কক্সবাংলা ডটকম(২৩ জানুয়ারী) :: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা। প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হচ্ছে জানিয়ে বাংলাদেশের দেয়া ঘোষণাকে সংস্থাগুলো স্বস্তিদায়ক বলে অভিহিত করেছে। টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গা সংকটের মূলোৎপাটন এবং রোহিঙ্গারা ফেরার সময় মিয়ানমারে নজরদারি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপো গ্রান্দি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর আগে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ও স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার নিশ্চিতের ওপর জোর দিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে আরো সময় দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জেনেভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফিলিপো গ্রান্দি বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন ও সত্যিকার অর্থে টেকসই করতে বেশকিছু ইস্যুর নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। এখন পর্যন্ত আমরা এসব বিষয়ে কিছুই শুনিনি। যারা ফিরে যাবে তারা কী অবস্থায় থাকছে, তা তদারক করতে মিয়ানমারের রাখাইনে একটি নজরদারি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাও গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারে এ ধরনের নজরদারি ও অবাধ চলাচলের সুযোগ বর্তমানে ইউএনএইচসিআরের নেই।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) নিডস অ্যান্ড পপুলেশন মনিটরিং সার্ভে অনুযায়ী, চলতি দফায় ২১ জানুয়ারি রোববার পর্যন্ত ৬ লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারী থেকে এসব রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আগের দিন সোমবার প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হচ্ছে বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়। ট্রানজিট ক্যাম্প ও অন্যান্য লজিস্টিক প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে না বলে জানান শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম।
এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে মানবাধিকার সংস্থা ফোর্টিফাই রাইটস বলেছে, প্রত্যাবাসন পেছানোর জন্য বাংলাদেশ ভুল কারণ উল্লেখ করেছে।
সংস্থার প্রধান ম্যাথু স্মিথ বলেন, বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ লজিস্টিক কারণ দেখিয়েছে। রাখাইনে এখনো যে নিরাপত্তাহীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন চলছে, সে কারণে প্রত্যাবাসন পেছায়নি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া ডিরেক্টর ব্র্যাড অ্যাডামস গতকাল বলেছেন, বাংলাদেশের উচিত প্রত্যাবাসন পরিকল্পনাটাই বাতিল করা। কারণ এতে শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ হুমকিতে পড়বে। বর্মি সেনাবাহিনীর হাতে প্রাণহানি, গণধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ থেকে বাঁচতে শরণার্থীরা দেশ ছেড়েছে। এখন ওই সৈন্যদের পাহারায় থাকা ক্যাম্পে তাদের ফেরত পাঠানো উচিত নয়।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য বার্মা কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
এ সত্য আড়াল করতেই তারা স্রেফ জনসংযোগের কৌশল হিসেবে প্রত্যাবাসন পরিকল্পনার কথা বলছে। বর্মি সরকার রোহিঙ্গাদের সাময়িকভাবে ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখবে বলে জানাচ্ছে। অতীতেও তাদের ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। যতদূর জানা যাচ্ছে, তাতে এবারো রোহিঙ্গাদের বিশাল ও উন্মুক্ত এক কারাগারে আটকে রাখতেই পুনর্বাসনের কথা বলা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতার সুযোগ অনেকাংশেই দেয়নি। এখন জোরপূর্বক প্রত্যাবাসনে তহবিল জোগানোর পরিবর্তে দাতাদের উচিত যেকোনো পরিকল্পনায় মিয়ানমার যাতে আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতার সুযোগ দেয়, সেই দাবি জানানো। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে মিয়ানমারে যথেষ্ট তদারকি নিশ্চিত করতে না পারলে রোহিঙ্গাদের রক্ষা সম্ভব হবে না।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাতিল এবং নতুন করে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য অনুপযোগী সময়সীমা, জাতিসংঘ সংস্থার সংশ্লিষ্টতার অনুপস্থিতি এবং আরো অগণিত ত্রুটির কারণেই চুক্তিটি বাতিল করা জরুরি বলে সংস্থাটি মত প্রকাশ করেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রত্যাবাসন বিলম্বের যে ঘোষণা বাংলাদেশ দিয়েছে, সেটা স্বস্তিদায়ক। গত সপ্তাহে চূড়ান্ত হওয়া চুক্তিটি বিদ্যমান অবস্থায় বাস্তবায়ন হলে সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গার জীবন ও নিরাপত্তা ভীষণ হুমকিতে পড়বে। প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইনে কাউকে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর সুযোগ নেই।
অ্যামনেস্টির মতে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তিতে মানবাধিকার নিয়ে গুরুতর উদ্বেগের কারণ রয়েছে। নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি এবং পুরো প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত প্রণয়নে রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হওয়ার আগে তাদের ফেরত পাঠানোর কথা না ভাবতে দুই দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
Posted ২:৪১ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta