কক্সবাংলা ডটকম(১৭ অক্টোবর) :: চীনের সাথে সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যে রাফাল বিমান যখন ভারতে পৌঁছলো, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তখন বললেন: রাফাল বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক মেশিনগুলোর একটি যেটা আকাশে যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম। তাছাড়া, এই জঙ্গিবিমানগুলো ভারতের আত্মরক্ষা ও আক্রমনের সক্ষমতা বাড়াবে এবং ভারতের জন্য ‘গেম-চেঞ্জার’ হয়ে উঠবে।
ভারত ৩৬টি রাফাল বিমান কিনেছে, যার মধ্যে পাঁচটি তারা হাতে পেয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যেই ৯.৩৫ বিলিয়ন ডলার দিয়ে আরও বিমান কেনা হবে, যেখানে প্রতিটি বিমানের দাম পড়বে ২৪২ থেকে ২৬০ মিলিয়ন ডলার।
রাফাল বিমানের আবির্ভাব নিয়ে মিডিয়ায় ব্যাপক উচ্চবাচ্য হয়েছে। ভারতের প্রতিটি সংবাদ চ্যানেলই কিছুটা সন্দেহ পোষণ করেছে, কারণ চীনের কাছে আরও শক্তিশালী জে-২০ বিমান রয়েছে। এটা বলা কি আদৌ যৌক্তিক যে, ভারত আর চীনের মধ্যে পরিস্থিতির অবনতি হলে আকাশে আধিপত্য করবে ভারত?
প্রথমত, চতুর্থ প্রজন্মের জঙ্গি বিমানের সংখ্যা চীনের অনেক বেশি। ভারতের চতুর্থ প্রজন্মের জঙ্গিবিমান রয়েছে ৩০০টির বেশি, যার মধ্যে রাশিয়ার বিমান (সু ৩০ এমকেআই) রয়েছে ২৫০টি। অন্যদিকে চীনা বিমান বাহিনীর চতুর্থ প্রজন্মের বিমান রয়েছে ৬০০টির বেশি। সম্প্রতি তারা পঞ্চম প্রজন্মের জে-২০ আর জে-৩১ বিমান তৈরি করেছে। বিমান বাহিনীতে এরই মধ্যে জে-২০ বিমান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনীর জঙ্গিবিমান রয়েছে যেখানে ৯০০টির মতো, সেখানে চীনের রয়েছে ২০০০।
চীনের বিমানের বহর ভারতীয় বিমান বাহিনীর বহরের দ্বিগুণেরও বেশি। পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ লাগলে, আকাশে শুধু সংখ্যার দিক থেকেই বহু এগিয়ে থাকবে চীন। তবে, ভারত যদি চীনের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, তাহলে তাদের একা মাঠে নামার সম্ভাবনা খুবই কম এবং যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো কোয়াডের দেশগুলোকে সাথে নিয়ে তারা যুদ্ধে নামার চেষ্টা করবে।
দ্বিতীয়ত, জে-২০ আর রাফাল বিমান দুটো আলাদা এবং তাদের ধরন আলাদা। জে-২০ ৩২,০০০ কেজি ওজনের অনেক ভারি জঙ্গিবিমান, যেখানে রাফালের ওজন হলো ১৫,০০০ কেজি। রাফাল চতুর্থ-প্লাস প্রজন্মের বিমান, যেটাকে এফ-১৮ হরনেটের সাথে তুলনা করা চলে। অন্যদিকে চীনের জে-১১ বি, জে-২০ এবং সু ৫৭, এবং এফ-২২ এগুলো হলো পঞ্চম প্রজন্মের জঙ্গিবিমান, যেগুলোতে অনেক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, ক্রস সেকশান রাডার, আর স্টেলথ প্রযুক্তি রয়েছে।
গত কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র, এরপর রাশিয়া, এবং এখন চীন বিভিন্ন ধরণের জঙ্গিবিমান তৈরি করেছে, কারণ তাদের অনেক বেশি সামরিক ও উন্নয়ন বাজেট রয়েছে এবং হামলা চালানো ও প্রতিহত করার জন্য তারা বিশেষায়িত বিমান তৈরি করেছে। ফ্রান্স, সুইডেন, ইসরাইল, ভারত, পাকিস্তানের মতো অন্যান্য দেশগুলো একই ধরণের বিমান বহুমুখী কাজে ব্যবহার করছে, কারণ তাদের বাজেট অনেক কম।
এর অর্থ হলো রাফাল এয়ার টু এয়ার কমব্যাট, এয়ার টু ল্যাণ্ড, পারমানবিক ডেলিভারি সব ধরণের অভিযানে অংশ নিতে পারবে, কিন্তু বিমানের এয়ারফ্রেমকে অবশ্যই সবগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে। এই কারণে রাফাল বিমানগুলো এফ-২২, সু ৫৭, জে-২০ বিমানের মতো বিশেষায়িত বিমানের বিপরীতে অসুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। তাছাড়া জে২০ বিমানের উচ্চ এলাকায় বিচরণের ক্ষমতা এবং ম্যাক ২ গতির মতো বারতি সক্ষমতা তো রয়েছেই, যেগুলোর কারণে এই বিমানগুলো রাফাল বিমানকে কিনেটিক ও গ্র্যাভিটেশনাল পোটেনশিয়াল এনার্জিসহ হামলা করতে পারবে। অন্যদিকে এগুলোর স্টেলথ প্রযুক্তির কারণে অন্য বিমানের পক্ষে জে-২০কে চিহ্নিত করাও কঠিন হবে।
Posted ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta