শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি স্তরে ঘুষ-অনিয়ম

মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭
536 ভিউ
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি স্তরে ঘুষ-অনিয়ম

কক্সবাংলা ডটকম(২৬ ডিসেম্বর) :: শুধু আর্থিক দুর্নীতি করতেই বছরের পর বছর শিক্ষকতা ছেড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হয়ে পড়ে আছেন অসংখ্য শিক্ষক। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে এমপিওভুক্তির (মান্থলি পে অর্ডার) কার্যক্রম এককভাবে মাউশিতে (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর) না রেখে সারা দেশের শিক্ষা অফিসগুলোতে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়। তাতেও থামেনি দুর্নীতি। আগে মাউশিতে ঘুষ দিতে হতো এক স্তরে। এখন দিতে হচ্ছে চার স্তরে। এমনকি মাউশিতে অনিয়মের ধাপ আরো বেড়েছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতনের সরকারি টাকার অংশ বিতরণে অব্যবস্থাপনা চলছে সেই আগের মতোই।

দুই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশিসহ সরকারি শিক্ষা ভবনগুলোতে এসব অনিয়মের তথ্য বহু পুরোনো। বিষয়টি ওয়াকিবহাল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও। এ নিয়ে অনেকবার সতর্ক করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। নানা ধরনের সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের। এবার সেই ঘুষের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

গত রোববার এক অনুষ্ঠানে তিনি ক্ষোভ থেকে বলেই ফেললেন, খালি অফিসাররা চোর নয়, মন্ত্রীরাও চোর, আমিও চোর। পরে অবশ্য গণমাধ্যমে আসা এই বক্তব্য ‘সঠিকভাবে আসেনি’ বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মন্ত্রীর এই ক্ষোভের মধ্য দিয়ে শিক্ষা খাতের অনিয়মের প্রকৃত চিত্র উঠে এসেছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (প্রাশিঅ)-সহ শিক্ষা খাতের বিভিন্ন স্তরে নানা অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বেতন না দিয়ে মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী একটি চক্র নানা কৌশলে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। বেতন খাত থেকে গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে ৬১৪ কোটি টাকা গোপনে সরিয়ে ব্যাংকে রেখে লভ্যাংশ খেয়ে আসছে প্রভাবশালী চক্র।

এ সময়ের মধ্যে মুনাফার প্রায় ১০০ কোটি টাকা লুটপাট করেন চক্রের সদস্যরা মিলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোয়েন্দা জালে ধরা পড়েছে মাউশির এমন তুঘলকি কা-। এভাবে চলছে শিক্ষা খাতে প্রভাবশালী চক্রের অনিয়ম।

সূত্র আরো জানায়, প্রায় ২০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। এগুলোর মধ্যে রাজধানীর নামকরা ১৫টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তিবাণিজ্য, নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীকে বোর্ডের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ ও বার্ষিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের উচ্চতর শ্রেণিতে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে।

তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য চলতি বছরের মাঝামাঝি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরাসরি ঘোষণা দিলেও এর বাস্তবায়ন হয়নি। শিক্ষকরা নীতিমালা অমান্য করে বিভিন্ন অসৎ উপায়ে টাকা উপার্জনসহ প্রতিষ্ঠানের ফান্ডের টাকা আত্মসাতে জড়িত।

বছরের পর বছর ধরে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থেকে কোচিং-বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের অভিযোগে রাজধানীর আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৯৭ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সম্প্রতি সুপারিশ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে ‘কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি কোচিং-বাণিজ্য বন্ধে সরকারকে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে বলে দুদক।

এর আগে নভেম্বর মাসের শুরুতে ২৪টি সরকারি বিদ্যালয়ের ৫২২ জন শিক্ষককে একই কারণে বদলির সুপারিশ করে দুদক। তবে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার কোনো কার্যক্রমও শুরু হয়নি।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দুর্নীতি রোধে শিক্ষামন্ত্রী বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও দুর্নীতি পুরোপুরি থামছে না। এক যুগ আগে গড়ে ওঠা প্রভাবশালী চক্র কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারাও তাদের কাছে অসহায়। তবে শিক্ষা খাতের দুর্নীতি রোধে এবার দুদকের সঙ্গে মাঠে নামছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রীর নির্দেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট দফতরগুলো এ-সংক্রান্ত কর্মকৌশল নির্ধারণ করেছে।

শিক্ষকতা ছেড়ে কর্মকর্তা :

জানা গেছে, সরকারি কলেজের একশ্রেণির শিক্ষক শিক্ষকতা ছেড়ে শিক্ষা কর্মকর্তা হয়ে আছেন। মাত্র তিন বছরের জন্য প্রেষণে দায়িত্ব পেলেও অনেকে কর্মকর্তা হয়ে পড়ে আছেন দুই যুগ থেকে শুরু করে ১০ বছর ধরে। লোভনীয় পদ ছেড়ে তারা আর ফিরে যেতে চাচ্ছেন না শিক্ষকতায়। শিক্ষা ভবনসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হয়ে বাড়তি নৈতিক ও অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন তারা। অনেকে কোটিপতি ও গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন।

অনেকের বিষয়ে অভিযোগ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও। তদ্বিরের মাধ্যমে শতাধিক শিক্ষক এভাবে শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যুক্ত আছেন। গত ১০ বছরে প্রায় ৬০ জন শিক্ষকতা ছেড়ে এভাবে কর্মকর্তা হয়েছেন। ফলে সরকারি কলেজে শিক্ষক সংকট তীব্রতর হচ্ছে।

সূত্র আরো জানায়, অনিয়ম, দুর্নীতি ও দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার অভিযোগ থাকলেও কারো শাস্তি হয় না। এমনকি তদন্তও হয় না। বিশেষ পরিস্থিতিতে পুরোনো কর্মস্থল সরকারি কলেজে ‘শাস্তিমূলক বদলি’ করা হলেও তারা নানা কৌশল খাটিয়ে আবার ঢাকায় চলে আসছেন কর্মকর্তা হয়ে। যুক্ত হচ্ছেন মাউশি, ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষাসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরসহ (ডিআইএ) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।

জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, শিক্ষক হিসেবে কেউ নিয়োগ পেলে তার শিক্ষকতায় যুক্ত থাকা উচিত। কর্মকর্তা হয়ে শিক্ষকতায় আর ফিরে না যাওয়ার বিষয়টিতে সমর্থন করা যায় না। তা ছাড়া শিক্ষকদের দীর্ঘদিন শিক্ষকতার বাইরে থাকা ঠিক নয়। শিক্ষকতার বাইরে অনেক দিন ধরে থাকলে পাঠদানের চর্চাও কমে যেতে পারে।

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, কলেজে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অবশ্যই সংকট আছে। অনেকে শিক্ষকতা ছেড়ে কর্মকর্তা হওয়ায় সংকট আরো বাড়ছে। বিষয়টাতে সরকারের নজর দেওয়া দরকার। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত করে প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এমপিওতে অনিয়ম :

জানা গেছে, দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগের পরও মাঠপর্যায়েই থাকছে এমপিও কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব। বর্তমান পদ্ধতি বদল করে আগের ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে এমপিওভুক্তির এখতিয়ার শুধু মাউশিতে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল গত জুলাই মাসে। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে এমপিওর জন্য আগে বর্তমানের চার স্তরে চলমান দুর্নীতির পদ্ধতিই বহাল থাকছে বলে অনেক শিক্ষকের অভিযোগ।

কর্মকর্তারা বলছেন, অনলাইনে এমপিওভুক্তি কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণের পর একজন শিক্ষককে এমপিও পেতে কমপক্ষে চার জায়গায় ঘুষ দিতে হচ্ছে। ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার নিচে কোনো শিক্ষকের পক্ষে এমপিও পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ৯ অঞ্চলের আঞ্চলিক উপপরিচালকরা (ডিডি) এ ঘুষবাণিজ্যের অন্যতম হোতা।

বেতন খাতে হিসাবে অমিল :

জানা গেছে, শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন খাত থেকে গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে ৬১৪ কোটি টাকা গোপনে সরিয়ে ব্যাংকে রেখে লভ্যাংশ নিয়ে আসছে প্রভাবশালী চক্র। ৬১৪ কোটির টাকার প্রতি বছরে মুনাফা আসে ৩০ কোটি টাকা। সাড়ে তিন বছরে যা হয় ১০০ কোটি টাকা। মূল টাকা ব্যাংকে পড়ে থাকলেও মুনাফার টাকা কোথায় যায়, এর হদিস নেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারো কাছে। সরকারের টাকা নিয়ে দুর্নীতিরত চক্রের কথা মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তা জানেন না। মাউশি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে ওই চক্র গড়ে উঠেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এ অনিয়ম ও জালিয়াতির বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েও পায়নি।

এর আগে গত চারদলীয় জোট সরকারের আমলেও (২০০১-২০০৬) শিক্ষকদের সরকারি বেতনের টাকা নিয়ে চরম দুর্নীতি চলে। যা ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ধরা পড়ে। তখন জমে থাকা ১০০ কোটি টাকা ফেরতের উদ্যোগও নেওয়া হয়। তবে সরকার পরিবর্তনের পরপর ফাইল চাপা পড়ে যায় সব উদ্যোগ।

536 ভিউ

Posted ৩:৩১ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com