মোসলেহ উদ্দিন,উখিয়া(২ জানুয়ারী) :: মিয়ানমার সেনা নির্যাতনে এদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা উখিয়ার ৮টি অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। তারা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দাতা সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত ত্রাণ সামগ্রী ভোগ করছে। উদ্বৃত ত্রাণ সামগ্রী খোলা বাজারে বিক্রি করছে। এমতাবস্থায় ক্যাম্প থেকে বেশ কিছু রোহিঙ্গা নাগরিক স্বপরিবারে পালিয়ে গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন।
তারা বলছে যে সব রোহিঙ্গা মিয়ানমারে স্বচ্ছল জীবন যাপন করেছে এরাই মূলতঃ ক্যাম্প ত্যাগ করে বিভিন্ন স্থানে বাসাবাড়ী ভাড়া নিয়ে স্থায়ী ভাবে থেকে যাওয়ার সুযোগ খোঁজছে। আবার অনেকের ছেলে/মেয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। তারা সেখান থেকে যাবতীয় কাগজপত্র তৈরী করে জাল ভিসার মাধ্যমে পরিবার পরিজনদের নিয়ে যাচ্ছে।
একাধিক রোহিঙ্গা তাদের অভিমত প্রকাশ করে বলেন, মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের যে প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পাদন হয়েছে তা দায়সাড়া গোছরের। ওই চুক্তিমতে, অনেকেই মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়া বিষয়টি প্রকাশ্যে না বললেও এ নিয়ে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
স্থানীয় এনজিও সংস্থা হেলপ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক এমএ আবুল কাশেম বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২৫শতাংশ পরিবার ধর্নাঢ্য ব্যক্তি। যাদের ছেলে/মেয়েরা মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, সৌদিআরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। বাকী ৭৫ শতাংশ পরিবারের মধ্যে ২০শতাংশ পরিবার স্বচ্ছল। যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে উন্নত জীবন যাপনের জন্য গোপনে দালালের মাধ্যমে ক্যাম্প ত্যাগ করছে। ৫৫ শতাংশ পরিবার হতদরিদ্র।
যারা মিয়ানমারের চাইতে এখানে ভালো রয়েছে বলে রোহিঙ্গারা স্বীকার করেছে। এসব রোহিঙ্গাদের দাবী তাদের বসতভিটা ফিরে যাওয়ার নিশ্চিয়তা ও স্বাধীন চলাফেরার সুযোগ নিশ্চিত করলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে।
তারা আরো জানান, কুতুপালং ক্যাম্প থেকে ইতিমধ্যে প্রায় শতাধিক বড় বড় পরিবার বিদেশে চলে গেছে। আরো কিছু পরিবার চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কুতুপালং আনরেজিষ্ট্রার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সেক্রেটারী মোহাম্মদ নুর (৩৪) জানান, গত ১মাসে ২শতাধিক রোহিঙ্গা নাগরিককে ক্যাম্পে দেখা যাচ্ছেনা।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে কুতুপালং ডি-১ ব্লকের মোঃ জুবাইর, মোঃ আলম, নুর মোহাম্মদ, আব্দুল লতিফ, মোঃ ইউছূপ, আবু তাহের, মোঃ জুবাইর, মোঃ আবু তাহের মালয়েশিয়া চলে গেছে। এছাড়া কুতুপালং ই-২ ব্লকের আতাউর রহমান, আলী জুহার সৌদি আরবে ছৈয়দ নুর, নুরুল আলম, কামাল উদ্দিন কাতার ও হোছন আহাম্মদ, আমেরিকা চলে গেছে।
তারা কিভাবে গেছে জানতে চাওয়া হলে ক্যাম্প সেক্রেটারী বলেন, প্রবাসে অবস্থানরত তাদের স্বজনেরা পাসপোর্ট ভিসা সহ যাবতীয় কাগজপত্র পাঠিয়েছে। গত ১৮ নভেম্বর সৌদি যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করতে গেলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে ৭জন রোহিঙ্গা নাগরিককে আইনশৃংখলা বাহিনী আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছে।
২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম পাঁচ লাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে জাল পার্সপোর্ট করতে গেলে রোহিঙ্গা নারী আরজু বেগম(২৪)সহ ২ রোহিঙ্গা নারীকে আটক করে পাঁচ লাইশ থানা পুলিশের নিকট সোপর্দ করে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মোঃ আজিজুল ইসলাম।
পাঁচ লাইশ থানার ওসি তদন্ত ওয়ালী উদ্দীন আকবরের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, আইনশৃংখলা বাহিনীর চোঁখ ফাঁকি দিয়ে সংঘবদ্ধ দালালের মাধ্যমে বিপূল টাকা ব্যয় করে রোহিঙ্গারা বিদেশে পাঁড়ি জমাচ্ছে।
১৯৯১সালে কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নাগরিক ডাক্তার জাফর আলম বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সাম্প্রতিক সম্পাদিত চুক্তির উপর নির্ভর করে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে নারাজ। তাই যাদের অঢেল টাকা পয়সা আছে তারা দালালের মাধ্যমে ভূয়া পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। যারা আর্থিক স্বচ্ছল, বিদেশ যাওয়ার মতো অঢেল টাকা পয়সা নেই তারা ক্যাম্প ছেড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গাদের ৫ হাজার একর জায়গার উপর একত্রিত করে কাটা তারের বেড়া দিয়ে নিরাপদ বেষ্টনীর মধ্যে রাখা কথা থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
তিনি বলেন, যে ভাবে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্রে চলে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে রোহিঙ্গা জনগোষ্টি। তখন আর প্রত্যাবাসন করেও কোন লাভ হবেনা।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের বলেন, ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে যাওয়া প্রতিরোধের ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের তল্লাশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর লোকজন যাত্রীবাহি গাড়ীতে তল্লাশী চালিয়ে যাত্রীদের নিকট আইডি কার্ড, নাম-পরিচয়, এমনকি চেয়ারম্যান-মেম্বারের নাম জানা আছে কিনা জানতে চাইছে। যারা বলতে পারছেনা তাদেরকে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
কক্সবাজারের
Posted ১২:০২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৩ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta