কক্সবাংলা ডটকম(২১ আগস্ট) :: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত সত্যিই প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হলে তা হবে সবার জন্যই মঙ্গলজনক। হয়তো প্রথম দিনে কিংবা প্রথম পর্যায়ে খুবই সীমিত আকারে একটি দলকে ফেরত পাঠানো হবে। এ সংখ্যাটাকে প্রতীকী বলা যেতে পারে, কিন্তু প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার তাৎপর্য অনেক। এটাকে আমাদের একটা বড় কূটনৈতিক বিজয়ও বলা যেতে পারে। মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের পরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে অগ্রগতি হয়। মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসে এবং ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে। এটা ছিল জটিল এই সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।
সংশয়ের কথা বলে শুরু করেছি, কারণ রোহিঙ্গাদের ভেতরে উৎকণ্ঠা রয়েছে। রাখাইনে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কতটা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে, রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার কতটা নিশ্চিত করা হবে সে বিষয়টি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারেনি। এই অবস্থা কাজে লাগিয়ে কিছু কিছু পক্ষ রোহিঙ্গাদের নিজের দেশে ফিরে না যেতে নানাভাবে প্ররোচিত করছে। তাদের প্রচারণার ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যেতে না চাইলে তাদের জোর করে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশের নীতিগত অবস্থান হচ্ছে- কাউকে জোর করে ফেরত পাঠানো হবে না। সংশয়ের কথাটা এ জন্যই বলেছি।
অন্যদিকে প্রত্যাশার জায়গা হচ্ছে, দীর্ঘসময় পর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সীমিত আকারে হলেও রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে। তারা একটা লক্ষ্য ধরে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশ তো সব সময়ই প্রস্তুত। আমার বিশ্বাস, এখনই মিয়ানমার পাঁচ লাখ ফেরত নিতে চাইলে সে প্রস্তুতিও বাংলাদেশের আছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার সম্মতির মধ্য দিয়ে এ সংকট ঘিরে বাংলাদেশের অবস্থানই সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং তাদের নিজের দেশে ফেরত যাওয়াই কেবল এ সংকটের কার্যকর সমাধান নিশ্চিত করবে- বাংলাদেশের এই অবস্থান শুরু থেকেই। এখন মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করতে সম্মতি ও প্রস্তুতি নিয়ে সে সত্য স্বীকার করে নিল। এটা আমাদের কূটনৈতিক বিজয়।
রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হলে কিংবা রোহিঙ্গারা দীর্ঘসময় কক্সবাজারে অবস্থান করলে সেটা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এ অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ বিষয়গুলো যেমন একটা দিক, অন্য একটা দিক হচ্ছে এ সংকট ঘিরে সুবিধাভোগী একটা অংশ তৈরি হয়েছে। এরা এ সংকট থেকে নানাভাবে লাভবান হচ্ছে। অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গিও এ সংকটের সমাধান বিলম্বিত করার দিকেই। কারণ তাদেরও সুবিধার বিষয় রয়েছে। এসব নানা কারণে রোহিঙ্গা সংকট জটিল আকার ধারণ করছে এবং দ্রুত সমাধান না হলে তা আরও জটিল হবে। আজকের প্রত্যাবাসন শুরু হওয়াটা জরুরি এ কারণেই। প্রত্যাবাসনের কার্যক্রম শুরু হলে এবং রোহিঙ্গারা নিজের দেশে ফিরে ভালো আছে এটা প্রমাণিত হলে সুবিধাভোগী অংশগুলোর তৎপরতা খুব একটা কাজে আসবে না। আশা করব, রোহিঙ্গারা ফেরত যাওয়ার পর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দেওয়া কথা রাখবে।
একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এখনই শুরু না করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। তারা যেটা বলেছে, রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে, সেটা অবশ্যই আদর্শিক অবস্থান থেকে যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে, শুধু তাত্ত্বিক ও আদর্শিক অবস্থানে থেকে বিশ্বের কোথাও সংকট নিরসন সম্ভব হয়নি। সংকট নিরসনে বিদ্যমান বাস্তবতাকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হয়। রোহিঙ্গা সংকটের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। এ ক্ষেত্রে বাস্তবতা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই নিজের দেশে ফিরে যেতে হবে। পরবাসী হয়ে অধিকার আদায়ের উদাহরণ কোথাও নেই।
লেখক-ড. দেলোয়ার হোসেন : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Posted ২:৩২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta