কক্সবাংলা ডটকম(২৯ মে) :: আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই ভারতেও প্রাণীর শরীরে করোনা প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিনের ‘প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ বা পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়ে যাবে বলে আজ দাবি করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ দিন কেন্দ্র জানিয়েছে, ৩০টি দল এই মুহূর্তে করোনার প্রতিষেধক বানানোর দৌড়ে রয়েছে। যার মধ্যে কুড়িটি দল অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। তবে সব পরীক্ষা শেষ করে বাণিজ্যিক ভাবে ওই প্রতিষেধক বাজারে আসতে এখনও বছরখানেকের বেশি সময় লাগবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। বাজারে এলে প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মী, তারপরে বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাঁরা বিপদসীমায় রয়েছেন তাঁদের ওই প্রতিষেধক প্রথমে দেওয়া হবে। তার পরে বাকিদের।
ইতিমধ্যেই চিন, আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো দেশে মানবদেহে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও ভারত ওই প্রতিষেধক তৈরির লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই বলে আজ দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য বিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টা কে বিজয় রাঘবন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সাধারণত প্রতিষেধক বানাতে দশ-বারো বছর সময় লাগে। আমরা তা কমিয়ে এক বছরের মধ্যে করার চেষ্টা করছি।’’ তাঁর মতে, একটি প্রতিষেধক আবিষ্কারের পরে তা উন্নত করার কাজ চালু থাকে। সুতরাং যারা পিছিয়ে রয়েছে তাদের সামনেও সুযোগ রয়েছে।
ভারতীয় বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ভাবে প্রতিষেধক তৈরির কাজ করছেন বলে দাবি করেন রাঘবন। কোনও দল সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে আবার কোনও দল বিদেশি গবেষণাগারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। রাঘবনের মতে, একাধিক পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রতিষেধক বানানোর কাজ চলছে। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। ওই সময়ের মধ্যে ভারতে আসা ভাইরাসের চরিত্র পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি? রাঘবন বলেন, ‘‘জিনগত পরিবর্তন একাধিক বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। এখনও পর্যন্ত ভাইরাসের মূল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একই রয়েছে। বিশেষ কোনও পরিবর্তন হয়নি।’’
কোভিড-১৯ পরীক্ষা কিটের ক্ষেত্রে প্রশ্নে ভারত আগামী এক মাসের মধ্যে স্বনির্ভর হবে বলে আজ দাবি করেছেন নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বি কে পল। তিনি জানান, ‘‘জুলাইয়ের মধ্যে ভারতে প্রতি দিন পাঁচ লক্ষ করে পরীক্ষা কিট তৈরি হবে। সে ক্ষেত্রে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করতে পারবে ভারত।’’ আজ প্যারাসিটামল ওষুধের রফতানি শুরু করার প্রশ্নে সবুজ সঙ্কেত দেয় কেন্দ্র। দেশীয় চাহিদার কথা মাথায় রেখে যা এত দিন বন্ধ ছিল।
সেই ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে করো না ভাইরাসের প্রকোপ। মে মাস প্রায় শেষ হতে চললেও থামার কোন লক্ষন নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনো সংক্রমণের হার বাড়ছে চড়চড় করে। প্রতিষেধক কবে তৈরি হবে সে দিকেই তাকিয়ে আছে বিশ্ববাসী।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রতিষেধক আসাটাই শেষ কথা নয়। ভ্যাক্সিন তৈরি হলেও দশকের পর দশক বিশ্বে মানুষের মধ্যে থেকে যেতে পারে করোনাভাইরাস। এটাই নাকি মহামারীর নিয়ম। বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের লোককে বলে থাকেন এনডেমিক। এরকম কিছু রোগের উদাহরণ হল হাম, এইচআইভি, চিকেন পক্স।
ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী এক্সপার্টরা বলছেন, অদূর ভবিষ্যতেও করোনা প্রকপের শেষ দেখা যাচ্ছে না।
তবে হ্যাঁ ভবিষ্যতে পরিস্থিতি হয়তো এতটা খারাপ থাকবে না। এই ভাইরাসের শক্তি ক্ষয় হবে। মানুষও এই ভাইরাসের সঙ্গে নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে মানিয়ে নেবে। বর্তমানে পৃথিবীতে এরকম অনেক করোনাভাইরাস এন্ডেমিক হিসেবে থেকে গিয়েছে, সেগুলো অনেক সময় সাধারণ ঠান্ডা লাগার কারণ তৈরি করে। এরকম চারটি করোনাভাইরাস আছে বলে জানিয়েছেন, পঞ্চম হতে চলেছে এই কোভিড ১৯।
অন্যদিকে, আমেরিকান বায়োটেকনোলজি সংস্থা মোদারনা ইনক দাবি করেছে, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রথম পরীক্ষা সফল হয়েছে। বলা হয়েছে, ভ্যাকসিন দিয়ে শরীরে অ্যান্টিবডি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই অ্যান্টিবডিগুলি ভাইরাসের আক্রমণকে অনেক দুর্বল করে তোলে। প্রথম মানব পরীক্ষার সাফল্যের পরে এখন দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে ওই সংস্থা।
জানানো হয়েছে, প্রথম বার এই হিউম্যান ট্রায়াল অল্প সংখ্যক লোকের ওপর চালানো হয়েছিল। কিন্তু এবার পরিধি বাড়ানো হবে।
Posted ২:১৮ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৯ মে ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta