বুধবার ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

সরকারের সামনে যত চ্যালেঞ্জ

বুধবার, ০৩ জানুয়ারি ২০১৮
285 ভিউ
সরকারের সামনে যত চ্যালেঞ্জ

কক্সবাংলা ডটকম(২ জানুয়ারী) :: চলতি বছর সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর মূলে রয়েছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা। ক্ষমতাসীনদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে হলে সরকারকে নির্বাচনী রাজনীতির বড় ধাক্কা সামাল দিতে হবে। একই সঙ্গে পুনরায় ক্ষমতায় আরোহণ করতে হলে ভোটারদের আস্থা অর্জন ও ভোটের মাঠ অনুকূলে রাখার বিষয়টিও সরকার এবং ক্ষমতাসীনদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

শুধু জাতীয় নির্বাচনই নয়; নতুন বছর দেশে সার্বিক ভোটের বছরও। ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে নির্বাচন যাত্রা। সংবিধান অনুযায়ী, ২৪ এপ্রিলের আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে। বর্তমান সংসদের দুটি আসনে উপনির্বাচনও হবে ফেব্রুয়ারি-মার্চে। এরপর মার্চ থেকে জুনের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে পাঁচ সিটিতে ভোটের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। এরপরই জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি।

৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছে ডিসেম্বরেই নির্বাচন। সেটি হলে অক্টোবরেই ভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে হবে। নভেম্বরের মাঝামাঝি ঘোষণা হতে পারে তফসিল। এছাড়া বছরের বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় সরকারের ইউপি, পৌরসভা ও উপজেলাসহ অন্যান্য ছোট ছোট নির্বাচনও থাকছে।

বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের আগে ছয় সিটি নির্বাচন দেশের রাজনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্র্ণ হয়ে উঠবে। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের মূল পরীক্ষা দিতে হবে সরকারকে। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি স্বাধীন শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রমাণ রাখতে হবে এসব নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। নতুবা নির্বাচন কমিশন ঘিরেও দেখা দিতে পারে রাজনীতিতে নতুন জটিলতা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল লক্ষ্য জাতীয় নির্বাচন। সেটাকে কেন্দ্র করেই সরকার ও ক্ষমতাসীনদের সামনে এখন দুই ধরনের চ্যালেঞ্জ। একটি হচ্ছে অবশ্যই এ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। সেজন্য বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে হবে। নির্বাচন কেন্দ্র করে দেখা দেওয়া সংকটের সমাধান করতে হবে। অন্যদিকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে হলে ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে হবে।

সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়েই ক্ষমতার পালাবদলে যেতে হবে। এই দুই চ্যালেঞ্জের কোনো একটি পূরণে ব্যর্থ হলে আগামী নির্বাচনও বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো বিতর্কিত হয়ে পড়বে। নির্বাচিত সরকারও বিতর্কের মুখে পড়বে।

এ দুই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার ও ক্ষমতাসীনদের মোটা দাগে চার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এগুলো হলো—রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাসহ সামাজিক সুরক্ষা।

তাদের মতে, অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভোটযুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে ক্ষমতাসীনদের অবশ্যই এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও প্রবীণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। সেটি করা গেলে আর কিছু লাগে না। এর জন্য নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের মতো করে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। সরকার যদি কোনোভাবে কোনোটিতে প্রভাব বিস্তার করে বা অসৎ ইচ্ছে পোষণ করে, তা হলে গতবারের মতো এবারও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

তবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দায়িত্ব শুধু সরকারের একার নয়; বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সামাজিক সংস্থারও রয়েছে। এখন সরকার কীভাবে নির্বাচনী রাজনীতি সামাল দেয়, সেটি দেখার বিষয়।

এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, নির্বাচনের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে যে সংকট, তার রাজনৈতিক সমাধান দরকার। বিএনপি হয়তো নির্বাচনে যাবে ঠিকই, কিন্তু শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়াতে পারে। তা হলেও কিন্তু নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থেকে যাবে।

এসব নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার ও ক্ষমতাসীনদের প্রস্তুতির কথা জানা গেছে। তবে নির্বাচন কেন্দ্র করে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মুখোমুখি অবস্থান সরকারকে বেশ বেকায়দায় ফেলতে পারে। আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধানে বলা হয়েছে কীভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই।

এ বিষয়ে আলোচনারও কোনো প্রয়োজন নেই। কোনো দল নির্বাচন করবে বা করবে না, তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় দলতন্ত্রের ভয়াবহ প্রভাব বিস্তারের কারণে নির্বাচন কারচুপি ও কারসাজিমুক্ত হবে না, তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়।

এ অবস্থায় নির্বাচন যেন দলীয় প্রভাবমুক্ত, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে, সেই লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে একটি সমঝোতা হওয়া জরুরি।

অবশ্য প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত বছর তার বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যে এবারের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে বলে দলের নেতাদের জানিয়েছেন এবং সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

সর্বশেষ গত ১৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের যৌথসভায় ‘আলোচনার মাধ্যমে’ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ তৈরি, নির্বাচনে বিএনপি আসবে ও আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সর্বশেষ  সচিবালয়ে সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগামীতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি ভালো জাতীয় নির্বাচন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির ভয়ের কোনো কারণ নেই, ভালো নির্বাচন হবে। আতঙ্ক-অনিশ্চয়তা কিছুই থাকবে না, সব কেটে যাবে। এমনকি নির্বাচন যথাসময়ে ও বিএনপিসহ অন্যান্য দল নিয়ে অংশগ্রহণমূলক হবে বলেও দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে বিপরীত মেরুতে থাকা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে সমঝোতা হতে হবে।

যদিও বিদায়ী বছর দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো ছিল। চলতি বছর উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার স্বীকৃতি পেতে চলছে দেশ। আগামী মার্চে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট কমিটি এ স্বীকৃতি দেবে। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়। নির্বাচনী বছরে এর সুফল পাবে ক্ষমতাসীনরা।

কিন্তু অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা কাটাতে না পারলে এবং চালসহ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে ভোটযুদ্ধ বুমেরাং হতে পারে। কারণ বিদায়ী বছর দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষ বেশ কষ্ট করেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘিরে দেশে যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে না পারে; সেজন্য সার্বিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনও। ধারণা করা হচ্ছে, রায়ে বিএনপিপ্রধান দণ্ডিত হলে এটিকে ঘিরে আসন্ন নতুন বছরে হঠাৎ করে রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।

প্রশাসনের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের আগে দশম সংসদ নির্বাচনের চার বছর পূর্তি ঘিরেও বিএনপি রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়ানোর চেষ্টা করতে পারে—এমন তথ্য রয়েছে প্রশাসনের কাছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপি প্রতিবছর দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। ২০১৫ সালে দিনটিকে ঘিরে টানা ৯৩ দিন অবরোধ করেছিল বিএনপি।

আসছে ২০১৮ সালকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের বছর হিসেবে ধরা হচ্ছে। আবার এ বছরেই যেকোনো দিন খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মূলত রায় ও নির্বাচন সামনে রেখে ৫ জানুয়ারি কেন্দ্র করে বিএনপি আগে থেকেই মাঠ-রাজনীতি গরম করার চেষ্টা করতে পারে। এমন তথ্য থেকেই আগামী ৫ জানুয়ারি ঘিরেও সার্বিক প্রস্তুতি রাখছে প্রশাসন।

এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বেগম জিয়ার মামলার রায় কেন্দ্র করে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে প্রশাসনকে চাঙা করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ সচিবপদ ও মাঠ প্রশাসনে নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনে বঞ্চনা ও নিম্নস্তরে কর্মকর্তাদের স্বল্পতাকে সামাল দিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সূত্র আরো জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের শেষ বছরে প্রশাসন যাতে বিগড়ে না যায়, সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। এজন্য সচিবসহ ৫৫টি জেলায় ডিসি বদল হচ্ছে। এ মাসেই সচিব পদেও জেলা প্রশাসকদের নিয়োগ দেওয়া হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে রদবদল শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নতুন মুখ্যসচিব করা হয়েছে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের পদে আরো কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। এছাড়া বছরের মাঝামাঝিতে মন্ত্রিসভায় আরেক দফা রদবদল হতে পারে বলেও আভাস পাওয়া গেছে। বিভিন্ন পর্যায়ে দলীয় কোন্দল মিটিয়ে নির্বাচনী মাঠ অনুকূলে রাখতে ক্ষমতাসীনরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।

285 ভিউ

Posted ১২:২২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৩ জানুয়ারি ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com