রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যু : বাংলাদেশের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে

বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৭
561 ভিউ
রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যু : বাংলাদেশের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে

কক্সবাংলা ডটকম(১১ অক্টোবর) :: রোহিঙ্গা শরণার্থী যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কোনও দেশ যখন শরণার্থীকে আশ্রয় দেয় বা দেওয়া থেকে বিরত থাকে দুটোই ওই দেশের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলে। কিছুদিন আগেও শরণার্থীদের ধর্মীয় পরিচয় খুঁজতো না কেউ। পৃথিবীতে তখন এভাবে ধর্ম মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেনি, গ্রাস করেনি রাজনীতিকে। এমনকি বিচ্ছিন্নতাবাদকেও গ্রাস করেনি ধর্ম। তখন রাজনীতি তার নিজস্ব অবস্থানে ছিল।

অন্যদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদ সাধারণত সৃষ্টি হতো কোনও না কোনও বঞ্চনা থেকে বা কোনও গোষ্ঠীগত, জাতিগত উন্মাদনা থেকে। ধর্ম দিয়ে নয়। তাই এই একবিংশ শতাব্দীর প্রথম যে গণহত্যা তা হয়েছিলো বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে নির্মূল করার জন্যে।

শ্রীলংকার তামিলদেরকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের পেছনে পরবর্তীতে অনেকে বৌদ্ধ সাম্প্রদায়িকতা খুঁজেছে। পেয়েছেও কিছুটা। তারপরেও তামিল গণহত্যা বা তামিল বিতাড়নকে হিন্দু বিতাড়ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি।

তামিলদের অনেকে অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়া সহ নানান দেশে শরণার্থী জীবন যাপন করছেন। তাদের কারো কারো লেখায় স্বল্প হলেও ফুটে ওঠে তারা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার। নিষ্ঠুরভাবে তামিল হত্যা অনেক বড় গণহত্যা হলেও এটা সত্য, গণহত্যার যে ব্যাপকতা ছিল ওই হিসেবে শরণার্থী কোথাও যেতে পারেনি।

এর কারণ শ্রীলংকার ভৌগলিক অবস্থান। সেখান থেকে মানুষ পালানোর পথ কম। তবে শ্রীলংকার এই গণহত্যা তাদের দেশের রাজনীতিতে অনেক বড় প্রভাব ফেলেছে। সেখানে যে নির্বাচন হয়েছে ওই নির্বাচনে যথেষ্ট উদারপন্থী বিজয়ী হয়েছে- যে বিজয়ের পেছনে আন্তর্জাতিক শক্তির অনেক বড় ভূমিকা ছিল।

বিশেষ করে শ্রীলংকার তামিলরা যাতে আর নির্যাতিত না হয় এবং শরণার্থীরা দেশে ফিরতে পারে সেজন্য আন্তর্জাতিক শক্তি, আঞ্চলিক শক্তিগুলো শ্রীলংকার নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখে। এখন সেখানে যে নতুন সংবিধান হচ্ছে, ওই সংবিধান অনেক উদার বলেই মনে হচ্ছে- তার ড্রাফট কপি দেখে। এই সংবিধান প্রণয়নেও ভূমিকা আছে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর।

বাস্তবে বর্তমান বিশ্বে কোনও দেশই বিচ্ছিন্নভাবে কোনও কিছু করতে পারে না। একক এ বিশ্বটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে এতটাই অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত, যাতে কারও একা কিছু করার নেই। তাছাড়া নিজস্ব অর্থনীতি ও রাজনীতির স্বার্থে এক দেশকে অন্য দেশের বিষয় নিয়ে ভাবতে হয়। মিয়ানমার থেকে আসা বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী এককভাবে বাংলাদেশের কোনও সমস্যা নয়।

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী আসার ফলে এখানের রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়বে এ চিন্তা শুধু দেশীয় রাজনীতি মাথায় নিয়ে করারও নয়- আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতিও মাথায় নিয়েই করতে হবে। গত কয়েক বছর হলো গোটা বিশ্বে ধর্মীয় পরিচয় নানানভাবে নানান স্থানে নিয়ে আসা হচ্ছে।

