কক্সবাংলা ডটকম(১৮ জানুয়ারী) :: বৈরী রাষ্ট্রগুলোর ওপর নজরদারির উদ্দেশ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা বিষয়ক বড় একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। নতুন প্রজন্মের স্পেসভিত্তিক সেন্সরের ওপর ভিত্তি করে এ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো পরিচালিত হবে।
পেন্টাগনে ট্রাম্প প্রশাসনের দীর্ঘ বিলম্বিত একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন, যাতে মার্কিন সেন্সরের নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারসেপ্টরের ডিজাইন সম্প্রারণের আহ্বান জানানো হয়। এর ফলে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মতো বৈরী দেশগুলো থেকে আসা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো চিহ্নিত করে ভূপাতিত করা যাবে।
মার্কিন প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, হুমকির পরিবেশের ক্ষেত্রে আমরা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। শত্রুদের ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবেলায় এখন আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা আরো দ্রুত ও বিস্তর পরিসরে ব্যবস্থা নিতে সক্ষম। শত্রুদের এসব ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের সহযোগী, অংশীদার এবং দেশের বাইরে মার্কিন বাহিনীকে ভীতি প্রদর্শনে সক্ষম ছিল। ট্রাম্প তার ভাষণে তার কমান্ডে ‘মহাকাশ বাহিনী’ গঠনের বিষয়টিও উপস্থাপন করেন।
পেন্টাগনে সাংবাদিকদের দেয়া পর্যালোচনা নোটে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সংস্থা (এমডিএ) বিভিন্ন দেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এদের মধ্যে শীর্ষ হচ্ছে চীন ও রাশিয়া। কেননা তাদের তৈরি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শব্দের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি গতিসম্পন্ন এবং অস্ত্রগুলো তাদের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে। এগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, তা প্রতিরোধ করা খুবই কঠিন। এর ফলে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্তের ক্ষেত্রে পেন্টাগন তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর বিভিন্ন উপায় নিয়ে ভাবছে। প্রাথমিকভাবে মহাকাশে মোতায়েন থাকা সেন্সর দিয়েই তা করার চেষ্টা হচ্ছে।
প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা জানান, প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ পর্যালোচনায় স্পেস খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট। এটি সেই জায়গা, আমরা যেখানে বিনিয়োগ করতে চাই। আর ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার পরবর্তী ধাপে স্পেসই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এ পর্যালোচনায় স্পেসভিত্তিক ইন্টারসেপ্টর ও লেজারের ব্যাপারে আরো গবেষণার কথা বলা হয়, তবে নির্দিষ্ট কোনো কিছুর সরাসরি উৎপাদন বা স্থাপনের বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি।
পর্যালোচনা উদ্বোধনের আগে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানান, এটি এমন একটি ক্ষেত্র যা নিয়ে আমরা গবেষণা করছি কিন্তু এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি বা কোথাও এটি প্রয়োগ করিনি। তারা নিশ্চিত করেন, রাশিয়া ও চীনকে লক্ষ্য করে এটি বিস্তৃত করা হচ্ছে না। তবে এসব পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোর হুমকির ব্যাপারে সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়ে নজর রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের অনেক বৃহৎ ও অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র নিজ অঞ্চলে তাদের এসব অস্ত্র প্রতিরোধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মার্কিন পরিকল্পনার নিন্দা রাশিয়ার
শত্রুর ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র চিহ্নিত করতে ও তা ধ্বংসে মহাকাশেই অস্ত্র মোতায়েনের যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে রাশিয়া। দেশটি মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থান মহাকাশে বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু করবে। আবার দেখা যাবে স্নায়ুযুদ্ধকালীন ‘স্টার ওয়ার্সের’ মতো কর্মসূচি। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে রাশিয়া বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আবার বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখা।.
অবশ্য ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিয়ে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের এই বিরোধী অবস্থান নতুন নয়। মহাকাশে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন পরিকল্পনার আগেই তাদের মধ্যে সমঝোতার ঘাটতি দেখা গিয়েছে। মস্কো মেনে চলছে না এই যুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৭ সালে স্বাক্ষরিত ‘ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি’ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা জানালেও, তারতার বিরুদ্ধে সমালোচনা আছে নতুন করে পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত বৃদ্ধির পরিকল্পনা করার।
ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) নতুন একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার তথ্য প্রকাশ করেছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মহাকাশে সেন্সর বসানো হবে শত্রুর উৎক্ষেপিত ক্ষেপণাস্ত্র চিহ্নিত করার জন্য। সে ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার জন্য মহাকাশেই স্থাপন করা হবে অস্ত্র। মহাকাশে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করত ইরান, রাশিয়া, চীন এবং উত্তর কোরিয়ার সক্ষমতার কথা উল্লেখ করেছে মার্কিন প্রশাসন। এসব দেশের সক্ষমতার সাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার বলে মনে করে তারা।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনাকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে। তারা মহাকাশে অস্ত্র মোতায়েনের বিষয়ে আবারও ভেবে দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত। পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবস্থাপনার প্রকৃতি নির্ধারণে মস্কো ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায়।
তাদের ভাষ্য, ‘নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত মহাকাশে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের দ্বার উন্মুক্ত করে দিতে যাচ্ছে। যার পরিণতিতে স্বাভাবিকভাবেই মহাকাশে শুরু হবে অস্ত্র প্রতিযোগিতা। আর এটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার ওপর ঋণাত্মক প্রভাব ফেলবে। আমরা মার্কিন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যেন তারা বিষয়টি নিয়ে আবারও ভেবে দেখে এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন পরিকল্পনাটি বাতিল করে। তাদের পরিকল্পনাটি প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের সময়কার স্টার ওয়ার্স কর্মসূচিরই অত্যাধুনিক রূপ।’