বুধবার ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

যে কারণে আত্মহত্যা করেছিলেন সালমান শাহ

সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০
170 ভিউ
যে কারণে আত্মহত্যা করেছিলেন সালমান শাহ

কক্সবাংলা ডটকম(২৪ ফেব্রুয়ারী) :: ’৯০ দশকের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ’র মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটির দাবি, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়নি। ব্যক্তিগত জীবনে নানা ঝামেলা থাকায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সালমানের প্রেম, বিয়ে, দাম্পত্য জীবন, পারিবারিক ও অভিনয় জীবনে টানাপড়েন চলছিল। তাই আবেগপ্রবণ সালমান আত্মহত্যা করেন।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পিবিআইয়ের প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার সালমান শাহ’র মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, ‘সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। তাকে খুন করা হয়নি। আমরা তদন্তে আত্মহত্যার প্রমাণ পেয়েছি।’

ঘটনার আগের দিন হঠাৎ এফডিসিতে সামিরা

১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সালমান শাহ’র স্ত্রী সামিরা হঠাৎ এফডিসির ডাবিং থিয়েটারে যান। সেখানে রেজা হাসমত পরিচালিত সালমান শাহ ও শাবনূর অভিনীত সিনেমার ডাবিং চলছিল। সামিরা সেখানে গিয়ে দুজনকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে রাগারাগি করেন। সেখান থেকে দ্রুত বের হয়ে বাসায় চলে আসেন সামিরা। প্রোডাকশন বয় আবুল হোসেন তাকে অনুসরণ করে পেছনে পেছনে আসেন। তবে সামিরাকে তিনি থামাতে পারেননি।

ঘটনার আগের রাতে সালমানকে ‘শাবনূরের ফোন’ (৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬)

এফডিসি থেকে সামিরা চলে যাওয়ার পর ডাবিং বন্ধ রেখে সালমানও বাসায় ফেরেন। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে সালমান শাহ’র সিটিসেলে একটি ফোন আসে। সালমান ফোন ধরে চিৎকার করে বলতে থাকেন, তাকে যেন আর ফোন না দেয়। কথা বলতে বলতে তিনি বাথরুমে চলে যান। বাথরুম থেকে বের হওয়ার পর সামিরার সঙ্গে ঝগড়া হয় তার।

সামিরা গভীর রাতে বাসা থেকে বের হয়ে যান

রাত ১২টার দিকে সালমানের সিটিসেলে ফের ফোন আসে। সামিরা বাসা থেকে বের হয়ে নিচে চলে যান। এসময় সালমান বাসার ইন্টারকমে ফোন দিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের নির্দেশ দেন সামিরা যেন বাসা থেকে বের না হতে পারে। সামিরার পেছনে পেছনে সালমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবুল হোসেনও যান। বাসার নিরাপত্তাকর্মী ও আবুল হোসেন সামিরাকে বুঝিয়ে ওপরে নিয়ে আসেন। বাসায় ফিরে সামিরা কান্নাকাটি করেন।

সালমান ফোন ভেঙে ফেলেন

রাত আনুমানিক সোয়া ১২টার দিকে সালমানের সিটিসেলে ফের শাবনূরের ফোন আসে। সালমান উত্তেজিত হয়ে তার সিটিসেল ফোনটি আছড়ে ভেঙে ফেলেন। এমনকি সেসময় তিনি শাবনূরের কাছ থেকে উপহার পাওয়া একটি ফ্যানও ভেঙে ফেলেন। পরদিন সকালে গৃহপরিচারিকা মনোয়ারা বেগম ভাঙা ফ্যান ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেন। সামিরা ও সালমানের মধ্যে রাতে আরও ঝগড়া হয়।

সালমানের বাবা সকালে তার বাসায় এলেও ছেলের সঙ্গে দেখা হয়নি

সালমানের বাবা কমর উদ্দিন ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ সালে সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টায় তার বাসায় আসেন। সামিরা তাকে চা-নাশতা খেতে দেন। তবে সালমান শাহ ঘুমাচ্ছেন জেনে আর তাকে তোলেননি। তিনি নিজের বাসায় চলে যান।

ঘুম থেকে উঠে গৃহপরিচারিকার কাছে দুই মগ পানি চান সালমান

সালমান শাহ ঘুম থেকে উঠে তার পানি খাওয়ার মগ নিয়ে রান্নাঘরে যান। রান্নাঘরে গিয়ে তিনি গৃহপরিচারিকা মনোয়ারা বেগমের কাছে পানি চান। প্রথমে এক মগ পানি শেষ করে আবার এক মগ পানি চান তিনি। সালমান কখনও কোনও কিছু কারও কাছে চেয়ে না খেলেও সেদিন রান্নাঘরে গিয়ে পানি চাওয়ায় গৃহপরিচারিকা অবাক হন।

মালি জাকির তিন মাসের বকেয়া বেতন চেয়েছিল সালমানের কাছে

পানি পান করার কিছুক্ষণ পর তার বাসার টবের গাছ দেখাশোনা করা মালি জাকির হোসেন আসে। সালমান নিজেই দরজা খুলে দেন। জাকির সালমানকে জানায়, তার তিন মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। টাকাটা দেবেন কিনা? জাকির দুইশ টাকা বেতনে কাজ করতেন। সালমান তাকে কিছু না বলেই ভেতরে চলে যান।

বাসায় কাউকে ঢুকতে না দেওয়ার নির্দেশ দেন সালমান

বাসার ইন্টারকমে নিরাপত্তাকর্মী দেলোয়ার হোসেনকে ফোন দিয়ে সালমান নির্দেশ দেন, তার বাসায় কাউকে যেন ঢুকতে না দেওয়া হয়।

৬ সেপ্টেম্বর সকালে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে ছিলেন সালমান

মালি জাকির হোসেনের সঙ্গে কথা শেষ করে ভেতরে গিয়ে বেডরুমের দরজা খুলে তার স্ত্রী সামিরার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন সালমান। এসময় সামিরা তাকে জিজ্ঞাস করেছিলেন, কী দেখো? সালমান শাহ কোনও উত্তর না দিয়ে বাথরুমে চলে যান। বাথরুম থেকে বের হয়ে ড্রেসিং রুমে যান সালমান। গিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন।

সালমানের পালক ছেলে ওমর

ডলি নামে একজন গৃহপরিচারিকা ছিল সালমানের বাসায়। তার ছেলের নাম ওমর। সালমানকে বাবা বলে ডাকতো সে। ওমরকে পড়াশোনা করে বড় করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন সালমান। ঘটনার দিন সকালে ডলি বেগম ওমরকে গোসল করান। কিন্তু তার জামাকাপড় ছিল সালমানের ড্রেসিং রুমে। ওমর ‘বাবা-বাবা’ করে ডাকলেও ভেতর থেকে দরজা খুলছিলেন না সালমান।  বিষয়টি সামিরাকে জানান ডলি। সামিরা চাবি নিয়ে আসেন।

দরজা খুলেই দেখেন সালমান ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিলেন

সালমান ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন, এই খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন স্ত্রী সামিরা, গৃহপরিচারিকা মনোয়ারা বেগম, ডলি ও সালমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবুল হোসেন এবং ওমর। সামিরা দরজা খুলেই দেখতে পান ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছেন সালমান। তিনি চিৎকার দিয়ে সালমানের পা জড়িয়ে ধরেন। ডলি রান্নাঘর থেকে বঁটি নিয়ে এসে অ্যালুমিনিয়ামের মই বেয়ে ফাঁসের রশি কেটে দেয়। সালমানকে বেডরুমে নিয়ে আসা হয়। আবুল হোসেন ও মনোয়ারা তার প্যান্ট পরিবর্তন করে একটি থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরিয়ে দেন। তারা তেল গরম করে হাতে-পায়ে ঘষতে থাকেন এবং মাথায় পানি দেন। বাসার সবার চিৎকার শুনে ওপরে উঠে আসে দারোয়ান দেলোয়ার। খবর দেওয়া হলে সালমানের বাবা কমর উদ্দিন, মা নীলা চৌধুরী এবং সালমানের ছোটভাই আসেন। নীলা চৌধুরী এ সময় সামিরাকে লাথি মেরে বলেন,  ‘তুই আমার ছেলেকে খুন করেছিস।’ উপস্থিত সবাই তাকে শান্ত করে নিচে নিয়ে যান। এসময় সালমানের ছোট ভাইও সামিরাকে বকাঝকা করেন। তবে সালমানের বাবা সামিরার প্রতি সহানভূতিশীল ছিলেন।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সালমানকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ কেস বলে সেখানকার চিকিৎসকরা সালমানকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর সালমানকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অ্যালুমিনিয়ামের মইটি সালমান ভারত থেকে নিয়ে এসেছিলেন

অ্যালুমিনিয়ামের যে মইটি ড্রেসিং রুমে ছিল, সেটি সালমান নিজেই ভারত থেকে নিয়ে এনেছিলেন। সেই মই বেয়েই সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দেন সালমান।

লাশের সঙ্গে যে কারণে সিলেটে যাননি সামিরা

সালমানের বড় মামা আলমগীর কুমকুম সামিরাকে সিলেট নিতে চেয়েছিলেন। সামিরার পরিবারও রাজি ছিল। কিন্তু সালমানের বাবা সামিরার কানেকানে বলেছিলেন, ‘তুমি সিলেটে যেও না। গেলে তোমাকে তারা মারধর করতে পারে।’

১৯৯০ সালে দুইবার সালমান আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন

পিবিআই সাক্ষীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সালমান ১৯৯০ সালে দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। প্রথমবার ঘুমের ওষুধ খেয়ে এবং দ্বিতীয়বার স্যাভলন পান করে।

যেভাবে আত্মহত্যার প্রমাণ পেয়েছে পিবিআই

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ২ গৃহপরিচারিকা, নিরাপত্তাকর্মী, বাড়ির ম্যানেজার সালমানের ব্যক্তিগত সহকারী, সামিরাসহ মোট ১০ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এদের প্রত্যেকের জবানবন্দিতেই সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। এছাড়া মেডিক্যাল রিপোর্ট, সুরতহাল প্রতিবেদন, ভিসেরা রিপোর্ট, গলার দাগ পর্যালোচনা করে এটি আত্মহত্যা বলে প্রমাণিত হয়।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ। ওই সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা করেন তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। এতে সালমান শাহ’র মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়। সিআইডি’র প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন।

পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত।

গত ৩ নভেম্বর ১৯৯৭ সালে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহ’র মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে এটি গৃহীত হয়। সিআইডি’র প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন।

২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। এরপর প্রায় ১৫ বছর মামলাটি তদন্তে ছিল। ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহ’র মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর এ চিত্রনায়কের মা নীলা চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান এবং ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন।

২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে নারাজির আবেদন দাখিল করেন। সে আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহ’র হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন।

মামলাটি এরপর র‍্যাব তদন্ত করে। তবে তাদের দ্বারা তদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত বছরের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করে। ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েস রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র‍্যাবকে মামলাটি আর না তদন্ত করার আদেশ দেন। তখন থেকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে আছে পিবিআই।

170 ভিউ

Posted ১০:১৩ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com