মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বিশ্ববাজারে শ্রমবাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ

সোমবার, ২৯ মে ২০১৭
556 ভিউ
বিশ্ববাজারে শ্রমবাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ

কক্সবাংলা ডটকম(২৯ মে) :: দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শ্রমিকের অভাবে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের মন্দাভাব কাটছে না। বিশেষ করে করে দক্ষ শ্রমিক তৈরিসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ওয়ার্ল্ড স্কিলস ইন্টারন্যাশনাল’-এর (ডব্লিউএসআই) সদস্য না হওয়ায় এ মন্দাভাব দিন দিন প্রকট হচ্ছে। কারণ এ সংগঠন কেবল আন্তর্জাতিক মানের শ্রমিক তৈরিতে প্রশিক্ষণই দেয় না, পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ করে দেয়।

অন্যদিকে, সিরিয়া, ইয়েমেন, সুদান প্রভৃতি দেশে যুদ্ধের কারণে বন্ধ রয়েছে শ্রমবাজার। এসব দেশ থেকে শ্রমিকরা ফিরে এসেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থেকে যাওয়া বাংলাদেশিরাও নিরাপত্তার অভাবে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে।

ফলে গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি কমেছে। একদিকে ফিরে আসা জনশক্তির চাপ, অন্যদিকে দেশে প্রতিবছর বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। স্বাভাবিকভাবেই কর্মক্ষম শ্রমশক্তি নিয়ে বিপাকে পড়েছে দেশ। আবার সংকুচিত হয়ে আসা বাজার পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন ও বিকল্প বাজার তৈরি করতেও দেখা যাচ্ছে না।

অবশ্য দেশের শ্রমবাজার সম্প্রসারণে দক্ষ শ্রমিক প্রশিক্ষণে ডব্লিউএসআই-এর সদস্য হতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। সংগঠনটি প্রতি দুই বছর পরপর সম্মেলন করে সদস্যভুক্ত দেশগুলোর কর্মীদের দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এ বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে এবং আগামী ২০১৯ সালে রাশিয়ার কাজানে এই সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ডব্লিউএসআই একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হলেও বিশ্বব্যাপী বৃত্তিমূলক দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। সদস্যভুক্ত দেশগুলোর কর্মীদের একত্রিত করে তাদের নিজস্ব দক্ষতা দেখতে প্রতি দুই বছর পরপর প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বর্তমানে ৭৬টি দেশ সংস্থাটির সদস্য।

ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ব্রুনাইসহ উন্নত দেশগুলোও এই সংস্থার সদস্য। এখন বাংলাদেশ সংস্থাটির সদস্য হতে তৎপরতা শুরু করেছে।

এ ব্যাপারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মোট কর্মক্ষম জনসংখ্যার প্রায় চার ভাগের একভাগের নিয়মিত কোনো কর্মসংস্থান নেই। বিদেশে শ্রমবাজারও ঠিকমতো তৈরি করা যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে এই বিপুল কর্মক্ষম মানুষ সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ফলে সরকারের উচিত শ্রমবাজার খুলতে ও শ্রমিকদের দক্ষ করে তুলতে দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তভাবে কাজ করা। পাশাপাশি নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। অন্য সবকিছুর চেয়ে বেকারত্ব দূরীকরণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে।

অবশ্য পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, সরকার যে ধরনের অর্থনৈতিক কৌশল প্রণয়ন করছে তাতে সামনের দিনগুলোতে শিল্প এবং সেবা-খাতের বিকাশ হবে। ফলে শিক্ষিত তরুণদের জন্য চাকরির বাজার বড় হবে। ২০১৫ থেকে ২০২০ সালে মধ্যে এক কোটি ২৯ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। কর্মসংস্থান হবে ৯৯ লাখ মানুষের। ফলে কর্মসংস্থানের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হবে। শিল্প এবং সেবা খাতের আরো বিকাশ হবে বলে আমরা আশা করছি। মজুরিও বাড়বে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শ্রমশক্তির এক সময় ব্যাপক কদর ও চাহিদা থাকলেও এখন আর সেই ঔজ্জ্বল্য নেই। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজার হারিয়েছে বাংলাদেশ। নতুন নতুন শ্রমবাজার সন্ধানের কাজটিও করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে রয়েছে সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশ।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১৬০টি দেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশের জনশক্তি পাঠানো হয়। এর মধ্যে ১৪০টিতেই পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। নতুন ৬০টি শ্রমবাজারে গত পাঁচ বছরে ৩০ হাজারের বেশি শ্রমিক পাঠাতে পারেনি বাংলাদেশ। অনেক দেশেই কর্মী নেওয়ার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অদক্ষ শ্রমিকের কারণে উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে শ্রমিক পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। আবার জঙ্গি ইস্যুতে সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশেই বাংলাদেশি শ্রমিক না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৮ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে আসছে। এদের মধ্যে গড়ে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ প্রতিবছর কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। দেশের ভেতরে যারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট তারা সরকারি-বেসরকারি চাকরির দিকেই বেশি মনোযোগী। আর যাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই অথবা ডিগ্রিধারী নন তাদের মধ্যেও একটি বড় অংশ বেকার থাকছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে, দেশে বর্তমানে বেকারত্ব (অর্থাৎ যারা সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টা কাজ করেছেন) সাড়ে তিন শতাংশ।

গত বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০১৫ সালে ২০১৪ সালের তুলনায় দেশে কর্মসংস্থানের হার কমেছে। চলতি বছরও কর্মসংস্থান কমার আভাস দিয়েছে সংস্থাটি। আগামী তিন বছর অর্থাৎ ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বেও শ্রমবাজার ও চাকরির বাজার সংকুচিত হবে। চলতি বছর দেশে কর্মসংস্থান কমবে চার দশমিক দুই শতাংশ হারে। এ ছাড়া ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে কমবে চার শতাংশ হারে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, দেশে গত এক দশকে বেকারত্ব বেড়েছে এক দশমিক ছয় শতাংশ। আর নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার কমেছে দুই শতাংশ। প্রতিবছর ২৭ লাখ কর্মক্ষম মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করলেও সরকারি বা বেসরকারিভাবে কাজ পাচ্ছে মাত্র এক লাখ ৮৯ হাজার মানুষ। ফলে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মানুষ বেকার থাকছে। পরিণতিতে উৎপাদন কমে যাচ্ছে আর বাড়ছে ভোগের মাত্রা। অর্থনীতিতে সৃষ্টি হচ্ছে অধিক চাপ।

লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্যমতে, বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। ভারত ও পাকিস্তানে প্রতি ১০ জন শিক্ষিত তরুণের তিনজন বেকার।

আর বিবিএস-এর সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম ২৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বেকার। এর মধ্যে পুরুষ ১৪ লাখ, নারী ১২ লাখ ৩০ হাজার, যা মোট শ্রমশক্তির সাড়ে চার শতাংশ। তিন বছর আগে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৯০ হাজার। এক দশক আগে ছিল ২০ লাখ। অন্যদিকে গত এক দশকে ১১ লাখ ৩০ হাজার মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের হার দুই শতাংশ বাড়ানো গেলে প্রবৃদ্ধির হার আট শতাংশে উন্নীত হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

তবে বিবিএসের দেওয়া তথ্যের তুলনায় বর্তমানে দেশে প্রকৃত বেকার আরো বেশি বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বর্তমান চাকরির বাজারে এসব বেকারদের যোগ্যতা ও দক্ষতা খুবই কম। সনদ অনুযায়ী চাকরি মিলছে না। চাহিদার সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় শিক্ষিত বেকার বেড়েই চলছে। এই চাপ আবার চাপ তৈরি করছে অর্থনীতির ওপর।

556 ভিউ

Posted ১:৪৫ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৯ মে ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com