শরণার্থীর ক্ষেত্রেও এখন বড় হয়ে উঠেছে ধর্মীয় পরিচয়। সিরিয়া থেকে যারা ইউরোপে গেছে তাদেরকে সিরিয় বলা হচ্ছে না, বলা হচ্ছে মুসলিম শরণার্থী। ইউরোপের গণমাধ্যমে শুধু নয় তাদের প্রগতিশীল মানুষদের অনেকে এদেরকে মুসলিম শরণার্থী হিসেবে চিহ্নিত করছে। বাংলাদেশে যে নিপীড়িত রোহিঙ্গারা গণহত্যার হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে এসে আশ্রয় নিয়েছে- তাদেরকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিপীড়িত মানুষ বললেও আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ বলছে ‘নিপীড়িত মুসলিম’।

আমাদের মিডিয়ারও বড় অংশও সচেতন ও অবচেতন ভাবে তাদেরকে মুসিলম হিসেবে চিহ্নিত করছে। এমনকি কিছু হিন্দু ধর্মাবলম্বী এসেছেন তাদেরকেও দেখা হচ্ছে হিন্দু হিসেবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের বাইরের পূবের ও পশ্চিমের মিডিয়া এক যোগে তাদেরকে মুসলমান শরণার্থী হিসেবে দেখছে।

মানুষে মানুষে ভাগ করে ধর্মীয় পরিচয়ে দেখা নিতান্তই হীন কাজ শুধু নয়, অন্যায়ও। বাস্তবে এই অন্যায়কে সঠিক ধরে নিয়েই এগুচ্ছে বর্তমান পৃথিবী। এ অন্যায় থেকে কখন যে পৃথিবী বের হয়ে আসতে পারবে তাও বলা কঠিন। আগামী এক দশকের ভেতর পারবে বলে মনে হয় না। কারণ ইউরোপে জার্মানি ও ফ্রান্সের নির্বাচনে মুসলিম শরণার্থীর প্রভাব হিসেবে কট্টর ডানপন্থীরা ক্ষমতায় আসতে পারেনি ঠিকই তবে প্রগ্রেসিভদের পৃথিবী সংকুচিত হয়েছে।

অর্থাৎ শরণার্থীর প্রতি সেখানকার সাধারণ মানুষের যে নেগেটিভ প্রভাব তার প্রভাব ইউরোপের ভোটের রাজনীতিতে দেখা গেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিষয়টি সম্পূর্ণ উল্টো। বাংলাদেশের মানুষের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি রয়েছে সহমর্মিতা। তাই বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রভাব ইউরোপের রাজনীতিতে শরণার্থীদের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি যে সহমর্মী প্রভাবের ঢেউ এই ঢেউয়ের পানি কোনও ইসলামিক দল এমনকি ছদ্মবেশি ইসলামিক দল বিএনপিও ঘরে তুলতে পারেনি। এই সহমর্মী প্রভাবের ঢেউ পার্টি হিসেবে আওয়ামী লীগ কতটা নিজের ঘরে তুলতে পেরেছে তা এখনও পরিষ্কার নয়– তবে এ ঢেউ এককভাবে আছড়ে পড়েছে শেখ হাসিনার আঁচলে।

শুধু তাই নয়, মানবিকতা যে ধর্মীয় রাজনীতির গতিপথ পরিবর্তন করে দিতে পারে তারও প্রমাণ দিয়েছেন শেখ হাসিনা এই ঘটনার ভেতর দিয়ে। আর তার প্রভাব বা ফল গিয়ে উঠেছে তাঁর ঘরে। এই বিষয়টির ভেতর দিয়ে দুটো দিক সামনে আসে।

এক, দেশের মানুষ দেখছে বাস্তবে মুসলিমদের প্রতি সত্যি যদি বাংলাদেশে কেউ মানবিক হয়ে থাকেন– তিনি শেখ হাসিনা। দুই, সারা বিশ্বে আজ যে মুসলিমরা মার খাচ্ছে এ নিয়ে যদি কেউ ভাবেন তিনিও শেখ হাসিনা। কারণ তিনি শুধু অসহায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দেননি– এ কথাও বলেছেন, মুসলিম বিশ্বের ঐক্য নেই বলেই আজ সারা দুনিয়ায় মুসলমানদের এ অবস্থা। তাঁর কথা ও কাজের ভেতর দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে শেখ হাসিনা যেমন লিডার অব দ্য ইস্ট তেমনি তিনি মুসলিম বিশ্বেরও একক নেতা।

তাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এখন জঙ্গিবাদের বাইরে যে একটি ধর্মীয় ঢেউ চলছে অন্যান্য দেশের মতো ( যেমন ভারতে হিন্দু ধর্মীয় ঢেউ চলছে)– এই ঢেউ এখন শেখ হাসিনার পক্ষে।

রোহিঙ্গাদের প্রতি এই মানবিকতার আচরণের ভেতর দিয়ে দুটো বিষয় শেখ হাসিনার দিকে যাবে। এক, মানবতার যে প্রবাহমান ধারাটি এখনও দেশের মানুষের ভেতর বেঁচে আছে তারা শেখ হাসিনাকে সমর্থন করবেন। অন্যদিকে, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যে ধর্মীয় ঢেউ উঠেছে তার জঙ্গিবাদ অংশটুকু বাদ দিয়ে বাকি অংশ শেখ হাসিনার দিকে যাবে।

কারণ, এই ঘটনার ভেতর দিয়ে শেখ হাসিনা ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ ও ধর্মের নামে মানবতাবাদকে পৃথক করতে পেরেছেন। তিনি যে শুধু দেশের ভেতর প্রমাণ করেছেন তা নয়– বিশেষ করে আঞ্চলিক দেশগুলোর কাছে ও পশ্চিমা বিশ্বের কাছে এটা বড় ভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

শুধু এটা নয়, শেখ হাসিনার এই মানবিকতার রাজনীতির ভেতর দিয়ে চিহ্নিত হয়েছে বাংলাদেশে ইসলামিক জঙ্গিবাদী রাজনীতির সঙ্গে কারা জড়িত এবং কারা এখানে ইসলামিক জঙ্গিবাদ বাঁচিয়ে রাখতে চায়। আর কে জঙ্গিবাদ প্রতিহত করে একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে শান্তিপূর্ণ রাখতে পারেন।

রোহিঙ্গাদের ভেতর একটি ক্ষুদ্র অংশ ইসলামিক জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত। যাদের মদদদাতা পাকিস্তান ও সৌদি আরব। এই জঙ্গিবাদী অংশটুকু এখন কোনঠাসা মানবিকতার কাছে। তবে তারা বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে বা করানো হবে। এই অংশকে পাকিস্তান ও সৌদির কারণে গোপনে সমর্থন দেবে বিএনপি, জামায়াত ও কিছু ইসলাম নামধারী দল।

তাই স্বাভাবিকই পশ্চিমা বিশ্ব ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো এ ক্ষেত্রে জোর দেবে যাতে কোনও ক্রমেই ওই ইসলামিক জঙ্গি অংশ যেন বাংলাদেশে ও আঞ্চলিকভাবে সামনে চলে না আসে। সে কারণে শ্রীলংকায় যেমন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিকে নতুন করে একটি মধ্যপন্থী মানবতাবাদী দলকে সমর্থন করতে হয়েছে– বাংলাদেশেও আগামীতে পশ্চিমা বিশ্ব এবং আঞ্চলিক শক্তিগুলোর শেখ হাসিনাকে সমর্থন করা ছাড়া কোনও বিকল্প নেই।

তারা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে, শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার ভার থাকলে কোনও মতেই দেশের ভেতরে ও বাইরে রোহিঙ্গা ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রভাব পড়বে না। মাথা চাড়া দিতে পারবে না বাংলাদেশের ইসলামিক জঙ্গি দলগুলো। আবার রোহিঙ্গা সমস্যারও ধীরে ধীরে শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে। কমে যাবে এ অঞ্চলে ইসলামিক জঙ্গির প্রভাব। এ কারণে আঞ্চলিক শক্তি ও পশ্চিমা বিশ্ব চাইবে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকুক।

অন্যদিকে, রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রতি সহমর্মীতার যে ঢেউটি উঠেছে যার ভেতর অনেকখানি ধর্ম ও মানবতা এ দুটোর পজিটিভ প্রভাব স্বাভাবিকই শেখ হাসিনার দিকে। তাই সব মিলে রোহিঙ্গা শরণার্থী ঘিরে বাংলাদেশে কোনও কট্টর ধর্মীয় উন্মাদনা আসেনি এবং কট্টর ধর্মীয় দল বা ছদ্মবেশে ধর্মীয় দলগুলো এর থেকে কোনও সুবিধা পাবে না।

লেখক-স্বদেশ রায় : সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সাংবাদিক

561 ভিউ

Posted ১:০২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com