কক্সবাংলা ডটকম(২৪ ফেব্রুয়ারি) :: সিআইএর হয়ে কাজ করার উদ্দেশ্যে বিটলসের সদস্যরা ভারতে এসেছেন— এ রকম একটি খবর বামপন্থীদের সন্দেহের আগুনে আরো ঘি ঢেলে দিয়েছিল তখন…
‘হূষিকেশ, গুপ্তচরদের চারণভূমি’। ১৯৬৮ সালে ভারতের ফ্রি প্রেস জার্নাল নামে একটি পত্রিকায় এই শিরোনামে খবর ছাপানো হয়। খবরটি ছিল, ভারতের বামপন্থী দলের সদস্য কে. অনিরুধন লোকসভায় বিখ্যাত ব্রিটিশ ব্যান্ড বিটলসকে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য দায়ী করেন।
তিনি অভিযোগ তোলেন, ভারতের উত্তর প্রদেশের হূষিকেশে অবস্থিত মহাঋষি মহেশ যোগীর আশ্রমে বিটলস ব্যান্ড ধ্যানে দীক্ষিত হতে আসেনি।
তারা আসলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর হয়ে কাজ করার উদ্দেশ্যে এসেছে, যা ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। বিটলস ও হিপ্পিরা (মাদকসেবী) আশ্রমে ভিড় জমাচ্ছে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোপন খবর জোগাড় করার জন্য।
১৯৬৮ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে বিটলস ব্যান্ড হূষিকেশ আশ্রমে এসেছিল এলএসডি নামক মাদক থেকে মুক্তি পেতে। সেখানে তারা মহাঋষির কাছ থেকে ধ্যানের শিক্ষা গ্রহণ করেন। তাদের এ সফর ভালো চোখে দেখেননি স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও অন্যান্য সাধক।
লোকসভায় সেদিন অনিরুধন সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘যে ঘরে বিটলসের সদস্যরা থাকছেন তা অত্যন্ত আরামদায়ক। প্রকৃতপক্ষে, সেখানকার বাড়িগুলোকে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে।’ কেন এগুলো করা হচ্ছে তা তিনি জানতে চান।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, মহাঋষির আশ্রমে নতুন রানওয়ে নির্মাণ করার বিষয়েও। নতুন যে বিশেষ বিমান মহাঋষিকে দেয়া হয়েছে, তার পেছনে বিদেশী ষড়যন্ত্রীদের হাত রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
এরই মধ্যে ভারতের অন্যতম প্রধান সংবাদ সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব ইন্ডিয়া জানায়, স্থানীয় পুলিশ সিআইএর সদস্য সন্দেহে রাসেল ডিন ব্রাইস নামে একজনকে আশ্রম থেকে গ্রেফতার করেছে।
তার কাছে নাকি একটি পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে, যেখানে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থার প্রধান রাউলির স্বাক্ষর রয়েছে। সংবাদ সংস্থাটিকে এক পুলিশ নাম না জানানোর শর্তে জানান, ব্রাইস গুপ্তচর কিনা সে বিষয়ে মার্কিন দূতাবাস অস্বীকারও করেনি এবং তাদের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি।
এ ঘটনার মাত্র কয়েক বছর পর সোভিয়েত ইউনিয়নের গুপ্তচর সংস্থা কেজিবির সদস্য ইউরি বেজমেনভ জানান, সংস্থাটির পক্ষ থেকে তাকে মহাঋষির আশ্রমে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে কী ধরনের মানুষের যাতায়াত হচ্ছে, এটা জানার জন্যই কেজিবি থেকে তাকে পাঠানো হয়। খবরটি বামপন্থীদের সন্দেহের আগুনে আরো ঘি ঢেলে দেয়। এ ধরনের গুজবে হতবুদ্ধি হয়ে যায় বিটলস ব্যান্ড।
বিটলসের সদস্য পল ম্যাককার্টনি ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনাদের কি সত্যিই মনে হয় ইংল্যান্ড ভারতকে আবার দখল করবে? আর এজন্য আমাদের গুপ্তচরগিরি করতে হবে?’ মহাঋষিও সংবাদ সম্মেলন করে সম্পূর্ণ খবর অস্বীকার করেন।
অবশ্য ওই সফরে বিটলসের সদস্যরা বেশি দিন থাকেননি। জন লেনন ও জর্জ হ্যারিসন ছিলেন সর্বোচ্চ ছয় সপ্তাহ। সফরে থাকাকালীন ব্যান্ডটি ৩০টি গান লেখে। প্রতিটি গানই প্রচুর জনপ্রিয়তা পায়। তারা চলে আসার পর মহাঋষি বিশ্ব সফরে বেরিয়ে পড়েন। আশ্রমটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। পরিত্যক্ত সেই আশ্রমটি বর্তমানে বিটলসভক্তদের জন্য তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে।
Posted ২:১০ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta