একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের রাজনীতির দিকে চোখ রাখছেন কূটনীতিকরা। নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দলটি তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন করে, তার দিকে নজর রাখছেন তারা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সার্বিক স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বিশ্লেষণ করছেন পশ্চিমা কূটনীতিকরা।
ঢাকায় বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশন সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন কূটনীতিকরা। বিশেষ করে পশ্চিমা কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগের প্রতিটি পদক্ষেপের দিকে চোখ রাখছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন দেখতে চাইছে। আর এজন্য আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়টিতে নিশ্চয়তা খুঁজছেন কূটনীতিকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পশ্চিমা এক কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশে মূলত অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় বিদেশীরা, যেখানে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। এর মাধ্যমে দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা ফিরে আসবে। এক্ষেত্রে কূটনীতিকরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি বেশি পর্যবেক্ষণ করছেন। কারণ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রী ও দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে বেশ স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন বাংলাদেশে আর হবে না। তার এমন প্রতিশ্রুতির ওপর ভরসা রাখতে চান কূটনীতিকরা।
তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আশঙ্কার জায়গা তৈরি হয়েছে বলেও জানান এ কূটনীতিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের আগে সহিংসতা লক্ষ্য করা গেছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এখনো কোনো ধরনের সহিংসতা হয়নি, যা খুবই ইতিবাচক। তবে রাজনৈতিকভাবে বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী দল আওয়ামী লীগ যদি বিরোধী দলগুলোকে ন্যূনতম রাজনৈতিক পরিবেশ প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।
এদিকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার পিছপা হবে না বলে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। একই অনুষ্ঠানে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য জরুরি বলে মন্তব্য করেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট। আর ব্রিটিশ হাইকমিশনার এলিসন ব্লেক বলেন, বাংলাদেশে সহনশীল রাজনৈতিক অনুশীলন ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ চান তারা।
সূত্র জানায়, সব দলের অংশগ্রহণে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চান কূটনীতিক ও অংশীদাররা। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কিংবা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন দেখতে চান না তারা।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্য দেশগুলো ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। এখনো তাদের সেই অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। এ অবস্থায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে ইসিকেই শক্তিশালী ভূমিকায় দেখতে চায় তারা।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কূটনীতিক বলেন, একটি দেশের সুনাম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্য বিষয়গুলোর পাশাপাশি অবাধ এবং স্বচ্ছ জাতীয় নির্বাচনের ওপর নির্ভর করে। অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন করার প্রথম পদক্ষেপ হলো, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও সব দলের অংশগ্রহণ। যদি তা নিশ্চিত করা না যায়, তবে আগের মতো সহিংসতা বাংলাদেশে জেঁকে বসবে। আবারো এ সহিংসতা শুরু হলে তা এদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা হতে হবে স্বাধীন। সেই সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক চাপ মোকাবেলা করার ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকা প্রয়োজন।