রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-আমেরিকার অস্থিরতার নেপথ্যে

শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২০
232 ভিউ
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-আমেরিকার অস্থিরতার নেপথ্যে

কক্সবাংলা ডটকম(৩০ জানুয়ারি) :: ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান এবং ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকার মধ্যকার ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব সম্প্রতি চরম উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত ৩রা জানুয়ারি বাগদাদ বিমানবন্দরে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শীর্ষস্থানীয় ইরানি কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি গুপ্ত হত্যার শিকার হলে সর্বশেষ প্রেক্ষাপটের সূত্রপাত হয়। ইরান মার্কিন সামরিক উত্তাপের এই রেশ ধরে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য এই মুহূর্তে বিপর্যয়কর সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। ইতিমধ্যে আক্রমণ প্রতি আক্রমণের বিভিন্ন ঘটনা আঞ্চলিক পর্যায়ে বৃহত্ যুদ্ধের শঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।

উল্লেখ্য, মার্কিন সন্ত্রাসী হামলায় লে. জে. কাসেম সোলাইমানির নিহত হওয়ার ঘটনাটি ইরানের জন্য জন্য গুরুতর আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জবাবে ইরাকে অবস্থিত দুটি মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। সমসাময়িক বিশ্ব ইতিহাসে মার্কিন সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে সরাসরি আঘাত হানার এই ইরানি পদক্ষেপ সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা বৃদ্ধি করেছে।

একই সঙ্গে এই অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্যকে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। ঘটনার বিমূঢ়তায় সমুগ্র মধ্যপ্রাচ্য, তত্সংলগ্ন বিভিন্ন অঞ্চল একই সঙ্গে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো চূড়ান্ত যুদ্ধের শঙ্কায় বিভিন্ন মত্রার সতর্কতা অবলম্বন করছেন। বিশেষ করে মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর আমেরিকা, ইসরায়েল, ইরান, লেবানন ও সিরিয়ার সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে পারস্য উপসাগর ও ওমান সাগরের আকাশসীমা বরাবর বিমান চলাচলে দেখা দিয়েছে একধরনের স্থবিরতা। এ পর্যায়ে ইরানের প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা উত্তর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে ভিন্ন মাত্রার সমীকরণ। এই ধারাবাহিকতায় সবার মধ্যেই এ রকম ধারণা দৃঢ় হচ্ছে যে তাহলে কি বিস্তৃত যুদ্ধের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য?

ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে—১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লব দেশটির সঙ্গে আমেরিকার দ্বিপক্ষীয় দ্বন্দ্বের সূচনা করে। ঐ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তত্কালীন মার্কিন মিত্র রেজা শাহ ও তার রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা উত্খাত করে ইরানের ক্ষমতা গ্রহণ করেন আজকের বিপ্লবী সরকার। অন্যদিকে ইরানের অভ্যন্তরীণ এই বাস্তবতা মেনে নেওয়ার অনীহা থেকেই আমেরিকা দেশটির সঙ্গে বিদ্বেষমূলক তত্পরতা শুরু করে। সেই থেকে আজ অবধি আমেরিকা ও তার পশ্চিমা মিত্ররা ইরানকে কোণঠাসা করে রাখতে সচেষ্ট থাকেন। এক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন নীতির অগ্রাধিকার প্রকল্প ইসরায়েলের নিরাপত্তা-ঝুঁকি বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কমে আসে। বিপরীতে একপেশে মার্কিন নীতির সামগ্রিক প্রতিক্রিয়ায় ক্রমশ দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পরে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্ন। মার্কিন কৌশলের সূক্ষ্ম প্রভাবে ফিলিস্তিনকেন্দ্রিক আরব ঐক্য প্রায় ভেঙে পড়ে। এতত্সত্ত্বেও ইরান সীমিত শক্তি নিয়ে মার্কিন কর্মকাণ্ডের বিপরীতে যতদূর সম্ভব প্রতিরোধ গড়ে তুলে। সব ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে দেশটি ফিলিস্তিনকেন্দ্রিক প্রতিরোধ ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় শক্তিতে পরিণত হয়। ইরানের প্রত্যক্ষ মদদে আরো শক্তিশালী হয় লেবানন, সিরিয়া। এছাড়া ইরাক, ইয়েমেন, লেবাননে ক্রিয়াশীল মিলিশিয়া গ্রুপগুলো তেহরানের সমর্থনে ক্রমশ শক্তিশালী হয়।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের কৌশলগত সক্ষমতা অনেকাংশে বেড়ে যায়। বলা চলে আমেরিকার সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয় ইরান। দেশটির এই অর্জনের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তাদের বর্ধনশীল পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প। যদিও আমেরিকা ও তার পশ্চিমা মিত্রদের নানা ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে পেট্রোলিয়ামে সমৃদ্ধ দেশটির জাতীয় অর্থনীতিকে বিভিন্ন সময় সংকট অতিক্রম করতে হয়েছে। এতত্সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরান নিজের প্রধান মিত্র রাশিয়ার প্রচেষ্টায় প্রায় সব সেক্টরেই কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি সাধন করে। এক্ষেত্রে সাধারণভাবে দৃষ্টিগ্রাহ্য হয় দেশটির সামরিক শক্তির উত্থান। অগ্রসরমাণ ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ইরানের যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধযানগুলো প্রতিপক্ষের সমীহ আদায় করে নেয়। এক্ষেত্রে ইরানের মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা আমেরিকা ও ইসরায়েলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে।

ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে নির্মিত সাহাব-৩, গাদর-১১০, আশুরা, সেজ্জিল-২ এর মতো ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সহসাই পাড়ি দিতে পারে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার কিমি। এর সঙ্গে আছে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এ ছাড়াও সম্প্রতি ইরান আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানার হুমকি দিয়েছেন। এই হুমকি যুদ্ধ সমীকরণের পথে সব সেনানায়কের জন্য অতিরিক্ত চিন্তার কারণ। একই সঙ্গে দেশটির পারমাণবিক প্রকল্পের ভিন্নমুখী কর্মকাণ্ড ঘিরে যে অনিশ্চয়তাকে আরো সন্দিহান করে তোলে। হতে পারে এটি ইরানের একধরনের মনস্তাত্ত্বিক লড়াই। কিন্তু আমেরিকা ও ইসরায়েল এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত নয়। যে কারণে ইরান নিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর গতি সক্ষমতা আড়াল করে রেখেছে কি না, তা নিয়ে এখন ভাবতে হবে। আর এমনটি সত্য হলে যে কোনো যুদ্ধের ময়দানে আমেরিকাকে ইরান বিষয়ে আরেকবার ভাবতেই হবে। সম্ভবত এই প্রেক্ষিতেই গত কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথম মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মারাত্মক ঝুঁকির মুখেই পড়েছে সেটি খুবই পরিষ্কার। আর স্নায়ুযুদ্ধ উত্তরকালে মধ্যপ্রাচ্যের এই প্রেক্ষাপট সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম।

এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে মার্কিন তোড়জোড় কিছুটা কাজে আসে ২০১৫ সালে। অর্থাত্ ২০১৫ সালে সম্পাদিত আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তির আওতায় তেহরানের পারমাণবিক উচ্চাভিলাষ কিছুটা হলেও মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন্তু আমেরিকা গত বছর এই চুক্তি থেকে সরে এলে দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘ বাগ্যুদ্ধ নতুন আঙ্গিকে বিস্তৃত হয়। যদিও সবারই ধারণা মার্কিন প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ইরান নিজের পারমাণবিক কার্যক্রমকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। এক্ষেত্রে দেশটির ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধায়ন-মাত্রা সামরিক অস্ত্র তৈরির মতো উপাদানে পরিণত হওয়ার পর্যায়ে আছে। আইএইএর গাইডলাইন মেনে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কার্যক্রমের এই বাস্তবতাও মার্কিনিদের জন্য স্থায়ী হুমকি বলে বিবেচিত হয়। এদিকে অতি সম্প্রতি ইরান পরমাণু প্রকল্পসংক্রান্ত আরো মার্কিন চাপ এলে এনপিটি থেকে বেরিয়ে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছে।

ইরানের এই হুমকি আমদের উত্তর কোরিয়ার কথাই মনে করিয়ে দেয়। দেশটি ১৯৯৪ সালে এরকম মার্কিন চাপের মুখেই পরমাণু অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তি এনপিটি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিল। এরপর অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে আমেরিকাকে ভড়কে দিতে সক্ষম হয়েছিল। একই সঙ্গে কোরীয় উপদ্বীপের সমীকরণ গিয়েছিল পালটে।

ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম ও দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত মার্কিন অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। দেশটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফোরামে এ ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। এক্ষেত্রে আমেরিকার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করা। এর আগেও আমেরিকা বহুবার ইরানে সামরিক হামলাকে তাদের প্রথম বিবেচনা হিসেবে প্রকাশ্যেই বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু ইরান কোনোভাবেই আমেরিকার হুমকির কাছে মাথা নত করেনি। উলটো ইরান সম্প্রতি পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগরে দুই বিশ্বশক্তি রাশিয়া ও চীনকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক নৌমহড়া সম্পন্ন করেছে। ঐ নৌমহড়ার মধ্য দিয়ে উল্লিখিত দুই জলরাশিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপতত্পরতা রোধে ইরান কৌশলগতভাবে এগিয়ে যায়। যে কারণে আমেরিকা বর্তমান প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করতে ইরানের শীর্ষ কমান্ডারের বিদেশ সফর বেছে নেয়। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ইরানের কোনো কৌশলগত দুর্বলতা আমেরিকার হাতের নাগালে আসে বলে ধরে যায়। এক্ষেত্রে ইরানের গোয়েন্দা ব্যর্থতাই বেশি করে দৃষ্টিগ্রাহ্য হচ্ছে।

এরকম পরিস্থিতির সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের উত্কণ্ঠা বাড়ছেই। অন্যদিকে সমীকরণ ও বাস্তবতা বিবেচনায় নিলে ইরানকে ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনিদের যুদ্ধের হুমকিকে এবার আমলে নিতে হয়। কিন্তু ইরানের পালটা প্রস্তুতির কথা আমেরিকা ও তার মিত্রদের ভাবতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমেরিকা আঞ্চলিক দেশগুলোর সমর্থন পেলেও ইরান, সিরিয়া ও লেবাননকে নিয়ে যে শক্তিশালী অক্ষের সৃষ্টি করেছে তা যুদ্ধসমীকরণ একেবারেই পালটে দিতে সক্ষম। সিরিয়ার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য যদি আমরা বিবেচনায় নিই, তাহলে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয় উঠে। গত সপ্তাহে সিরিয়ার এই কূটনীতিক কাসেম সোলাইমানি হত্যা উত্তর প্রেক্ষাপট এক বিশেষ সাক্ষাত্কারে খর্ব স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, এখনো আমাদের কাছে প্রধান ইস্যু হচ্ছে ফিলিস্তিন। দীর্ঘ সময় পর যুদ্ধবিধস্ত সিরিয়ার পক্ষ থেকে এরকম বক্তব্য আরব চেতনার মৌলিক বৈশিষ্ট্যকেই সামনে আনে। এই পরিপ্রক্ষিতে অস্থির মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, নাকি যুদ্ধ—তা নিয়ে আছে চরম অনিশ্চয়তা।

n লেখক : বিশ্লেষক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা

232 ভিউ

Posted ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com