বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বিশ্ব সংকটে নতুন স্নায়ুযুদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন-ভারত দ্বন্দ্ব

সোমবার, ০১ জুন ২০২০
338 ভিউ
বিশ্ব সংকটে নতুন স্নায়ুযুদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন-ভারত দ্বন্দ্ব

কক্সবাংলা ডটকম(৩১ মে) :: এক মহাদুর্গতিপূর্ণ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে চলেছে বিশ্ব। ১০০ বছর আগের স্প্যানিস ফ্লুর দাপট দু’বছর ধরে চললেও করোনার দাপট কতদিন চলবে সে হিসাব আজও করা সম্ভব হয়নি। আমরা সবাই নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখে চলেছি, আশা করি একদিন না একদিন প্রার্থিত ভোর আসবে, রুগ্ন পৃথিবীটা সুস্থ হয়ে উঠবে

কিন্তু এ বিশ্ব সংকটের মধ্যে এককভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দোরগোড়ায় এসে গেছে, যা শক্তিধর দেশটির ভেতর-বাইরে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। একদিকে প্রাণঘাতী ভাইরাসের আঘাত, অন্যদিকে নভেম্বরের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন; বলা যায়, দুটোই বড় আলোচনার বিষয় এখন।

সামনের নির্বাচনে আমেরিকার মানুষ কী করবে তা সেদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার ভাবনার বিষয়। তবে নির্বাচনটি যে অনেকটাই চীন কেন্দ্রিক হয়ে উঠছে, তা সাধারণভাবেই বলা যায়। কারণ বহুল আলোচিত-সমালোচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দৃশ্যতই তিনটি বড় সংকটের মুখোমুখি হয়ে পড়েছেন। প্রথমটি, দেশের করোনা-মৃতের সুবিশাল সংখ্যা; দ্বিতীয়টি, অর্থনীতির ব্যাপক মন্দার আভাস এবং তৃতীয়টি, আসন্ন নির্বাচনে প্রথম ও দ্বিতীয়টি কতটা প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে দোদুল্যমানতা।

বলা বাহুল্য, এ তিনটি ক্ষেত্রেই চীন জড়িয়ে আছে। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বয়ং যখন টুইট করে তার নিজের এবং দেশের সংকটের সঙ্গে চীনকে জড়ানোর চেষ্টা করে চলেছেন, তখন বলতেই হয় বিষয়টি নিয়ে আর রাখঢাক নেই। ট্রাম্প সাহেব চীনের উহান থেকে বিস্তৃত ভাইরাসটিকে ‘চায়না ভাইরাস’ নামে আখ্যায়িত করেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ভাইরাসটি উহানের পরীক্ষাগার থেকে ছড়িয়েছে। অতএব ট্রাম্প প্রশাসন বিষয়টি হালকাভাবে নেয়নি বলতেই হবে।

বিশ্ববাসীকে কোয়ারেন্টিনে ঠেলে দেয়া ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনের উহানে, এ নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। তবে সেটি উহানের বন্যপ্রাণী বাজার নাকি ভাইরোলজি পরীক্ষাগার থেকে ছড়িয়েছে- সে প্রমাণ এখনও মেলেনি, যদিও এ বিষয়ে আমেরিকাসহ কয়েকটি দেশ, সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম চীনের ‘পরিকল্পিত গোপনীয়তা’ নিয়ে প্রকাশ্যেই উষ্মা প্রকাশ করেছে। এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবস্থান নিয়েও অভিযোগ বিস্তর।

আর ঠিক এ প্রেক্ষাপটে নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। অনেকেই মনে করেন বিদ্যমান অবস্থায় ট্রাম্পের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। তবে তা শেষ পর্যন্ত কতটা টিকে থাকবে, বলা যাবে না। ডেমোক্রেটরা করোনা সংকটের জন্য মুখ্যত ট্রাম্পকেই দায়ী করেছেন, যদিও তাদের বহু নেতার মুখে চীনের সমালোচনা আছে। ট্রাম্প যখন ভাইরাসটি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য চীনকে দায়ী করেন, বাইডেন তখন অভিযোগ করেন সতর্কতা মেনে চললে আমেরিকায় এ রোগের ক্ষয়ক্ষতি এতটা ভয়ংকর হতো না।

আরও মজার ব্যাপার, ট্রাম্প সমর্থকরা নির্বাচনী কৌশলে জো বাইডেনকে এরই মধ্যে ‘বেইজিং বাইডেন’ বলে গালাগাল দিতে শুরু করেছে। দেশে চীনবিরোধী দৃশ্যমান মনোভাবের কারণে ডেমোক্রেটরা যেমন সরাসরি চীনকে দায়ী করতে পারছে না, আবার ট্রাম্পকেও সমর্থন দিতে পারছে না। কাজেই সংকট দু’পক্ষেই।

দৃশ্যতই করোনাভাইরাসের বিশ্ব সংক্রমণকে কেন্দ্র করে একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধে জড়িয়েছে পৃথিবী এরই মধ্যে। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পর সুদীর্ঘ যে ‘কোল্ড ওয়ার’ শেষ হয়েছিল, আবারও তা চীন-যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ দ্বন্দ্বে আবির্ভূত হয়েছে। দু’দেশের বাদানুবাদ ও বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন রূপ নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তারে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করায় চীন যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সেটিও স্বাভাবিক নয়।

এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স চীন-ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ভাইরাসের কারণে চীন-মার্কিন সম্পর্ক এমন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। আরও বলা হয়েছে, চীনবিরোধী এ বিশ্ব মনোভাব এতটাই যে, তা ১৯৮৯ সালের তিয়েনানমেন স্কোয়ারের ঘটনার চেয়েও বেশি।

প্রশ্ন হচ্ছে, করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে এই যে নতুন স্নায়ুযুদ্ধ বা যুদ্ধ সম্ভাবনা, তাতে কে লাভবান হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, না, কেউ লাভবান হতে পারে না। বরং দু’পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং হয়তো বিশ্বকে নিয়েই হবে। আশঙ্কা আরও আছে। স্নায়ুযুদ্ধই কি শেষ কথা, নাকি করোনার সংকট সত্যিকার যুদ্ধেরও সূচনা করবে?

মার্চের শেষ সপ্তাহে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) এক সভায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। পিএলএকে তিনি সম্ভাব্য সব ফ্রন্টে এবং চরম খারাপ অবস্থা সামলাতে, এমনকি যুদ্ধের জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুতি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সিনহুয়া বার্তা সংস্থা পরিবেশিত খবরে জানা গেছে, শি বলেছেন- বিদ্যমান মহামারী বিশ্ব মানচিত্রে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে, যার সঙ্গে চীনের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন দুটোই জড়িত।

কাজেই সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি চাই। উল্লেখ্য, চীনের প্রেসিডেন্টের এ নির্দেশ এমন সময়ে ঘোষিত হল যখন লাদাখ ও উত্তর সিকিমের ‘লাইন অব একচুয়াল কন্ট্রোল’ বরাবর চীন ও ভারত তাদের সেনাসংখ্যা বাড়িয়েছে এবং দু’দেশের সেনাবাহিনী মুখোমুখি হয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন নৌবাহিনী বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরের পাশাপাশি তাইওয়ানের জলসীমায় টহল বাড়িয়েছে। যদিও শি’র ভাষণে চীন-ভারত সীমান্তের উত্তেজনার বিষয়টি স্থান পায়নি; তথাপি বিশ্লেষকরা মনে করেন- চীনা নেতার বক্তব্য অবধারিতভাবেই প্রতিক্রিয়াশূন্য নয়।

চীনের গণমাধ্যমগুলো ভারত-চীন সীমান্তের সাম্প্রতিক সংঘর্ষ ও সৈন্য সমাবেশ নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করেনি। তবে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’ ভারতকেই এ সীমান্ত সংঘর্ষের জন্য দায়ী করেছে। অন্যদিকে ভারত দায়ী করেছে চীনকেএবং সরাসরি।

চীন ভারতের সীমান্তে সব সময় শান্তি বজায় থাকেনি। ক্রমাগতভাবে পাকিস্তানের পক্ষ ধারণকারী চীন ভারতের অরুণাচল প্রদেশ নিয়েও দাবি তুলেছে। অন্যদিকে গিলগিট-বাল্টিস্তান নিয়েও আগ্রহী মনে হচ্ছে চীনকে। ভারত দু’দেশের ৩ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্ররেখা’ লঙ্ঘন করার বিষয়ে চীনকে অনেকবারই দায়ী করেছে। স্মরণযোগ্য, ১৯৬২ সালে একটি বড় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর চীন ও ভারত এবারই প্রথম আবারও মুখোমুখি অবস্থানে।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, চীন সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি করলে ভারতকেও পাল্লা দিয়ে শক্তি বাড়াতে হবে। কিছু পর্যবেক্ষক অবশ্য মনে করেন করোনা বিপর্যয় নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে চীনের ওপরে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, ভারতের সঙ্গে চীনের এ নতুন টানাপোড়েন তা থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।

এরই মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরের আধিপত্য নিয়ে চীন-আমেরিকার দ্বন্দ্ব আগের চেয়ে ভিন্নমাত্রার বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্প আবার চীন-ভারত গোলযোগে তার মধ্যস্থতার প্রস্তাব রেখেছেন। এর আগে কাশ্মীর সংকট নিয়েও মধ্যস্থতার প্রস্তাব রেখেছিলেন ট্রাম্প; কিন্তু ভারত তা সরাসরি নাকচ করেছে। তবে চীনের সরকার জানিয়েছে, দু’দেশের সীমান্ত স্থিতিশীল আছে এবং দুই দেশ আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দু’দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে আগে যে সমঝোতা হয়েছে, আশা করা যায় সেমতেই সীমান্তে শান্তি বজায় রাখা হবে।

বিদ্যমান বিশ্ব বিপর্যয়ে সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সংকট মোকাবেলায় নিজ দেশেই ট্রাম্প বহুল সমালোচিত। তার কথা ও কাজ নিয়ে সমালোচনার অন্ত নেই। এই তো সেদিন টুইটার কোম্পানি আজেবাজে মন্তব্য করার জন্য তাকে অভিযুক্ত করেছে।

অন্যদিকে চীন নিয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ আছে। বিগত কয়েক দশকে অর্থনীতি ও প্রযুক্তিতে বিস্ময়কর সাফল্য চীনকে অনন্য বিশ্বমর্যাদায় দাঁড় করিয়েছে। কিন্তু বিদ্যমান করোনা সংকটে সে মর্যাদা কতটা রক্ষিত হবে, তা অবশ্যই দেখার বিষয়। বহুসংখ্যক মানুষই মনে করেন, যেভাবে পৃথিবীর নানা প্রাপ্ত থেকে চীনের দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে তাতে ঠিক আগের মর্যাদায় থাকা কঠিন হবে চীনের।

এ সংকটকে কেন্দ্র করে দাবি করা হচ্ছিল, চীন বিশ্ব নেতৃত্বের দাবিদার হয়ে উঠবে। কিন্তু সেটি কতটা বাস্তবসম্মত তা বিবেচনার দাবি রাখে। বিশ্বনেতা হয়ে ওঠার স্বার্থ হচ্ছে বিপন্ন সময়ে বিশ্বস্বার্থ রক্ষা করা, যা না পেরেছে যুক্তরাষ্ট্র, না চীন।

হারুন হাবীব : লেখক, বিশ্লেষক ও সাংবাদিক

338 ভিউ

Posted ৩:৫৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০১ জুন ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com