বুধবার ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রোহিঙ্গা ইস্যুতে যেভাবে ব্যর্থ হলো জাতিসংঘ

বুধবার, ১৪ মার্চ ২০১৮
334 ভিউ
রোহিঙ্গা ইস্যুতে যেভাবে ব্যর্থ হলো জাতিসংঘ

কক্সবাংলা ডটকম(১৪ মার্চ) :: অনেকেই মনে করেন জাতিসংঘ এ যাবতকালের মধ্যে গঠিত সবচেয়ে অপরিহার্য একটা আন্তর্জাতিক সংস্থা যেটা উদীয়মান বিশ্ব ব্যাবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে কাজ করছে। সংস্থার প্রধান কাজ হলো আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।

জটিল সিদ্ধান্তগুলো এখানে অর্পন করা হয় সিকিউরিটি কাউন্সিলের কাছে। কিন্তু সংস্থার কর্মকাণ্ড প্রচুর সমালোচনার মুখে পড়েছে। সামরিক সঙ্ঘাত থেকে মানুষের জীবন রক্ষায় তারা কি করছে, সেটার মাধ্যমে সংস্থার তৎপরতা বিচার করা যেতে পারে। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারটিও এ রকমই একটা ইস্যু।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনকে মাঝে মধ্যে গণহত্যা এবং জাতিগত নির্মূল অভিযানের সাথে তুলনা করলেও রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে জাতিসংঘ এবং এর সদস্য দেশগুলো দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ অস্বীকার করেছে, যখন অভিযান চলছিল, তখন পদক্ষেপ নিতে অস্বীকার করেছে, এবং বিশেষ করে যখন রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন, তখন তাদের ত্যাগ করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের উপর যেটা ঘটছে, সেখানে গতানুগতিক ভঙ্গিতে চোখ বন্ধ করে রেখেছে জাতিসংঘ।

যে কোন বিবেচনায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যে আচরণ করা হয়েছে, সেটা ভয়ঙ্কর। তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হয়নি, পরিকল্পিতভাবে অত্যাচার করা হয়েছে এবং মূলধারার বৌদ্ধ জনগোষ্ঠি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে রাখা হয়েছে তাদের। জাতিসংঘ বলেছে, তারা বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত সংখ্যালঘু যারা নিয়মিত পরিকল্পিত সহিংসতার শিকার হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জঘন্য প্রচারণা চলে আসছে কয়েক দশক ধরে। তবে ঘটনার বড় ধরনের বাঁকবদল হয় ২০১৭ সালের ২৫শে আগস্ট। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সেদিন এক অকল্পনীয় বর্বর অভিযান চালায় তাদের বিরুদ্ধে। সামরিক বাহিনীর ভাষায় সেটা জঙ্গি নির্মূল অভিযান। বাস্তবে সেটা ছিল পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে দেশ থেকে বের করে দেয়ার পরিকল্পনা।

এখন প্রায় সাত লাখের মতো মানুষ প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, যেখানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। কসোভোর মানুষ নব্বইয়ের দশকে যে পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল, রোহিঙ্গাদের দুর্দশা সে ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়। সে সময় ক্লিনটন প্রশাসন সেই পরিস্থিতিকে গণহত্যার প্রস্তুতি, মানবিক জরুরি অবস্থা হিসেবে বর্ণনা করেছিল এবং কসোভোর হয়ে যুগোশ্লাভিয়া সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি নিয়ে এগিয়ে এসেছিল তারা।

শেষ পর্যন্ত সার্বিয়ার স্লবোদান মিলোসেভিচ চুক্তিতে আসতে বাধ্য হন। যুগোশ্লাভ ও সার্ব সামরিক বাহিনীর জায়গায় আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষীদের মোতায়েন করা হয় এবং অধিকাংশ কসোভো শরণার্থী বাড়ি ফিরে যায়। রোহিঙ্গাদের অবস্থা সেখানে অনেকটাই অন্ধকার। মানবিক বিবেচনায় কারো পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ করার কোন আগ্রহই নেই ট্রাম্প প্রশাসনের। এই প্রশাসনের অগ্রাধিকার তালিকায় মানবাধিকারের বিষয়টি যথেষ্ট কম গুরুত্বপূর্ণ। আর মানবাধিকারের বিষয়টি যদি কোন মুসলিম সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে হয়ে থাকে, তাহলে তো সেটা আরও কম গুরুত্ব পাবে। দুঃখজনক হলো যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে একটা চাপ না আসা পর্যন্ত কোন মানবিক হস্তক্ষেপ করার ব্যাপারে জাতিসংঘ কোন চিন্তাই করে না।

২০০৫ সালে জাতিসংঘ এবং এর সদস্য দেশগুলো বড় ধরনের হত্যাযজ্ঞ ঠেকানো ও এর প্ররোচনা বন্ধের জন্য যৌথভাবে রেসপন্সিবিলিটি টু প্রটেক্ট (আরটুপি) প্রস্তাব গ্রহণ করে। আরটুপি’র মূল বিষয় হলো প্রতিটি সার্বভৌম রাষ্ট্রকে তাদের নাগরিকদের গণ-সহিংসতা থেকে নিরাপত্তা দিতে হবে। আর যদি শান্তিপূর্ণ উপায়ে সেটা নিশ্চিত করা না যায় এবং যদি জাতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের জনগণকে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জাতিগত নির্মূল অভিযান এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে বাঁচাতে সুস্পষ্টভাবে ব্যর্থ হয়, তাহলে জাতিসংঘ সনদের ছয় ও আট নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সেই দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর বর্তাবে।

একইভাবে, জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশানেও পাঁচটি পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়েছে। যে কেউ যদি আংশিক বা পুরোপুরি কোন জাতীয়, জাতিগত, গোষ্ঠিগত বা ধর্মীয় গ্রুপকে ধ্বংস করার ইচ্ছা নিয়ে নির্যাতন চালায়, সেটা গণহত্যা হিসেবে গণ্য হবে। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নিশ্চিত করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে সুষ্পষ্ট ও খোলামেলাভাবে কোন ধরনের বাধা ছাড়াই এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। কিন্তু দুঃখজনক হলো জাতিসংঘ তাদের বহুল প্রচারিত আরটুপি বাস্তবায়নের জন্য কিছুই করতে পারেনি।

বহু বছর ধরে চরমপন্থী বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মিয়ানমারে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে যে রোহিঙ্গারা পোকামাকড় ও সাপ থেকে পুনর্জন্ম লাভ করেছে। এবং তাদেরকে জবাই করলে সেটা মানবতাবিরোধী অপরাধ হবে না, বরং এটা হবে অনেকটা কীটনাশক ব্যবহারের মতো ব্যাপার। রুয়ান্ডাতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। হুতু জাতিগোষ্ঠির প্রচারণা চলেছে বছরের পর বছর। তুতসিদের তারা তেলাপোকা বলেছে যারা হুতুদের জন্য একটি জীবনঘাতি হুমকি, এজন্য তাদের নির্মূল করতে হবে যদি হুতুরা নিজেরাই ধ্বংস হয়ে না যায়। সেখানে যে উন্মাদ হত্যাযজ্ঞ চলেছে, তাতে আট লাখের মতো তুতসি ও হুতু নিহত হয়েছে। মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ ঘর-বাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে গেছে।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে নির্মমতা চালানো হয়েছে, সেগুলো পরিদর্শনের পর জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকর্তা মিয়ানমারের ঘটনাকে জাতিগত নির্মূল অভিযানের আদর্শ উদাহরণ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু জঘন্য নির্মমতার পরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘ এই বিপর্যয়ের ব্যাপারে সময়মতো পদক্ষেপ নিতে দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। জাতিসংঘ যদি এই পরিস্থিতিকে ‘গণহত্যা’ এবং ‘জাতিগত নির্মূল অভিযানের উদাহরণ’ মনে করে, তাহলে আইনগত ও নীতিগতভাবে এখানে হস্তক্ষেপ করা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। অন্তত শান্তিরক্ষী পাঠিয়ে হলেও সেটা করতে হতো তাদের।

334 ভিউ

Posted ৩:৫৭ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৪ মার্চ ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com