রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ভারত মহাসাগরে দাপট কার ?

বুধবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৭
617 ভিউ
ভারত মহাসাগরে দাপট কার ?

কক্সবাংলা ডটকম(১৮ ) :: অপারেশন মালাবার: নয়া জোট? বর্ষায় উত্তাল বঙ্গোপসাগর। সেই ফেনিল ঢেউয়ের বুক চিরে, সমদূরত্ব রেখে পাশাপাশি তিন সারিতে এগোচ্ছে নয় নয় করে নানান ধরনের ১৬টা যুদ্ধজাহাজের দল। আকাশে উড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে বোমারু বিমান। উড়ানোর জন্য তৈরি জাহাজের ডেকে সারবাঁধা জঙ্গি বিমানের দল।

আর এই তিন সারির যুদ্ধজাহাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারতীয় নৌবাহিনীর বিমানবাহী আইএনএস বিক্রমাদিত্য, মার্কিন নৌবহরের পরমাণু শক্তিধর বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস নিমিট্জ আর জাপানি হেলিকপ্টার গানশিপবাহী রণতরি ইজুমো। শুরু হয়েছে ভারত-আমেরিকা-জাপানের নৌবাহিনীর যৌথ মহড়া, যার পোশাকি নাম অপারেশন মালাবার।

এ-ই অবশ্য প্রথম নয় এই তিন দেশের যৌথ মহড়া। নব্বইয়ের দশক থেকে হয়ে আসছে এটা। কিন্তু ২০১৭ সালে এসে এই মহড়ার মাহাত্ম্য অন্য মাত্রা পেয়ে গিয়েছে। বিশ্বরাজনীতির মহলে নয়া সমীকরণ জন্ম নিচ্ছে। ভারত মহাসাগরে সম্ভাব্য চীনা দাদাগিরি ঠেকাতে নতুন জোটের অভ্যুদয় ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে তিন দেশের এই যৌথ মহড়াকে তারই আগাম শঙ্খনাদ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

আদতে বিশ্ব ইতিহাসে আবহমানকাল ধরে চলে আসা প্রবাদবাক্য—সমুদ্র যে শাসন করে, বিশ্বও সেই শাসন করে, এখনো সমানভাবে প্রযোজ্য।

সেই ভাইকিং নৌবহর থেকে স্পেন, ডাচ্‌, পর্তুগিজদের রণতরি থেকে ইংল্যান্ডের রয়্যাল নেভি থেকে বর্তমানে বিশ্বের সব মহাসাগর শাসন করা মার্কিন নৌবহর—সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।

১২০ বছর আগে, ১৮৯৭ সালে জার্মান সংসদে দাঁড়িয়ে সে দেশের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী বার্নার্ড ভন বুঁলো (ইনি পরে জার্মানির চ্যান্সেলরও হন) জার্মানির বিশ্বশক্তি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে বলে বসলেন, ‘মোদ্দা কথা হলো, আমরা চাই না কাউকে আমাদের ছায়ায় রাখতে, কিন্তু আমরাও সূর্যের তলায় থাকার দাবি জানাই।’ অর্থাৎ বিশ্বের তৎকালীন ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর সঙ্গে একাসনে বসার দাবি জানাল জার্মানি। তাঁরও ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, হল্যান্ডের মতো উপনিবেশ চাই। বস্তুত, এই বক্তৃতার পরই জার্মানি তার নৌশক্তি ঢেলে সাজতে শুরু করে।

গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন অস্তাচলে যাওয়ার পর ওয়াশিংটন একাই বিশ্ব শাসনের ভার নিয়ে নেয়। কিন্তু গ্লাসনস্ত আর পেরেস্ত্রৈকা মস্কোর শক্তি খর্ব করলেও এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে ঘুরপথে অর্থনৈতিক উদারীকরণের দরজা খুলে দেয়। মতবাদের ছুঁতমার্গ থেকে বেরোনোর জন্য ১৯৬১ সালে দেং জিয়াও পিঙের বলা ‘বিড়াল যতক্ষণ ইঁদুর ধরতে পারছে, ততক্ষণ সেটা সাদা না কালো, তা নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে’—এই আপ্তবাক্যকে হাতিয়ার করে নিজেদের মতো করে আর্থিক উদারীকরণের দিকে চলতে শুরু করল চীন।

কেমন সে চলা? আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার ও বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, (এখনকার বিশ্ববাজারে ডলারের দাম ধরে) ১৯৯০ সালে চীনের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট বা সংক্ষেপে জিডিপি) যেখানে ছিল ৩৯০ বিলিয়ন ডলার (১ বিলিয়ন = ১০০ কোটি), ২০১৬ সালের শেষে তা এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ হাজার বিলিয়ন ডলারে। ১৯৯০ সালে যেখানে বিশ্বের জিডিপির মাত্র ৩ শতাংশ ছিল বেইজিংয়ের, ২০১৬ সালের শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশে।

সোজা কথায়, বিশ্বের কর্মশালা হয়ে উঠেছে চীন। বিশ্বের ৮০ শতাংশ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র তৈরি হয় সে দেশে। দুনিয়ার ৭০ শতাংশ মোবাইল ফোন তৈরি হয় চিনে। বিশ্বের ৬০ শতাংশ জুতো বানানো হয় চীনা কারখানাগুলোয়। ২০১৬ সালে বিশ্বের সাড়ে নয় কোটি গাড়ির মধ্যে প্রায় তিন কোটি গাড়ি তৈরি হয়েছে চীনে। বলা বাহুল্য, গাড়ি তৈরিতে চীন এখন বিশ্বের এক নম্বর দেশ।

অর্থনীতিবিদের হিসাবে, সব ঠিকঠাক চললে ২০৩০ সাল নাগাদ আমেরিকাকে ছাপিয়ে চীন বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে আত্মপ্রকাশ করবে। এ কারণে সমুদ্র শাসন করে সেই তাজ ধরে রাখা বেইজিংয়ের পক্ষে অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ১২০ বছর আগে সমুদ্র শাসন করে বিশ্বশক্তি হয়ে ওঠার যে বাসনা জার্মানি দেখিয়েছিল, তার সঙ্গে কোথাও যেন চীনের বর্তমান কর্মকাণ্ডের মিল আছে।

ওবর: জ্বালানির নয়া রাস্তা

চীনা অর্থনীতির চাকা চালু রাখতে যে তিনটি প্রধান জ্বালানি দরকার, তা হলো তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস আর কয়লা। আর সেখানেই নিহিত রয়েছে ভারত মহাসাগরের গুরুত্ব।

চীন বছরে ২৩০ বিলিয়ন ডলারের তেল আর প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে মূলত পশ্চিম এশিয়া থেকে। ১২ হাজার কিলোমিটার জলপথ পেরিয়ে পারস্য উপসাগর আর আরব সাগর হয়ে উত্তর ভারত মহাসাগর ছুঁয়ে, মালাক্কা প্রণালির মধ্য দিয়ে দক্ষিণ চীন সাগর হয়ে পূর্ব চীনের বন্দরগুলোয় সেই তেল পৌঁছায়।দুনিয়ার ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন বিশ্ব ইস্পাত সংগঠনের (ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশন বা ডব্লিউএসএ) পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৬ সালে বিশ্বে মোট ইস্পাত উৎপাদিত হয় ১৬৩ কোটি টন, যার মধ্যে ৮১ কোটি টন চীনের উৎপাদন। ইস্পাত উৎপাদনের জন্য কয়লা (নন-কোকিং কোল বা স্টিম কোল) মূলত আমদানি করা হয় অস্ট্রেলিয়া আর ইন্দোনেশিয়া থেকে। এটাও যায়, দক্ষিণ চীন সাগর হয়ে।

এই দীর্ঘ জলপথের সবটাতেই কিন্তু চীনের দাদাগিরি চলে না। দক্ষিণ চীন সাগরতীরবর্তী মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনের সঙ্গে এই দরিয়া নিয়ে সামরিক উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। বেইজিং প্রাচীন এক মানচিত্র দেখিয়ে গোটা দক্ষিণ চীন সাগরকেই নিজের বলে দাবি করছে, কিন্তু বাকি কোনো দেশ এটা মোটেই মানতে রাজি নয়। বছরে বিশ্বের পাঁচ লাখ কোটি ডলারের এই বাণিজ্যপথের সঙ্গে আমেরিকার প্রত্যক্ষ স্বার্থ জড়িয়ে আছে। তাই চীনা হুমকি ঠেকাতে মার্কিন রণতরি ঘুরছে দক্ষিণ চীন সাগরে। ভিয়েতনামের সঙ্গে সমুদ্রে তেল তোলা সুরক্ষা দিতে ভারতীয় রণতরিও এসেছে। আর স্থলে যত শক্তির আস্ফালন চীন করুক না কেন, সমুদ্রে মার্কিন বা ভারতীয় নৌবাহিনীর মোকাবিলা করার মতো অবস্থায় এখনো তারা নেই।

কিন্তু উৎপাদনের অশ্বমেধযজ্ঞ চালু রাখতেই হবে বেইজিংকে, কারণ এর ওপরই বিশ্ব অর্থনীতিকে শাসন করার শক্তি লুকিয়ে আছে। তাই ভারত মহাসাগরের লাগোয়া আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর থেকে জ্বালানি পথ বের করার জন্য সচেষ্ট হয়েছে চীন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যে চীন সম্প্রতি রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে এশিয়া-ইউরোপ-আফ্রিকা জোড়া ১২৪ বিলিয়ন ডলারের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (ওবর) মেগা প্রকল্প ঘোষণা করেছে, তা মূলত জ্বালানি আনার জন্য দক্ষিণ চীন সাগর ছাড়াও আরব সাগর আর বঙ্গোপসাগরে নয়া বন্দর করে নতুন পথ বের করার কথা চিন্তা করেই। তবে শুধু বন্দর হবে জানলে সংশ্লিষ্ট দেশকে এই প্রকল্পে রাজি করানো মুশকিল হতে পারে। সে কথা মাথায় রেখেই বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য সংযোগকারী সড়ক ও রেললাইনও তৈরি করার কথা পরিকাঠামো উন্নয়নের মোড়কে রাখা হয়েছে। আর এসব প্রস্তাবে সজ্জিত হওয়ার কারণেই প্রকল্পের বেল্ট, অর্থাৎ নৌ-রেশমপথ, যা কিনা পূর্ব চীন ছুঁয়ে মালাক্কা প্রণালি হয়ে, বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর হয়ে পারস্য উপসাগর ছুঁয়েছে, তাকে এই পরিকল্পনা রূপায়ণেরই হাতিয়ার বলে মনে করা হচ্ছে।

ওবরের মানচিত্রে এটা পরিষ্কার যে নৌ-রেশমপথের ভিত্তিই কার্যত ধরে রেখেছে চীনের তৈরি করা দক্ষিণ পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে গদর বন্দর, মিয়ানমারের কায়ুনপুতে গভীর সমুদ্রবন্দর আর শ্রীলঙ্কার হামবানতোতা বন্দর। এই তিন বন্দরের কার্যকারিতা বিচার করলেই তা স্পষ্ট হবে।

পশ্চিম চীনের কাশগড় থেকে বেলুচিস্তানের গদর বন্দর পর্যন্ত চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর তৈরি করা হচ্ছে। অর্থাৎ, অদূর ভবিষ্যতে পশ্চিম এশিয়া থেকে তেল গদর বন্দরে এনে সেখান থেকে করিডর দিয়ে পশ্চিম চীনে নিয়ে যাওয়ার রাস্তাও তৈরি করছে। অন্যভাবে দেখলে দক্ষিণ চীন সাগরপথ ব্যবহার না করেই চীন তেল আমদানির রাস্তা তৈরি করছে গদর বন্দরের মাধ্যমে।

একইভাবে চীনা সহায়তায় মিয়ানমারের কায়ুনপুতে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠছে, সেটা চলতি বছরের নভেম্বর মাসে চালু হলে পশ্চিম এশিয়া থেকে কেনা গ্যাস আর তেল চীনে নিয়ে যাওয়ার আরেক প্রবেশদ্বার খুলে যাবে। এ ছাড়া আরাকান উপকূলের গ্যাস চীনের কুনমিং অবধি নিয়ে যাওয়ার জন্য বন্দর থেকে পাইপলাইন বসে গিয়েছে।

তাই বলে এটা ভাবা ভুল যে দক্ষিণ চীন সাগর কবজা করার পরিকল্পনা থেকে বেইজিং সরে এসেছে।ওবর প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২০১৪ সালে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে পাল্লা দিতে মালাক্কার সরকারি সংস্থা কাজ ডেভেলপমেন্ট (KAJ development) আর চীনা বিদ্যুৎ সংস্থা পাওয়ার চীন ইন্টারন্যাশনাল মালাক্কার উপকূলের অদূরে পুলাউমেলাকাতে গভীর সমুদ্রবন্দর করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই বন্দর তৈরি হলে দক্ষিণ চীন সাগরের মূল প্রবেশপথই বেইজিংয়ের আজ্ঞাবহ হবে।

আবার ভারত মহাসাগরে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতে ১৪০ কোটি ডলারের চীনা ঋণে শ্রীলঙ্কার হামবানতোতা বন্দর তৈরি করা হচ্ছে। এই বন্দর চালু হয়ে গেলে ভারত মহাসাগরতীরবর্তী দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এবং পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোয় আরও বেশি করে চীনা পণ্যের বাজার খুলে যাবে। ফলে সব মিলিয়ে ওবরকে ভারত মহাসাগরে বেইজিংয়ের রাজ করার প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

পর্দা উঠছে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির দুই প্রধান শক্তি হতে চলেছে নয়াদিল্লি আর বেইজিং এবং দুই দেশের পাঞ্জা লড়ার ক্ষেত্রই হবে ভারত মহাসাগর। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা আর মালয়েশিয়াও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। ফলে আগামী দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক আর্থ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে যে ভারত মহাসাগরের ঢেউ আন্দোলিত হবে, তা এখনই বলা যায়।বিশেষজ্ঞরা একবিংশ শতকের বিশ্বরাজনীতির নিয়ন্তারূপে ভারত মহাসাগরকেই চিহ্নিত করেছেন। সেই মহাকায় চিত্রনাট্যেরই হয়তো পর্দা উঠতে শুরু করেছে।

617 ভিউ

Posted ৩:৫৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com