কক্সবাংলা ডটকম(১৯ নভেম্বর) :: সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে রবিবার দেশের পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। তবে দুই বাজারেই লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতায় বাজারের এই সংকট। তবে রোববার বেশ কিছু হাউজ থেকে ফোর্সড সেলের (বাধ্যতামূলক শেয়ার বিক্রি) অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রবিবার(১৯ নভেম্বর) পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের শুরুতে ঋণাত্মক হয়ে পড়া সূচক দিনের পুরো সময়জুড়েই ঋণাত্মক থাকে। এমনকি লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দরপতনের মাত্রও বাড়তে থাকে। ফলে একদিনে দাম কমার তালিকা বড় হয়, অন্যদিকে সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ৩৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৩টির। আর ১৬১টির দাম অপরিবর্তিত। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৬ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৪০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৩৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৩৬০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৭৩ কোটি ১০ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে বাজারটিতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ফু-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৫ কোটি ৮৭ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের ২০ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইস্টার্ণ ইন্স্যুরেন্স, ফু-ওয়াং ফুড, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, প্যাসেফিক ডেনিমস, ইয়াকিন পলিমার, মুন্নু সিরামক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ইভিন্স টেক্সটাইল।
এদিকে চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) আয় তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়েছে। আর আগের বছরের তুলনায় কমেছে প্রায় ২৬ শতাংশ। ফ্লোর প্রাইসের কারণে পুঁজিবাজারে লেনদেন কমে যাওয়ায় আয় ও মুনাফা কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিএসইর আয় নেমেছে ২৩৮ কোটি ১৭ লাখ টাকায়, যা আগের বছরে ছিল ৩২১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আয় কমেছে ৮৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ২৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তার আগের বছরেও আলোচ্য বছরের তুলনায় আয় বেশি ছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে ডিএসইর আয় দাঁড়িয়েছিল ২৬৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
একই সঙ্গে ডিএসইর কর-পরবর্তী মুনাফা কমেছে ৪৪ কোটি ৭ লাখ টাকা বা ৩৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২০২১-২২ সালে এক্সচেঞ্জটির কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ১২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অথচ ২০২২-২৩ সালে তা নেমেছে ৮০ কোটি ৬৩ লাখ টাকায়।
ডিএসইর আয়ের প্রধান উৎস লেনদেনের ওপর ধার্য করা কমিশন ফি। গত এক বছরে ফ্লোর প্রাইসের কারণে লেনদেনে খরা দেখা দিয়েছে পুঁজিবাজারে। যার কারণে ডিএসইর আয়েও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিএসইর কমিশন আয় অর্ধেকে নেমেছে। ৫০ শতাংশ কমে কমিশন আয় হয়েছে ৭৮ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট আয়ের ৩৯ শতাংশ।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ডিএসইর আয়ের বড় উৎস হলো ট্রেডিংয়ের ওপরে প্রাপ্ত কমিশন। ফ্লোর প্রাইস দিয়ে তো পুঁজিবাজারকে ড্রাই করে ফেলা হয়েছে। ট্রেড হচ্ছে না। তাহলে কমিশন আসবে কীভাবে? আয় তো কমবেই।
মুনাফা কমে যাওয়ায় বছরটিতে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশও কমিয়েছে ডিএসই। ২০২২-২৩ সালের জন্য ৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ সুপারিশ করেছে ডিএসই। আগের অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডাররা ৬ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন।
গত বছরের শুরুতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশের পুঁজিবাজারে দরপতন শুরু হয়। বিনিয়োগকারীদের পুঁজির সুরক্ষার অজুহাতে গত বছরের ২৮ জুলাই সব শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। শুরুর দিকে ফ্লোর প্রাইস আশীর্বাদ মনে হলেও ধীরে ধীরে তা পুঁজিবাজারকে মন্দার দিকে ঠেলে দেয়। দেড়-দুই হাজার কোটি টাকার ঘরে ওঠানামা করা লেনদেন নেমে আসে ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার ঘরে। ১৫০ ও ২০০ কোটি টাকার ঘরেও লেনদেন হয়েছে।
লেনদেন-খরার জন্য দায়ী ফ্লোর প্রাইস। ডিএসইতে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার এখন ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। এই দরে হাজার হাজার বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতা নেই। ফলে এসব শেয়ার বিক্রি করে নতুন করে শেয়ার কিনতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। এতে স্বাভাবিকভাবেই লেনদেন তলানিতে ঠেকেছে, যা ডিএসইর আয় ও মুনাফায় ধস নামিয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান বলেন, গত বছরে শেয়ার লেনদেন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। যার কারণে ডিএসইর আয় কমেছে। অন্যদিকে আয় কমলেও ব্যয় বেড়েছে। ফলে আয়ের সঙ্গে মুনাফাও হ্রাস পেয়েছে।
Posted ২:০৭ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২০ নভেম্বর ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta