কক্সবাংলা ডটকম(১৫ এপিল) :: বিদেশে অভিবাসী হওয়া বাংলাদেশী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ভালো নয়। নিম্নমানের পরিবেশে কাজের পাশাপাশি প্রবাসী এসব শ্রমিককে থাকতে হচ্ছে কষ্টকর, অস্বাস্থ্যকর আবাসনে। বিদেশে থাকাবস্থায় অভিবাসীদের শ্রম অধিকার ও সামাজিক অধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশের নেয়া উদ্যোগ পর্যাপ্ত নয়।
অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘ কমিটি বিষয়টিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য কনস্যুলার ও আইনি সেবা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।
অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্পর্কে গত মাসে জাতিসংঘ কমিটিতে শুনানি হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে মূল্যায়ন ও সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী শ্রমিকরা বিদেশে নিম্নমানের পরিবেশে চাকরি ও বসবাস করলেও তাদের স্বার্থ সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেই। জাতিসংঘ কমিটি বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে বাংলাদেশী নারী শ্রমিকদের বঞ্চনা রোধে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের পরও এসব কর্মীকে নিগ্রহের শিকার হতে হচ্ছে। প্রবাসী এ নারী শ্রমিকদের বেশির ভাগই গৃহপরিচারক হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত।
বিভিন্ন দেশের ১৮ জন স্বতন্ত্র মানবাধিকার বিশেষজ্ঞকে নিয়ে গঠিত জাতিসংঘের এ কমিটি অভিবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় বেশকিছু সুপারিশ করেছে। কমিটি প্রবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকারকে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছে।
ওইসব দেশে স্থানীয় শ্রমিকরা যে শ্রম অধিকার ও সামাজিক অধিকার ভোগ করেন, বাংলাদেশী শ্রমিকরাও যাতে সমান অধিকার পান সেজন্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত কমিটির প্রতিবেদনে এসব পরামর্শের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে প্রবাসী শ্রমিকদের বঞ্চনা ঠেকাতে রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিসংক্রান্ত বিধিমালা শক্তিশালী করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কমিটি প্রবাসী শ্রমিকদের সহায়তা দিতে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোয় কনস্যুলার ও আইনি সেবা জোরদারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নারী কর্মী পাঠানোর বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো জোরদারের কথাও উল্লেখ রয়েছে।
কমিটি এসব চুক্তির পদ্ধতিগত পর্যালোচনার পরামর্শ দিয়েছে, যাতে প্রবাসী নারী কর্মীদের শ্রম অধিকার ও সামাজিক অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা জোরদার করা যায়। অভিবাসী শ্রমিকদের বঞ্চনা অব্যাহত থাকলে কমিটি বাংলাদেশকে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তির আওতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
এছাড়া কমিটি গৃহপরিচারকদের অধিকার সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ২০১১ সালের চুক্তি বলবৎ করার কথা বিবেচনারও পরামর্শ দিয়েছে।
জাতিসংঘ কমিটি বাংলাদেশের অর্জনগুলোকেও স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচনে ২০০৬ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। এ সময়ে দারিদ্র্যের হার ৩৮ দশমিক ৪ থেকে কমে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে এসেছে। গড় আয় বেড়েছে এবং গড় আয়ু বেড়ে ৭১ দশমিক ৬ বছর হয়েছে। এছাড়া মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশের সূচকগুলোর উন্নতিরও স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার কমিটি।
এছাড়া প্রতিবেদনে বাংলাদেশে নারী-পুরুষের সমঅধিকার, সমাজে বৈষম্য দূর করা, আদিবাসীদের অধিকার, স্বাস্থ্যসেবার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বাসস্থানের অধিকারসহ বিভিন্ন মানবাধিকার ইস্যুতে জাতিসংঘ কমিটির বেশকিছু সুপারিশ রয়েছে।
Posted ১১:২১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta