কক্সবাংলা ডটকম(২৬ ফেব্রুয়ারি) :: গত কয়েক দিনে আক্রান্ত হয়েছে গণমাধ্যম। আর এই আক্রান্তের ঘটনার ফলে গণমাধ্যমের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। গণমাধ্যমের অনেক নেতৃস্থানীয় এই বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করছেন। অন্যথায় গণমাধ্যম আন্দোলনে যেতে পারে, এমন আশঙ্কার কথাও বলা হচ্ছে।
নোয়াখালীতে সাংবাদিক বুরহানের মৃত্যুর পর গতকাল কারাবন্দী লেখক মুশতাকের মৃত্যু, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ইত্যাদি নিয়ে গণমাধ্যমের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
গণমাধ্যমের অনেকেই মনে করছেন যে, সরকারের ভেতরের একটি মহল পরিকল্পিতভাবে গণমাধ্যমকে সরকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে চাইছে। নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সহিংসতায় নিহত হন সাংবাদিক বুরহান। তার বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন হচ্ছে এবং এই আন্দোলনের ঢেউ ঢাকায়ও এসে পড়েছে।
বিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নের দুটি গ্রুপই ধাপে ধাপে কর্মসূচি নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এই ঘটনা যখন কেবল পুঞ্জিভূত হচ্ছে সেই সময় একটি বড় আঘাত এসেছে কারাবন্দী লেখক মুশতাকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মুশতাককে আটক করা হয়েছিল এবং গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে তাকে রাখা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে কারাগারের ভেতর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর প্রথমে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
পরে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। মুশতাককে আটক করা হয়েছিল রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্তের অভিযোগে। এই অভিযোগে আরও দু`জনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা ভালো নয় বলে তার পরিবারের সূত্রে জানানো হয়েছে।
কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ, রাষ্ট্রচিন্তার কর্মী দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা গুজব ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। এই অভিযোগে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
এই গ্রেফতারের পর দীর্ঘদিন ধরেই তারা কারাগারে আছেন এবং এই কারাগারে মৃত্যু ঘটলো মুশতাকের। মুশতাকের মৃত্যুকে গণমাধ্যমের কেউ কেউ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে করছেন। এটি নিয়ে শুধু সাংবাদিকদের মধ্যে নয়, ছাত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনেও উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে।
গত কিছুদিন ধরেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার এবং বিভিন্নভাবে গণমাধ্যম কর্মীদের উপর ভয়-ভীতি ইত্যাদি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে। কয়েকদিন আগেই বিডিনিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কম-এর পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন যে, এক ব্যক্তি বিডিনিউজকে কিছু খবর তুলে ফেলার জন্য হুমকি দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু কিছু ধারা বাতিলের ব্যাপারে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে আবার নতুন করে কথাবার্তা উঠেছে।
এই আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে এবং যথেচ্ছভাবে আইনকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে। এখন পরপর এই দুটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গণমাধ্যমকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করা হচ্ছে কিনা সে প্রশ্ন উঠেছে।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন যে সরকারের ভেতরে একটি অশুভ শক্তি ক্রিয়াশীল। এরা নানাভাবে গণমাধ্যমকে সরকারের বিরুদ্ধে উস্কে দিচ্ছে। তাদের ব্যক্তিগত অনিয়ম-দুর্নীতির স্বেচ্ছাচারিতা ঢাকার জন্য তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ব্যবহার করছে। এর ফলে সরকারের সঙ্গে গণমাধ্যমের যে দীর্ঘ দিনের একটি সুসম্পর্ক ছিল, সেই সুসম্পর্কে এক ধরনের টানাপোড়ন তৈরি হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, গণমাধ্যমকে যদি সরকারের প্রতিপক্ষ বানানো হয়, সেটা সরকারের জন্যে শুভ লক্ষণ হবেনা।
গণমাধ্যমে সমালোচনা থাকতেই পারে। কিন্তু সরকারের ভিতর কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তির ন্যূনতম সমালোচনা সহ্য করতে পারছেন না। আর এই প্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন উঠেছে যে গণমাধ্যমকে কি সরকারের প্রতিপক্ষ করা হচ্ছে এবং এই প্রতিপক্ষ করার ক্ষেত্রে একটি মহল অতি উৎসাহী?
কারাগারে থাকা অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে বামপন্থী কয়েকটি ছাত্র সংগঠন রাজধানীতে মশাল মিছিল করেছে। এসময় মশাল মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এসময় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় টিএসসি থেকে মশাল মিছিল বের করেন। মিছিলটি শামসুন্নাহার হল ঘুরে শাহবাগের জাদুঘরের সামনে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। এরপরই পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটেন ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। পরে তারা ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে অবস্থান নেন। সেখানে আবার পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। এ সময় পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়েন নেতাকর্মীরা। প্রথমে পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। পরে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাবির নেতা আরাফাত সাদসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি তাসিন মল্লিক জানান, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ১০-১২ জনের বেশি নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন। এরা হলেন- ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ, ছাত্র ইউনিয়নের ইংলিশ মিডিয়ামের ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক শ্রাবণ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশ্রাফি নিতু, ছাত্র ইউনিয়নের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সদস্য অন্তু অরিন্দম, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক নাজিফা জান্নাত।