কক্সবাংলা ডটকম(১৯ নভেম্বর) :: এক ঝটকায় স্বপ্নভঙ্গ! যে স্বপ্নের ইমারত তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলেন কোটি কোটি ভারতীয় সমর্থক, তা এক ধাক্কায় ভেঙে দিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তারা। এই একটা কথাই বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে বারবার শোনা যাচ্ছিল। তবে সবাই ভেবেছিলেন, ভারত তো টানা দশটা ম্যাচ জিতেছে। তার উপর ভারতেরই ঘরের মাঠ।
প্রায় এক লাখ ৩০ হাদার সমর্থক ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া বলে চেঁচাবে। সেখানে ভারতকে হারাবে কে!
অনেক সময় সমস্ত অলীক হিসেব নিকেশ বাস্তবের প্লটে হারিয়ে যায়। বিশ্বকাপ ফাইনাল ২০২৩ এই কথাই প্রমাণ করে দিয়ে গেল যেন! ভারতীয় দল এবার সবার আগে বিশ্বকাপ ফাইনালের দিকে ছুটেছিল এবার।
গ্রুপ পর্বের প্রতিটা ম্যাচ জিতে সেমিফাইনাল, সেখান থেকে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনাল। তার পর স্বপ্নভঙ্গ।
ভারতের পরাজয়ে দায়ী কোন কারণগুলি?
এমনটা যে হবে কেউ কল্পনা করেননি। ভারত আজ আমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ফাইনাল খেলতে নেমেছিল ফেভারিট হিসেবেই। টানা ১০টি ম্যাচে জিতে।
কিন্তু ফাইনালে ভারতকে সব বিভাগে টেক্কা দিয়ে বাজিমাত করল অস্ট্রেলিয়া। ষষ্ঠবার বিশ্বকাপ জিতে। ভারতের আইসিসি ইভেন্টে ট্রফি জয়ের খরা অব্যাহত রইল বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও।
৪২ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটে পরাজয়। অস্ট্রেলিয়াকে ২৪১ রানের টার্গেট দিয়ে ৭ ওভারে ৪৭ রানের মধ্যে তিনটি উইকেট ফেলেও দিয়েছিল। তখন মাঠে ভারতীয়দের চালচলনে আগ্রাসী মেজাজ। ফুটছে ১ লক্ষ ৩২ হাজার দর্শকাসন বিশিষ্ট স্টেডিয়ামও। কিন্তু প্যাট কামিন্স আগেই বলেছিলেন, শব্দব্রহ্ম থামানোর মজাই আলাদা।
এদিন বেশিরভাগ সময় সেটাই করে দেখাল অস্ট্রেলিয়া। রোহিত শর্মা টস হেরেছিলেন। কিন্তু টস জিতলে তিনি ব্যাটিং নিতেন বলেই জানালেন। তাহলে কি পিচের চরিত্র আন্দাজ করতে ভুল হয়েছিল অধিনায়কের? বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছিলেন টস জিতলে ব্যাট করারই। কিন্তু প্যাট কামিন্স বোলিং নিয়ে অনেককেই চমকে দেন।
শেষে দেখা গেল তিনিই পিচের চরিত্র সঠিকভাবে আন্দাজ করেছিলেন। সাহসী সিদ্ধান্ত অজিদের সুবিধা করে দিল। ভারত পাওয়ারপ্লে-র প্রথম ১০ ওভারে ঝড়ের গতিতেই রান তুলছিল। কিন্তু রোহিত শর্মা আউটের পরই শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ যেন অতি সতর্ক হয়ে পড়ল। এটা ঠিক, ম্যাচ যত এগিয়েছে পিচ ততই ব্যাটিং সহায়ক পড়েছিল। কিন্তু তাই বলে টানা ৯৭ বল কোনও বাউন্ডারি না এলে চাপ বাড়ে বৈকি! রোহিত শর্মা ৪টি চার ও তিনটি ছয় মারেন। বিরাট কোহলি মারেন চারটি চার।
শ্রেয়স আইয়ার, লোকেশ রাহুল, সূর্যকুমার যাদব, মহম্মদ শামি ও মহম্মদ সিরাজ একটি করে চার মারেন। ছয় দূরের কথা। এত কম চার-ছক্কা ভারত শেষবার কবে মেরেছে তা মনে করতে পারছেন না কেউই। রোহিত শর্মাও বলেছেন, ২৭০-২৮০ রান দরকার ছিল। নিদেনপক্ষে অন্তত আরও ২০-৩০ রান। বিপক্ষের তিনটি উইকেট ফেলে চেপে ধরেও হেড ও লাবুশেনকে থামাতে না পারাও ভারতের পরাজয়ের কারণ।
কম রানের পুঁজি থাকলে দ্রুত উইকেট তুলে নেওয়া জরুরি। আজকের ম্যাচে ভারতের বোলিং একেবারেই চেনা ছন্দে ছিল না। গোটা টুর্নামেন্টে বোলিংয়ের একটা খারাপ দিনেই শেষ বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। দুই দলের ফিল্ডিংয়েও চোখে পড়েছে বড় ফারাক। শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডিংয়ে বাড়তি তাগিদ ধরা পড়ছিল। ট্রাভিস হেডের পিছনের দিকে ছুটে রোহিত শর্মার ক্যাচ ধরা বিশ্বকাপের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকল।
অন্যদিকে, ভারতের ফিল্ডিংও অজিদের সহজে রান তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। কুলদীপ যাদব ও রবীন্দ্র জাদেজার বোলিং ছিল নির্বিষ। অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা যেখানে ৫০ ওভারে ১২ রান অতিরিক্ত দেন, ভারত সেখানে দিয়েছে ৪৩ ওভারে ১৮ রান। তার মধ্যে বাই ৫ রান, লেগ বাই ২ রান, ওয়াইড ১১টি।
জসপ্রীত বুমরাহ ২টি মেডেন-সহ ৯ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। ১টি মেডেন-সহ ৭ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে ১ উইকেট মহম্মদ শামির। ৭ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে সিরাজ পান ১ উইকেট। জাদেজা ১০ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে ও কুলদীপ ১০ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে কোনও উইকেট পাননি। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে খেলানো হলে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতো কিনা তা নিয়ে চর্চা চলছে।
তবে ভারতের ষষ্ঠ বোলারের অভাব ফাইনালে প্রকট হলো। ম্যাচের শেষে তাই চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না মহম্মদ সিরাজ। সিরাজকে সান্ত্বনা দিতে গেলেন জসপ্রীত বুমরাহ। তবে যিনিও যখন সাজঘরে ফিরছিলেন চোখেমুখে হতাশার অভিব্যক্তি। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতে দেখা গেল বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাকে। রোহিতের চোখেও জল এলো। তবে সামলেও নিলেন।
লোকেশ রাহুল থেকে শুরু করে সকলেই হতাশ। ম্যাচের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রথা মেনে যেতে হলো সকলকেই, কিন্তু তা যেন জোর করে নিজেদের টেনে নিয়ে যাওয়া। ভারত হারলেও তাঁদের মাথা উঁচু রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। ম্যাচের শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এলেন হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়। ২০০৭ সালে অধিনায়ক ও ২০২৩ সালে কোচ হিসেবে তাঁর কাছেও অধরাই রইল বিশ্বকাপ।
Posted ১:৩৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২০ নভেম্বর ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta