কক্সবাংলা ডটকম(২০ এপ্রিল) :: ১৯৭২ সালের পর প্রথমবারের মতো ২০২৫ সালে মানুষ আবার চাঁদে যাবে। ১৬৪-ফুট লম্বা স্টারশিপ রকেটটি ক্রু এবং কার্গো বহন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব হোক কিংবা চাঁদে বসবাসের পরিবেশ, বহু বছর ধরেই নিরন্তর খোঁজ চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
কয়েকবছর আগে পৃথিবীর মানুষ চাঁদে বসবাসের জমিও কিনতে শুরু করেছিলেন। আর ইতিমধ্য়েই ইলন মাস্ক চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর স্বপ্ন দেখেছেন, যা বাস্তবে রূপ দিতে তিনি নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে মাস্কের কোম্পানি SpaceX একটি যুগান্তরকারী সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত। তিনি বিশ্বের বৃহত্তম রকেট স্টারশিপ লঞ্চ করতে চলেছেন। এই স্টারশিপ রকেট মহাকাশে ভ্রমণকারী অন্য যে কোনও যানের চেয়ে বেশি শক্তিশালী বলে মনে করা হচ্ছে।
পৃথিবীতে তৈরি হওয়া এ যাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট ‘স্টারশিপ’ গত সোমবার তার প্রথম মনুষ্যবিহীন যাত্রা শুরু করতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করতে বাধ্য হয়।
স্পেসএক্স জানিয়েছে, আজ ২০ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মেক্সিকো উপসাগরের তীরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বোকা চিকা থেকে উৎক্ষেপণটি লঞ্চ করা হবে। এটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
স্টারশিপটির ওপরের অংশটি পূর্ব দিকে যাবে এবং পৃথিবীর প্রায় পুরো চারপাশ জুড়ে একবার প্রদক্ষিণ করে সাগরে নেমে আসবে।
প্রায় ১২০ মিটার বা ৪০০ ফিট উঁচু এই বিশালকায় রকেটটি তৈরি করেছে মার্কিন উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের স্পেসএক্স কোম্পানি।
মানুষের তৈরি সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী এ রকেট উৎক্ষেপণের সময় যে উর্ধমুখী চাপ বা ‘থ্রাস্ট’ তৈরি হবে, তার পরিমাণ এ পর্যন্ত যত রকেট তৈরি হয়েছে – তার প্রায় দ্বিগুণ।
এক টুইট বার্তায় ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এটি আবার উৎক্ষেপণের চেষ্টা করা হবে।
ইলন মাস্ক চান মঙ্গলগ্রহে একসময় মানুষের একটি ‘শহর’ গড়ে উঠবে।
স্টারশিপে করে মঙ্গলগ্রহে যেতে ৯ মাস লাগবে-ফিরে আসতেও লাগবে ৯ মাস। একারণে এই রকেটে এমনভাবে কেবিন সংযুক্ত হবে যাতে প্রায় ১০০ লোক যেতে পারবে।
অবশ্য চাঁদে যাবার জন্য নাসার আর্টেমিস কর্মসূচির জন্য যে রকেট তৈরি করবে স্পেসএক্স – তা হবে কিছুটা ভিন্ন ধরনের।
২০১৯ থেকে শুরু করে গত কয়েক বছরে স্পেসএক্স বেশ কয়েকটি প্রোটোটাইপ পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি মাটিতে নেমে আসার সময় বিস্ফোরণ ঘটে ধ্বংস হয়।
তবে ২০২১ সালে স্টারশিপ এস এন ওয়ান ফাইভ সফলভাবে উৎক্ষেপণ এবং ‘সফট ল্যান্ডিং’ খাড়া অবস্থায় নিরাপদে অবতরণ – এই দুটিই করতে সক্ষম হয়।
এর পর তাদের রকেটের নিচের দিকের ৩৩টি ইঞ্জিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ একটি টেস্ট ফ্লাইটের অনুমতি দেয় – যা সোমবার হবার কথা ছিল।
তবে এটি স্থগিত হলেও আজকের মধ্যেই তা আবার চেষ্টা করা হবে বলে ইলন মাস্ক আশ্বাস দিচ্ছেন।
এখন এটাই দেখার যে সঠিক সময়ে এই বিরাট রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হয় কি না।
স্টারশিপ রকেট কতটা স্পেশাল?
মাস্ক বলেছেন যে, “আমরা প্রত্যাশা কম রাখতে চাই। কারণ, এই উৎক্ষেপণ সফল নাও হতে পারে। এই উৎক্ষেপণের সময় কোনও নভশ্চর তাতে উপস্থিত থাকবেন না।” তবে আমেরিকার মহাকাশ সংস্থা নাসা ২০২৫ সালে মানুষকে চাঁদে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্টারশিপ বেছে নিয়েছে। এই মিশনটিকে বলা হচ্ছে আর্টেমিস ৩। অর্থাৎ ১৯৭২ সালের পর প্রথমবারের মতো ২০২৫ সালে মানুষ আবার চাঁদে যাবে। ১৬৪-ফুট লম্বা স্টারশিপ রকেটটি ক্রু এবং কার্গো বহন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
স্টারশিপ রকেটটি কীভাবে কাজ করবে?
স্টারশিপ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রকেট। এর উচ্চতা ৩৯৪ ফুট। ব্যাস ২৯.৫ ফুট। এই রকেট দুটি ভাগে বিভক্ত। উপরের অংশকে বলা হয় স্টারশিপ। এটি যাত্রীদের মহাকাশে মঙ্গলগ্রহে নিয়ে যাবে। এর ভিতরে ১২০০ টন জ্বালানি রয়েছে। এই রকেটটি এতটাই শক্তিশালী যে এটি মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে পৃথিবীর এক কোণ থেকে অন্য কোণে পৌঁছে যাবে। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ৩০ মিনিট বা তার কিছু বেশি সময়ে সম্পন্ন হয়। এ তো গেল প্রথম অংশটি, এর দ্বিতীয় অংশ সুপার হেভি বুস্টার। এটি একটি ২২৬ ফুট উঁচু রকেট।
যা পুনঃব্যবহারযোগ্য। অর্থাৎ এটি স্টারশিপকে একটি উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং ফিরে আসবে। এর ভিতরে ৩৪০০ টন জ্বালানি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে স্টারশিপ এবং বুস্টার রকেট উভয়ই একসঙ্গে উড়বে না। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে, সুপার হেভি বুস্টার লঞ্চের ৩ মিনিট পর স্টারশিপ থেকে আলাদা হয়ে মেক্সিকো উপসাগরে পড়ে যাবে। স্টারশিপের নিজস্ব ৬টি ইঞ্জিন রয়েছে এবং এটি ১৫০ মাইল পর্যন্ত যাবে।
Posted ২:৫১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta