কক্সবাংলা ডটকম :: মহাকাশ পরিবহণে বড় সাফল্য পেল ‘ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন’ (ইসরো)।
রবিবার সকাল ৯টায় অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন স্পেস সেন্টার থেকে ৩৬টি কৃত্রিম উপগ্রহ নিয়ে অন্তরীক্ষে পাড়ি দিল ভারতের সবচেয়ে বড় ‘লঞ্চ ভেহিকেল মার্ক- ৩’ (এলভিএম ৩) রকেট।
এই ধরনের রকেটকে আগে ‘জিয়োসিংক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল এমকে ৩’ নামে ডাকা হত। চন্দ্রায়ন ২ অভিযানের সময়ও এই রকেট ব্যবহার করা হয়েছিল।
গতবছর অক্টোবরে ৩৬টি উপগ্রহ নিয়ে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল এলএমভি থ্রি। আবারও ৩৬টি উপগ্রহ মহাকাশে পাঠাল ইসরো। আবারও এক নতুন কীর্তি গড়ল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
রবিবার সকাল ৯টায় এলভিএম-থ্রি রকেট অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্রে বিস্ফোরণের ঠিক ১৯ মিনিট পরে উড়ে গেল মহাকাশে।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার সবথেকে ভারী ভেহিকেল। ৩৬টি ওয়ানওয়েব ইন্টারনেট স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে চলেছে৷ এই এলএমভি থ্রি রকেট ইন্টারনেট নক্ষত্র স্থাপনের মিশনে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে যাত্রা করেছে। এই মিশনটি যুক্তরাজ্যের কোম্পানি দ্বারা গ্রহের চারপাশে ৬৪৮টি উপগ্রহের প্রথম নক্ষত্রপুঞ্জ সম্পূর্ণ করবে।
ইসরো জানিয়ছে, উপগ্রহগুলি ১২টি প্লেনে বিভক্ত এবং গ্রহের উপরে ১২০০ কিলোমিটার উচ্চতায় কাজ করার ক্ষমতাসম্পন্ন। এই প্রতিটি প্লেনকে আন্তঃবিমান সংঘর্ষ রোধ করার জন্য চার কিলোমিটার উচ্চতায় সেট করা হয়েছে। ওয়ানওয়েব নক্ষত্র হল গ্রহের চারপাশে উপগ্রহের একটি নেটওয়ার্ক যার লক্ষ্য সারা বিশ্বে ব্রডব্যান্ড সংযোগ প্রদান করা।
ব্রিটেনের কোম্পানি পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে কৃত্রিম উপগ্রহের একটি নক্ষত্রমণ্ডল বাস্তবায়ন করতে চলেছে। ভারতের ভারতী এন্টারপ্রাইজ ওয়ানওয়েবের প্রধান বিনিয়োগকারী এবং শেয়ারহোল্ডার হিসেবে কাজ করে। তার দ্বিতীয় মিশন উৎক্ষেপণ হল রবিবার। ৪৩.৫ মিটার লম্বা এবং ৬৪৩ টন ওজনবিশিষ্ট ভারতীয় রকেট এলভিএম থ্রি পাড়ি দিল মহাকাশে।
অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার রকেট বন্দরে দ্বিতীয় লঞ্চ প্যাড থেকে ৫৮০৫ কেজি ওজনের ৩৬টি জেন ওয়ান স্যাটেলাইট নিয়ে রকেটটি উৎক্ষেপণ করে। ইসরোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি হল তিন পর্যায়ের একটি রকেট। যার প্রথম ধাপে তরল জ্বালানি, দুটি স্ট্র্যাপ-অন মোটর কঠিন জ্বালানিতে চলবে। ইসরোর হেভি-লিফট রকেটের এএলইও-তে ১০ টন এবং জিও ট্রান্সফার অরবিটে চার টন বহন ক্ষমতা রয়েছে।
ইসরো আরও জানিয়েছে, এই রকেট মিশন কোডের নাম দেওয়া হয়েছে এলভিএম থ্রি-এম থ্রি বা ওয়ান ওয়েব ইন্ডিয়া-২ মিশন। ইসরো পরিচালনায় শ্রীহরিকোটা থেকে বিস্ফোরণের ১৯ মিনিট পরে স্যাটেলাইট পৃথকীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে ৩৬টি স্যাটেলাইট আলাদা হয়ে আর্থ লোয়ার অরবিটের উদ্দেশে পাড়ি দেয়।
#WATCH | Andhra Pradesh: The Indian Space Research Organisation (ISRO) launches India’s largest LVM3 rocket carrying 36 satellites from Sriharikota
(Source: ISRO) pic.twitter.com/jBC5bVvmTy
— ANI (@ANI) March 26, 2023
জানা যায়, ওয়ানওয়েব গ্রুপ অফ কম্পানিজ ইংল্যান্ডের একটি সংস্থা। যারা সরকারি এবং বাণিজ্যিক কাজে ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহ করে থাকে। ইসরোর বাণিজ্যিক শাখা নিউ স্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেডের সঙ্গে সেই সংস্থার একটি চুক্তি হয়। তাতে মোট ৭২টি উপগ্রহ অন্তরীক্ষে নিয়ে যাওয়ার বরাত পায় নিউ স্পেস। সেই চুক্তি অনুযায়ীই রবিবারের উৎক্ষেপণ। ২০২২-এর ২৩ অক্টোবর প্রথম দফায় ওয়ানওয়েবের ৩৬টি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছিল ইসরো।
৪৩.৫ মিটার লম্বা ৬৪৩ টন ওজনের এই রকেটটিকে শ্রীহরিকোটার দ্বিতীয় উৎক্ষেপণ কেন্দ্র (লঞ্চ প্যাড) থেকে আকাশে ছাড়া হয়। কৃত্রিম উপগ্রহ নির্ভর ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়াই লক্ষ্য ৩৬টি স্যাটেলাইটের। যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচের কক্ষপথ বা ‘লো আর্থ অরবিট’-য়ে প্রতিস্থাপিত হবে। ৩৬টি স্যাটেলাইটের মিলিত ওজন ৫৮০৫ কেজি। এর আগে পাঁচশোর বেশি কৃত্রিম উপগ্রহ অন্তরীক্ষে পাঠানোর বিরল রেকর্ড রয়েছে ইসরোর দখলে।
সাম্প্রতিক অতীতে একের পর এক সাফল্য পেতে দেখা গিয়েছে ইসরোকে। এদিকে ফের চন্দ্র অভিযানের পরিকল্পনা করেছে ইসরো। সব ঠিক থাকলে আগামী বছর জুন মাসে চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দেবে চন্দ্রযান-৩। এই বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন খোদ ইসরোর প্রধান ড. এস সোমনাথ। চন্দ্রযান-২ (Chadrayaan-2) অভিযান সফল না হলেও আশাহত হয়নি ইসরো। পরক্ষণে ফের চন্দ্রাভিযানের প্রস্তুতি শুরু করে দেয় ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। কথা ছিল ২০২০ সালেই চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দেবে চন্দ্রযান-৩। কিন্তু কোভিডের ধাক্কায় ব্যাহত হয় প্রস্তুতি। অবশেষে ইসরো প্রধান জানিয়ে দিয়েছেন ২০২৩ সালের জুন মাসে মহাকাশের উদ্দেশে পাড়ি দেবে চন্দ্রযান-৩।
Posted ১২:২৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta