কক্সবাংলা ডটকম(১৫ জানুয়ারি) :: বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম সভা মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে আজ সোমবার (১৫ জানুয়ারি) শুরু হবে। এ বৈঠকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় ও শেষ দলিল ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারি সূত্র জানায়, সোমবারের মধ্যে এটি চূড়ান্ত করা সম্ভব না হলে আলোচনা মঙ্গলবারে গড়াবে। ২০১৬ সালের অক্টেবরের পর থেকে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার।
যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির পার্মানেন্ট সেক্রেটারি মিন্ট থো নেতৃত্ব দেবেন। ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট স্বাক্ষরিত হওয়ার পর যাচাই বাছাইয়ের জন্য বাংলাদেশ এক লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে দেবে।
সূত্র জানায়,রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করতে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করছে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত নতুন ও পুরনো মিলিয়ে সাড়ে নয় লাখের বেশি রোহিঙ্গার তথ্য সংগ্রহ করেছে সরকার। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে এ তথ্য যথেষ্ট নয়। এজন্য নতুন করে নেপিদোর চাহিদা অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশের এক কূটনীতিক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এগ্রিমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পারসনস ফ্রম রাখাইন স্টেট’ চুক্তিকে মূলে রেখে ফিজিক্যাল এগ্রিমেন্ট সই করবে বাংলাদেশ। এখানে বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের মাধ্যমে আমাদের কাজ অনেক এগিয়েছে। তবে আরো কিছু তথ্য সংগ্রহ করে সাজাতে হবে। কারণ প্রত্যাবাসনের সময়ে আমাদের দেয়া তালিকা নিজেদের তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখবে মিয়ানমার। ফলে কারো ক্ষেত্রে তথ্য না মিললে সে ব্যক্তির প্রত্যাবাসন বাতিল হয়ে যাবে। সবাইকে মিয়ানমারের বাসিন্দা হিসেবে প্রমাণ দিতে হবে। মূলত এদের পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করে প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকা তৈরি করতে হবে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশের তথ্যভাণ্ডারে মিয়ানমার থেকে আগত ব্যক্তির নাম, ছবি, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্মতারিখ, লিঙ্গ, মিয়ানমারের ঠিকানা এবং বাংলাদেশে কখন এসে পৌঁছেছে— এ তথ্যগুলো রাখা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা নিবন্ধনে যুক্ত পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, এ মানুষগুলো যাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তৈরি করতে না পারে, সে কথা মাথায় রেখেই আমরা তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেছি। প্রত্যাবাসনের বিষয়ে এ তথ্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে হয়তো আরো কিছু তথ্য এখানে প্রয়োজন হবে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর আগে বাংলাদেশকে জানিয়েছিল— মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করতে বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে যে তথ্যগুলো রাখা হচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়।
ঢাকায় জাতিসংঘের এ সংস্থার উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, জাতিসংঘ বায়োমেট্রিক নিবন্ধন প্রক্রিয়ার অংশ। বায়োমেট্রিক নিবন্ধন একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ সরকারের জন্য এটি বড় পদক্ষেপ। তবে এখানে যে তথ্য রাখা হচ্ছে, তা অত্যন্ত অপর্যাপ্ত। সেই সঙ্গে কৌশলের ঘাটতি রয়েছে।
এ তথ্যের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কথা ভাবলে তথ্যগুলো অনর্থক বলতে হবে। মিয়ানমার সরকার এ অপ্রতুল তথ্যের ভিত্তিতে কখনই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে না। নিবন্ধন সঠিকভাবে সম্পন্ন না হলে চূড়ান্তভাবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। এ তথ্য দিয়ে এদের আর কখনো প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে না।
জাতিসংঘের সূত্র জানায়, শরণার্থী প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার তথ্যে তিন ধরনের উপকরণ থাকে। প্রথমত. কী কারণে, কোত্থেকে, কোন প্রেক্ষাপটে তারা পালিয়ে এসেছে এবং তাদের বর্তমান প্রেক্ষাপটের পূর্ণাঙ্গ তথ্য। দ্বিতীয়ত. তাদের পরিবারের শাখা-প্রশাখা। এর সঙ্গে তার আদি ইতিহাস জড়িত এবং সহজেই তাকে ও তার পরিবারের মানুষদের শনাক্ত করা সম্ভব। আর তৃতীয়ত. মিয়ানমারে বাসস্থানের পূর্ণাঙ্গ তথ্য। সেই সঙ্গে পালিয়ে আসার সময়ে কারো সন্তান হারিয়ে গেলে বা কারো স্ত্রী অপহরণ হলে সেসব তথ্যও থাকলে ভালো।
এদিকে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন মিয়াত আই গণমাধ্যমকে বলেছেন, ২২ জানুয়ারি থেকে আমরা বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করব। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনার জন্য এবং তাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য প্রতিনিধিরা তৈরি। আমরা এরই মধ্যে বাংলাদেশকে ফরম পাঠিয়েছি, যা রোহিঙ্গারা পূরণ করবে এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে পাঠাবে। তবে এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ একটিও ফরম আমরা বাংলাদেশ থেকে ফেরত পাইনি।
রেডিও ফ্রি এশিয়ার মিয়ানমার সার্ভিসকে তিনি বলেন, যারা ফিরে আসতে চাইবে তাদের অবশ্যই মিয়ানমারের বাসিন্দা হিসেবে প্রমাণ দিতে হবে। কোনো কাগজপত্র না থাকলে তাদেরও ফরম পূরণ করতে হবে। ফরমে ছবি, নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা তুলে ধরতে হবে। এসব তথ্য নিয়ে আমরা আমাদের কাছে থাকা তথ্য যাচাই করব। বাংলাদেশ আমাদের যখন থেকে ফরম দেবে, তখন থেকেই আমরা প্রত্যাবাসন শুরু করব।
মিয়ানমার জানিয়েছে, ৯ অক্টোবর ২০১৬ সালের পর থেকে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে গেছে, তাদের অবশ্যই মিয়ানমারের বাসিন্দা হওয়ার প্রমাণ দিতে হবে। সেই সঙ্গে ৯ অক্টোবরের পর যে তারা মিয়ানমার ত্যাগ করেছে, তার প্রমাণও দিতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে না পারলেও তা খুব একটা দেরি হবে না। আর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুত্বসহকারে কাজ করতে দুই দেশই আগ্রহী। ফলে খুব বেশি হলেও ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
Posted ১:৪৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta