সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ট্রানজিট কি আমাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেবে ?

বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯
264 ভিউ
বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ট্রানজিট কি আমাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেবে ?

কৃষ্ণ কুমার সাহা(১০ ডিসেম্বর) :: ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-দিল্লী সম্পর্কের উপর জোর দিয়েছিলেন এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের বলেছিলেন এ সম্পর্ককে একটি নতুন দিগন্তে নিয়ে যেতে। বাংলাদেশ ও ভারতের কৌশলগত সম্পর্ক বর্তমানে তারও ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। ২০১০ সালের নভেম্বরে এই সম্পর্কের প্রথম আউটপুটটি আসে। এই সময়, ভারত ও বাংলাদেশ প্রথমবারের মত ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষর করে।

২০১৫ সালে এই চুক্তির জন্য প্রথম প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। এই প্রটোকল অনুসারে ভারত বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে চারটি নদীপথ ব্যবহারের অনুমতি পাচ্ছে, যা কলকাতা এবং মুর্শিদাবাদকে আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের সাথে যুক্ত করবে। যদিও এই নদীপথগুলো ব্যবহারের জন্য যে সব সড়ক ও বন্দর প্রয়োজন সেগুলো এখনও প্রস্তুত নয় এবং ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও এই রুট নিয়মিত ব্যবহার করছেন না।

২০১৬ সালের জুন মাসে কলকাতা-আশুগঞ্জ-আখাউড়া নদীপথ চালু হয়। চালু হবার পর মাত্র ১৩টি পণ্যবাহী জাহাজ এই রুট ব্যবহার করে এবং তার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ২৮ লাখ টাকা দেয় ট্রানজিট ফি হিসেবে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময়, মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে রাজশাহী হয়ে ত্রিপুরার সোনামুরা পর্যন্ত একটি নদীপথ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুই দেশ।

অন্যদিকে, এই দুই দেশ ২০১৫ সালে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে এবং ২০১৮ সালে ভারত কর্তৃক চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর ব্যবহারের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ভারত কৌশলগতভাবে তার তিনটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় স্থলবেষ্টিত রাজ্য আসাম, ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ে যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

এই পদ্ধতি অনুসারে, ভারত যে সব পণ্য আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে পাঠাতে চায় সেগুলো প্রথমে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে পৌঁছাবে। এই সমুদ্রবন্দরগুলো থেকে সড়ক, নৌ ও রেলপথে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পণ্যগুলো নিয়ে যাওয়া হবে, যার জন্য রুট নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। যেমন, আসামে পণ্য পরিবহণের জন্য শেওলা হয়ে সুতারকান্দি রুট ব্যবহার করবে।

ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহণের জন্য আগরতলা-আখাউড়া (রেলপথ) ও শ্রীমন্তপুর-বিবিরবাজার রুট ব্যবহৃত হবে এবং মেঘালয়ে পণ্য পরিবহণের জন্য ব্যবহৃত হবে ডাউকি-তামাবিল রুট। এর মাধ্যমে তিনটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে উন্মুক্ত সমুদ্র বাণিজ্য রুটগুলোতে প্রবেশাধিকার পাবে।

এ পর্যন্ত ভারতের সাথে ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তিনটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, যার বড় অংশই ব্যবহৃত হবে আসাম, ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ের স্থলসীমান্তগুলিতে বাংলাদেশের মাধ্যমে যোগাযোগের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে।

এছাড়াও, বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বন্দরে একটি উপসাগরীয় টার্মিনাল নির্মাণ করছে, মংলা বন্দরকে আরও উন্নত করছে, এবং রামগড়-বারৈয়ারহাট, কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সরাইল এবং আশুগঞ্জ নদী বন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর রুটের জন্য চারলেইন মহাসড়ক নির্মাণ করছে।

ঋণচুক্তির অর্থ দিয়ে আশুগঞ্জে অতিরিক্ত অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার নদী বন্দর, খুলনা-দর্শনা জংশন থেকে রেললাইন দ্বিগুণ করা এবং পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত মিটারগেজ লাইনকে ডুয়ালগেজে উন্নীতকরণের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও, বাংলাদেশ সরকার একই অর্থ থেকে মংলা, ভেড়ামারা, এবং মিরসরাইতে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং কেরানীগঞ্জে একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে।

আমাদের আরও মনে রাখা উচিত, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত এবং নেপালের মধ্যে একটি মোটরযান চুক্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই চুক্তিটি কার্যকর হয়ে গেলে এই দেশগুলির মধ্যে যানবাহন চলাচল বাধাহীন হবে। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মত এই অঞ্চলে মানুষে-মানুষে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে এবং বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের বাণিজ্য ও যোগাযোগ আরও সম্প্রসারিত করবে।
শুধু ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলই নয়, নেপাল এবং ভুটানও স্থলবেষ্টিত। তাদের আমাদের বন্দর ব্যবহার করা প্রয়োজন। তবে নেপাল এবং ভুটানের পক্ষে মংলা বন্দরটি আরও সুবিধাজনক। বিদেশী জাহাজসমূহ বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যের জন্য আমাদের দু’টি বন্দরই ব্যবহার করে। ভারতের ক্ষেত্রে বন্দর ব্যবহারের সাথে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট যুক্ত রয়েছে। এই ধরণের চুক্তি এ উপমহাদেশে দেশভাগের পর থেকেই রয়েছে।

পরিবহন বিশ্বে এই ‘মাল্টিমডালিটি’র ধারণা আমাদের কাছে তুলনামূলকভাবে নতুন। এর অর্থ সড়ক, রেল এবং অভ্যন্তরীণ নৌ রুটের মধ্যে যে কোনও সুবিধাজনক রুট ব্যবহার করে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য পরিবহণ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারতকে কিছু সময়ের জন্য পণ্য সংরক্ষণ করতে হবে। এই সুবিধা সরবরাহের জন্য, ট্রানজিট প্রদানকারী দেশগুলোতে পণ্যাগার স্থাপন করা দরকার।

এটি একটি বৃহৎ প্রক্রিয়া, এর জন্য নিবিড় পরিকল্পনা প্রয়োজন। তছাড়া, পুরো জিনিসটাই একসাথে হওয়া উচিত। বাংলাদেশ অল্প অল্প করে একের পর এক পরিকল্পনা করছে। বর্তমানে, বাংলাদেশ সড়কগুলি উন্নত করছে যা বন্দরগুলোকে বোর্ডারদের সাথে সংযুক্ত করবে। ভারতও রেল নেটওয়ার্কের উন্নয়ন করছে। বাংলাদেশ সরকারের সুবিধা হল, ভারত আমাদের বন্দর, অভ্যন্তরীণ নৌ রুট, সড়ক এবং রেলপথ ব্যবহারের জন্য ফি বা চার্জ দেবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ এখন বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে বহনকারী ভারতীয় পণ্যগুলির জন্য ফি নিতে পারে এবং দেশের রপ্তানির পরিমাণও বাড়িয়ে তুলতে পারে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরসমূহের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) অনুসারে, পণ্য পরিবহণের জন্য আন্তঃসরকারী কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত প্রশাসনিক পরিচালন ফি ও অন্যান্য চার্জ ব্যতীত কার্গোকে কর বা শুল্ক ছাড় দেওয়া হবে। শুল্ক এবং বাণিজ্য সম্পর্কিত সাধারণ চুক্তির বিধান অনুযায়ী ফি এবং অন্যান্য চার্জ গ্রহণযোগ্য হবে। শুল্ক এবং বাণিজ্য সম্পর্কিত সাধারণ চুক্তির বিধান অনুযায়ী ফি এবং অন্যান্য চার্জ প্রযোগ্য হবে। তবে, উভয় দেশই একটি বিশেষ বাণিজ্য চুক্তির অংশ হিসেবে আরও অনুকূল শর্তে সম্মত হতে পারে।

 

নৌ প্রোটোকলের আওতায় বাংলাদেশ প্রতি টন মালামালের জন্য ২৭৭ টাকা করে নেয়। এর মধ্যে জেটিতে নিরাপত্তা এবং নোঙর করার জন্য ৫০ টাকা এবং ৩৪ টাকা নেওয়া হয়। বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কমিটি প্রতি টনের জন্য ১,০৫৮ টাকার সুপারিশ করেছিল। তবে এই সুপারিশ গ্রহণ করা হয়নি, কারণ প্রস্তাবনাগুলি পরীক্ষামূলক গবেষণার ভিত্তিতে হয়নি এবং উভয় দেশের কর্মকর্তারা পরে ২৭৭ টাকা নির্ধারণ করেছিলেন।

এখন বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী ভারতবিরোধী গোষ্ঠী এই ট্রানজিট এবং বন্দর ব্যবহারের চুক্তিকে সার্বভৌমত্ব হারানো হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। আমি মনে করি এটি ঠিক নয় এবং যারা এসবে বিশ্বাস করে তারা অন্ধ হয়ে আছে। ভারত যদি ট্রানজিট সুবিধা ব্যবহার করে তবে সেখানে নতুন চাকরি, অবকাঠামো, সড়ক, গুদাম, রেল সংযোগ এবং আরও অনেক কিছু থাকবে। এবং যদি এই সুবিধাগুলির উন্নতি হয় তবে এগুলোর আওতায় নতুন শিল্প-কারখানা তৈরি হবে। যার অর্থ, এটি সরাসরি আমাদের জাতীয় অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখবে।

এছাড়াও, দেশ জুড়ে পণ্য পরিবহনের সময় স্থানীয় পরিবহণ সংস্থাগুলি উপকৃত হবে এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে সড়ক, রেল ও নৌপথের সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে যা শিল্প সম্প্রসারণে সহায়তা করবে। আমরা যদি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশে ব্যবসা করা সহজ করতে না পারি তবে অন্যান্য দেশগুলি তাদের অর্থনীতির উন্নয়নে আমাদের পরিবহণ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবে এবং আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো।

লেখক, সহকারি অধ্যাপক, লোক প্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।
krishna_du@yahoo.com

264 ভিউ

Posted ২:১৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com