ষপণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এ ধরনের পরীক্ষণের পর রকেটের সবটুকু জ্বালানি ফেলে দেয়া হয়। পরীক্ষণের সময় এতে পেলোড সংযুক্ত করা ছাড়া উেক্ষপণের সব কার্যক্রম অনুসরণ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণ করেছে ফ্রান্সের থেলিস অ্যালেনিয়া স্পেস। নির্মাণ, পরীক্ষা, পর্যালোচনা ও হস্তান্তর শেষে বিশেষ কার্গো বিমানে করে সেটি উত্পক্ষেপণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়।
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উেক্ষপণের প্রস্তুতি নেয়া হয়। তবে হারিকেন ইরমায় ফ্লোরিডায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় ওই লঞ্চ প্যাড থেকে স্যাটেলাইট উেক্ষপণ বন্ধ থাকে। ফলে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইট উেক্ষপণ পিছিয়ে যায়।
এরপর ফেব্রুয়ারিতে সম্ভাব্য দিন নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে ৫ এপ্রিল, ২৪ এপ্রিল, ২৭ এপ্রিল ও ৪ মে উেক্ষপণের তারিখ নির্ধারিত হলেও বিভিন্ন জটিলতায় তা আরো পিছিয়ে যায়। সর্বশেষ সূচি অনুযায়ী, আগামী ৭ মে দিবাগত রাতে স্যাটেলাইটটি উেক্ষপণের কথা রয়েছে। তবে এ তারিখটিও পরিবর্তন হতে পারে।
২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উেক্ষপণে স্যাটেলাইট সিস্টেম কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। ওই বছরের নভেম্বরে স্যাটেলাইট সিস্টেম কিনতে থেলিস অ্যালেনিয়া স্পেসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে বিটিআরসি। প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছর মেয়াদি এ চুক্তির আওতায় স্যাটেলাইট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে প্রতিষ্ঠানটি।
বঙ্গবন্ধু-১-এর পরিচালনায় বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনস লিমিটেড (বিএসসিএল) নামে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। স্যাটেলাইট নির্মাণ ও উেক্ষপণের পর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এটি পরিচালনায় ভূমিকা রাখবে প্রতিষ্ঠানটি।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু-১ উেক্ষপণের পর বিদেশী স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বাংলাদেশের বছরে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার সাশ্রয় হবে। এ স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২৬টি কেইউ ব্যান্ডের ও ১৪টি সি ব্যান্ডের। ট্রান্সপন্ডারের ২০টি ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। আর বাকিগুলো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভাড়া দেয়া হবে। গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় স্যাটেলাইটটির গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।
Posted ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৫ মে ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta