কক্সবাংলা ডটকম(৭ ফেব্রুয়ারি) :: যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা ও মুনাফা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কের কারণে সোমবার ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ারবাজারে রেকর্ড দরপতন হয়েছে। যার প্রভাবে মঙ্গলবার গোটা এশিয়া-ইউরোপের শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন লক্ষ করা যায়।
মঙ্গলবার বৈশ্বিক শেয়ারবাজার চতুর্থ দিনের মতো নিম্নমুখী থাকায় বিভিন্ন কোম্পানির বাজারমূল্য ৪ ট্রিলিয়ন ডলার কমে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে; অথচ মাত্র আটদিন আগেই রেকর্ড উচ্চতায় ছিল এ মূল্যমান।
খবর গার্ডিয়ান, এএফপি, রয়টার্স ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত সূচক ডাও জোনস ১ হাজার ১৭৫ পয়েন্ট হারায় যায়। এটি ছিল ডাও জোনসের জন্য ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে দিন। মার্কিন শেয়ারবাজারে এ ব্যাপক দরপতনের প্রভাবে গতকাল এশিয়া ও ইউরোপের শেয়ারসূচকগুলোতেও নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
গতকাল এশীয় অঞ্চলজুড়ে শেয়ার দরপতনে নেতৃত্ব দিয়েছে টোকিও। গতকাল টোকিও শেয়ারবাজার সূচক ৪ দশমিক ৭ শতাংশ নিম্নমুখী অবস্থায় দিনের লেনদেন সমাপ্তির আগে সূচকে প্রায় ৭ শতাংশ দরপতন লক্ষ করা যায়। এছাড়া হংকং ৪ শতাংশের বেশি এবং সিডনি ও সিঙ্গাপুরের শেয়ারবাজার সূচক যথাক্রমে ৩ শতাংশ করে হারিয়েছে।
সোমবার ওয়াল স্ট্রিটের ব্যাপক পতনের সূত্র ধরে এশিয়ার আরো যেসব বাজার নিম্নমুখী ছিল তার মধ্যে সিউলের সূচক ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমে যায়। ম্যানিলা ১ দশমিক ১ শতাংশ, সাংহাই ৩ দশমিক ৪, মুম্বাই দশমিক ৯, ব্যাংকক ২ দশমিক ৪ শতাংশ নিম্নমুখী ছিল। এ সময় জাকার্তা ও কুয়ালালামপুরের শেয়ারসূচকগুলোতেও নিম্নমুখী ভাব ছিল।
এশিয়ার শেয়ারবাজারে দরপতনে জ্বালানি কোম্পানিগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে টোকিওতে ইনপেক্সের শেয়ারদর ৪ শতাংশের বেশি এবং হংকংয়ে সিএনওওসি, পেট্রোচায়না ও সিনোপ্যাকের শেয়ারদর ৫ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ পতন হয়।
অন্যদিকে গতকাল লন্ডন, ফ্রাংকফুর্ট ও প্যারিসের সূচক ৩ শতাংশ পর্যন্ত পতন দিয়ে দিনের লেনদেন শুরু করে। পরে অবশ্য সূচক কিছুটা বেড়ে যায়। এর মধ্যে লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচক ২ শতাংশ কমে ৭ হাজার ১৮৪ দশমিক ৭৪ পয়েন্টে দাঁড়ায়। ফ্রাংকফুর্টের ডাক্স ও প্যারিসের সিএসি যথাক্রমে ২ দশমিক ২ ও ২ শতাংশ হারিয়েছে।
সোমবার সেখানে ডাও জোনসের পয়েন্ট এ-যাবত্কালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমে গেছে। ডাও জোনসের এ পতনের হার এতটাই বেশি ছিল যে, চলতি বছর সূচকটির সব অর্জন ভেসে গেছে। এছাড়া এসঅ্যান্ডপি৫০০ সূচকটিও এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট হারিয়েছে।
মার্কিন অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদ, করপোরেট আয় ও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক আউটলুকের কারণে কয়েক মাস ধরেই আন্তর্জাতিক শেয়ারসূচকগুলো চাঙ্গাবস্থায় ছিল। ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যাপক কর কর্তনের ঘোষণা দেয়ার পর বড় কোম্পানিগুলো বেতন বৃদ্ধি ও বোনাসের ঘোষণা দিলে শেয়ারবাজার আরো চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
যার সুবাদে আন্তর্জাতিক শেয়ারসূচকগুলো রেকর্ড অথবা বহু বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছে যায়। এ সময় মার্কিন বন্ডের ইল্ডও চার বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছে।
এ অবস্থায় মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) নতুন করে সুদহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা ও বন্ডের ইল্ডের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ জমতে থাকে। মার্কিন শ্রমবাজারের চাঙ্গাভাব ও মজুরি প্রবৃদ্ধির খবরে শুক্রবার শেয়ার বিক্রির হার বেড়ে যায়। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করেন যে, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি করতে বাধ্য হবে।
বিনিয়োগকারীদের এ আশঙ্কার ছাপ পড়ে ওয়াল স্ট্রিটের সোমবারের লেনদেনে। ফেডের নতুন চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের দায়িত্ব গ্রহণের দিনটিতে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ধস নামে।
ক্রিসেট ওয়েলথের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা জ্যাক অ্যাবলিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি অবিশ্বাস্য রকম দরপতন ছিল। শেয়ারবাজারে এ অবস্থা সৃষ্টির জন্য কিছুটা সুদের হার নিয়ে ভয়, কিছুটা ফেডের নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়া এবং বাজারের অতিমূল্যায়ন কিছুটা দায়ী।’
ডিসেম্বরে ফেডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ২০১৮ সালে তারা তিনবার সুদহার বৃদ্ধির প্রত্যাশা করছে। এছাড়া সাবেক চেয়ারম্যান জ্যানেট ইয়েলেনের সর্বশেষ বৈঠকে ফেড চলতি বছর মূল্যস্ফীতি চাপের মধ্যে থাকবে বলে ইঙ্গিত দেয়া হয়।
Posted ২:২৯ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta