রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা শুরু : জাতির পিতার আলোকবর্তিকা নিয়েই এগোতে চাই – প্রধানমন্ত্রী

শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২০
217 ভিউ
মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা শুরু : জাতির পিতার আলোকবর্তিকা নিয়েই এগোতে চাই – প্রধানমন্ত্রী

কক্সবাংলা ডটকম(১০ জানুয়ারি) :: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বিজয়ের আলোকবর্তিকা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন সেই মশাল নিয়েই আমরা এগিয়ে চলতে চাই। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসাবে গড়তে চাই, এই বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে, সম্মানের সঙ্গে চলবে। আজকের দিনে সেটিই আমাদের প্রত্যয়।

শুক্রবার বিকেলে (১০ জানুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে পুরাতন বিমানবন্দরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

আজ জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিনটিকে মুজিববর্ষের আলোয় আলোকিত করে রাখতে রানওয়েতে এসে দাঁড়ায় সি-১৩০জে মডেলের একটি বিমান। বিমানের গেট খুলে দেয়ার পর আলোর প্রতীকী অবয়বে বিমান থেকে নেমে এলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতাকে ফিরে পেরে ‘জয় বাংলা, আমার দেশ তোমার দেশ বাংলাদেশ’ স্লোগানে বরণ করে নেন নব প্রজন্মের প্রতিনিধিরা। উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে জাতির পিতাকে সম্মান জানান।

ক্ষণগণনার দিনটিকে লেজার শো’র মাধ্যমে জাতির পিতার অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়। ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিকে বরণ করে নেওয়া হয়। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদর্শন করে জাতির পিতার প্রতি সম্মান ও সালাম প্রদর্শন করে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১০০টি কবুতর আকাশে অবমুক্ত করা হয়। জাতীয় পতাকা লাল-সবুজের রঙে আকাশে বেলুন ওড়ানো হয়।

ক্ষণগণনার মাহেন্দ্রক্ষণে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং একমাত্র ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের তিন সদস্য পাশাপাশি তিনটি আসনে বসেন। তবে জয় যেখানে বসেন তার পাশে দুইটি চেয়ার খালি ছিল।

প্রধানমন্ত্রী জাতির জীবনে জাতির পিতার আন্দোলন সংগ্রাম ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তিনি জাতির পিতার দূরদর্শী নেতৃত্বের বিভিন্ন তুলে ধরে বলেন, ‘যেদিন ১০ জানুয়ারি তিনি এখানে ফিরে আসেন। লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল। সেদিন মানুষ একদিকে তাদের আপনজন হারিয়েছিল, ঘরবাড়ি পোড়া, আহত অথবা নির্যাতিত, তারপরও সেই মহান নেতাকে ফিরে তাদের জীবনে যেন পূর্ণতা পেয়েছিলেন। হারাবার বেদনা তারা ভুলতে চেয়েছিলেন তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে ফিরে পাওয়ার মধ্য দিয়ে।’

‘কাজেই ১০ জানুয়ারি আামদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। যেদিন আমরা ফিরে পেলাম সেই মহান নেতাকে। যিনি তার সারাটা জীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এই বাংলার দুঃখী মানুষ তাদের কথা বলতে গিয়ে জীবনের সবথেকে মূল্যবান সময়গুলো কারাগারে কাটিয়েছেন। তার জীবনটা সম্পূর্ণ উৎসর্গ করেছিলেন এদেশের মানুষের জন্য। এদেশের মানুষ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, শিক্ষা পায়, চিকিৎসা পায়, উন্নত জীবন পায়; এটাই ছিল তার স্বপ্ন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা আমরা সবসময় চিন্তা করি, তাকে যখন গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। পাকিস্তানের সেই মিয়ানওয়ালি জেলখানা। সেখানে তাকে আটকে রাখে। গরমের সময় যেমন প্রচণ্ড গরম, শীতের সময় প্রচণ্ড শীত। তাকে কোন কাগজ দেয়া হয়নি, পড়াশোনার কোনো সুযোগ ছিল না। সর্বক্ষণে একটা ঘরে বন্দি করে রাখা হত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দীর্ঘ নয় মাস এই বন্দিখানায় তিনি কিভাবে ছিলেন। কী করে সময় কাটাতেন? কি চিন্তা করতেন?’

তাকে যখন বিচারের জন্য কোর্টে নিয়ে যাওয়া হত। আইয়ুব খান যে একটা আত্মজীবনী লিখেছে, তার ডায়েরিতে একথা স্পষ্ট লেখা আছে তিনি (বঙ্গবন্ধু) জানতেন যে বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। তিনি জানতেন যে, এদেশের মানুষ মুক্তি পাবে। তাই কখনোই তিনি দুঃচিন্তার মধ্যে ছিলেন না। তিনি সবসময় মাথা উঁচু করেই ছিলেন। শুধু যখনই তাকে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হত, তখন তিনি নাকি জয় বাংলা স্লোগান দিতেন।

বাংলাদেশের জনগণ এই ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়েই মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে অকাতরে জীবন দিয়ে গেছেন বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দুভার্গ্য পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী তাকে চেষ্টা করে হত্যা করতে পারেনি কিন্তু তাকে জীবন দিতে হয়েছিল বাংলার মাটিতে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে। কেবল তিনি যুদ্ধবিধস্ত দেশটাকে গড়ে তুলে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই হত্যাকাণ্ড শুধু সেখানেই না, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মুছে ফেলা হয়েছিল। জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আজকে সেই ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য দলিলে ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছে। এ ভাষণ শুধু আমাদের না আড়াই হাজার বছরের যত ভাষণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসাবে জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ সারাবিশ্বে ঐতিহ্যে স্থান করে নিয়েছে।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর রাষ্ট্র ক্ষমতার ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছিলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জন্য একটা অন্ধকার সময় ছিল। আজকে সেই অন্ধকার সময় কাটিয়ে আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি। জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব, সেটাই আমাদের প্রত্যয়।’

এ জন্য প্রধানমন্ত্রী বাংলার জনগণ, জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন আওয়ামী লীগ, সকল সহযোগী সংগঠনসহ শ্রেণি-পেশার জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। আজকে ২০২০ সাল জাতির পিতার প্রত্যাবর্তন দিবসে জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের ক্ষণগণনা আমরা আজকে থেকে শুরু করলাম। ২০২০ সালে যেদিন জাতির পিতা পাকিস্তানি বন্দিখানা থেকে তার আপন প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছিলেন। সেইদিন থেকে আমরা ক্ষণগণনা শুরু করছি। ১৭ মার্চ তার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব। সেই উদযাপন করার জন্যই আজকে এই অনুষ্ঠান। তিনি নেমেছিলেন যেভাবে তারি একটি অনুষ্ঠানমালা করার জন্য যে উদ্যোগটা নেওয়া হয়েছে।

এ লক্ষ্যে জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি ও জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি সদস্যবৃন্দ, সশস্ত্র বাহিনী, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী নৌবাহিনীসহ যারা এই আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অত্যন্ত চমৎকারভাবে আয়োজনটা যেন আমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, সেই ১০ জানুয়ারি যেভাবে তিনি (বঙ্গবন্ধু) নেমেছিলেন। আমরা তাকে পাইনি কিন্তু তিনি যে আলোকবর্তিতা জ্বালিয়ে দিয়ে গেছেন, স্বাধীনতার যে বীজমন্ত্র আমাদের শুনিয়েছিল, যে আলোর মশাল হাতে তুলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করবার। তারই একটি রেপ্লিকা হিসাবে তার আদলকে আমরা এই আলোর মধ্য দিয়েই ফুটিয়ে তুলেছি এবং সেইদিন যেভাবে ২১টি তোপধ্বনি দেওয়া হয়েছিল, যেভাবে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান ও সালাম দেওয়া হয়েছিল, তারই একটি অনুষ্ঠান আমরা এখানে করেছি।’

‘আমি সেইদিনটি হয়ত নিজে আসতে পারিনি এয়ারপোর্ট। কারণ আমার বাচ্চা খুব ছোট ছিল। কিন্তু আমার মনে পড়ে আমার মা, একটা রেডিও নিয়ে বসেছিলেন ধারাবিবরণী শুনছিলেন। আমরা তার সাথে সাথে ধারাবিবরণী শুনেছিলাম, আমার মনে পড়ে। তিনি কিন্তু বাংলার মাটিতে নেমে আমাদের কথা ভাবেননি, পরিবারের কথা ভাবেননি। তিনি চলে গিয়েছিলেন রেসকোর্স ময়দানে। তার মন ছিল জনগণের কাছে। তার প্রিয় মানুষগুলির কাছেই তিনি সর্বপ্রথম পৌঁছে যান, তারপরে আমাদের কাছে পৌঁছান।’

তিনি এদেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবেসেছেন। চেয়েছিলেন দেশের মানুষ সুন্দর জীবন পাবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

কবিগুরুর কবিতার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, “রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ’সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি’। তারই উত্তর (বঙ্গবন্ধু) দিয়েছিলেন এই ১০ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে। জাতির পিতা কবিগুরুকে বলেছিলেন, কবিগুরু দেখে যান, আপনার সাত কোটি মানুষ আজ মানুষ হয়েছে। তারা যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে।”

‘যে বিজয়ের আলোকবর্তিতা তিনি আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। সেই মশাল নিয়েই আমরা এগিয়ে চলতে চাই। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে চাই। এই বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। সম্মানের সঙ্গে চলবে। মাঝখানে একটা কালো অধ্যায় আমাদের জীবন থেকে চলে গেছে। সেই কালো অধ্যায় যেন আর কোনোদিন আমার দেশের মানুষের ওপর ছায়া ফেলতে না পারে। আমাদের দেশের মানুষ যেন জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলে এই বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে পারি, আজকে দিনে সেই কামনা করি।’

ক্ষণগণনার শুভ সূচনা ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের দিনে আমরা সেই প্রত্যয় নেই, এই বাংলাদেশ কারো কাছে মাথা নত করে না। বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে বিশ্বে চলবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে স্বপ্ন; সেই সোনার বাংলা ইনশাল্লাহ, আমরা গড়ে তুলব।’

‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ চিরজীবী হোক উল্লেখ করে বক্তব্য শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এরপর পুনরায় সবার উদ্দেশে বলেন, সবাই স্লোগান ধরেন। ‘‘জয় বাংলা… জয় বাংলা…জয় বাংলা, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।’ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সকলে স্লোগান ধরেন।

217 ভিউ

Posted ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com