কক্সবাংলা ডটকম(২৪ অক্টোবর):: আমাদের শেশব-কৈশোরে রাজত্ব করেছে পানির দামে বেচা প্রগতি প্রকাশনের বই। আমরা অবাক বিস্ময়ে অক্টোবর বিপ্লবের কথা পড়েছি। আমাদের যৌবনে সোভিয়েত ইউনিয়নে চিড় ধরতে শুরু করেছে। কাস্তে ও হাতুড়ি প্রতীকের তেজ হ্রাস পেয়েছে।
আমাদের সময় যখন আরো গড়ায়, এ দেশে যাদের মনে হয়েছিল অক্টোবর বিপ্লবেরই সন্তান, তাদের কেউ কেউ মার্ক্স-এঙ্গেলস আর তাদেরই মহামতি লেনিনকে ভুলে আখেরাতের তসবিহ জপতে শুরু করেছেন, কেউ কেউ হয়ে গেছেন তাদেরই বিরোধীদের লেজুড়— টিকটিকির লেজের মতো তারা মাঝে মাঝে খসেও যান। অনস্বীকার্য সবাই নিঃশেষ হয়ে যাননি, নিবু নিবু প্রদীপ কারো কারো অন্তরে এখনো জ্বলছে।
অনেক বছর আগে বিপ্লবী অমূল্য লাহিড়ীকে সিরাজগঞ্জে লাহিড়ী মোহনপুরের বাড়িতে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার বিপ্লবের স্বপ্ন কি তাহলে মিথ্যে হয়ে গেল?
বিনয়ী জমিদার বিপ্লবী লাহিড়ী মহোদয় বললেন, তা কেন হবে। আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে, দেশে সমাজতন্ত্র কায়েম হয়েছে।
বিস্ময় প্রকাশ করতে দেখে তিনি বললেন: লাহিড়ী বাড়ির সামনে দিয়ে পায়ে জুতো, মাথায় ছাতা নিয়ে কেউ যেতে সাহস পেত না, বাড়ির আঙিনায় ঢোকার প্রশ্নই আসে না। আর এখন এই দেখুন (তিনি আমগাছগুলোর দিকে আঙুল উঁচিয়ে) গাছে একটি আমও নেই। বাড়ির ভেতরে ঢুকে যে যার খুশিমতো আম পেড়ে বেপাত্তা হয়ে গেছে, আমার ভাগেরও কিছু থাকেনি— তাহলে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আর বাকি রইল কোথায়?
প্রতীকী সমাজতন্ত্র তো বটেই!
বিপ্লবের অক্টোবর
দাপ্তরিকভাবে এর নাম দ্য গ্রেট অক্টোবর সোস্যালিস্ট রেভল্যুশন। এটি ১৯১৭-এর ২৫ অক্টোবরের সশস্ত্র বিপ্লব। নতুন ক্যালেন্ডারে তারিখটি ৭ নভেম্বর ১৯১৭।
ফেব্রুয়ারি বিপ্লবে বহু বছরের বিস্ফোরিত অসন্তোষ জার শাসনের অবসান ঘটাল। জার দ্বিতীয় নিকোলাস ক্ষমতাচ্যুত হলেন। বলশেভকীয় ভাষায় এটি বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব। একদিকে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতা দখল করে, অন্যদিকে শ্রমিক ও সৈনিক সমন্বয়ে পেট্রোগ্রাদ সোভিয়েতের উদ্ভব ঘটে। পাশাপাশি দুটো সরকার! লেনিনকে জার্মান দালাল অ্যাখ্যা দিয়ে ক্ষমতাসীন সরকার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে, লেনিনের মতো গুপ্তচরদের নির্মূল করার এবং শ্রমিক ও সৈনিকদের সোভিয়েত ভেঙে দেয়ার ঘোষণা দেয়।
এর আগে ১৯১৭-এর ৭ এপ্রিল ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের ‘এপ্রিল থিসিস’ প্রাভদা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাতে অন্তর্বর্তী সরকারকে উচ্ছেদ করে শ্রমিকশ্রেণীর সাম্যবাদী সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হয়।
লেলিন ফিনল্যান্ডে চলে যান। তিনি তার পেছনে ব্যাপক শ্রমিক ও সৈনিক সমর্থন রয়েছে, এটা নিশ্চিত হয়ে অক্টোবরে ফিরে আসেন এবং ১০ অক্টোবর ১৯১৭ বলশেভিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির গোপন সভায় সশস্ত্র অভ্যুত্থানের সিদ্ধান্ত নেন। ২৩ অক্টোবর ১৯১৭ বলশেভিকদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ১০-২ ভোটে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়: ‘সশস্ত্র অভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে পড়েছে আর অভ্যুত্থানের এখনই উপযুক্ত সময়। পেট্রোগ্রাদ (সেন্ট পিটার্সবার্গ) তখন রাশিয়ার রাজধানী। অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর প্রধান সামরিক, আধাসামরিক ও বেসামরিক প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে বলশেভিকদের সমর্থন জানায়।
২৫ অক্টোবরের রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান বলশেভিকদের ক্ষমতাসীন করে। প্রধানমন্ত্রী কেরেনস্কি পালিয়ে যান। লেনিন রাশিয়ার নাগরিকদের কাছে ঘোষণা দেন, সামরিক বিপ্লবী কমিটি সরকারকে উত্খাত করেছে।
পরদিন ২৬ অক্টোবর কাউন্সিল অব পিপলস কমিশার্স লেনিনকে নতুন সোভিয়েত সরকারের নেতা নির্বাচন করে পরদিনই মেনশেভিকরা জর্জিয়ার ক্ষমতা দখল করে এবং জর্জিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করে। এ ধরনের আরো বিরোধিতা হলেও শেষ পর্যন্ত লেনিন নেতৃত্বের বলশেভিকরা পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন
শ্রমিকের হাতুড়ি আর কৃষকের কাস্তে শোভিত পতাকার নিচে অন্তত তাত্ত্বিকভাবে হলেও কৃষক-শ্রমিক রাজত্ব কায়েম হলো। দ্রুত জারি করা ডিক্রিতে বিপ্লবী সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বাস্তবায়ন হলো:
ক. ভূসম্পদের ওপর ব্যক্তিমালিকানার অবসান, সব জমি রাষ্ট্রায়ত্তকৃত হলো।
খ. রাশিয়ার সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হলো।
গ. ব্যক্তিমালিকানাধীন সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে অর্থ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হলো।
ঘ. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান চার্চের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের কাছে ন্যস্ত করা হলো।
ঙ. বিদেশের প্রাপ্য সব ঋণ ফেরত প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হলো।
চ. সব ফ্যাক্টরির কর্তৃত্ব সোভিয়েতের হাতে হস্তান্তর হলো।
ছ. যুদ্ধের সময় যে মজুরি ধার্য ছিল, তার চেয়ে বেশি মজুরি ধার্য করা হলো। শ্রমিকের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আটে নামানো হলো।
জার পরিবার নিধন
১৯১৭-এর ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পর দ্বিতীয় জার নিকোলাস ক্ষমতাচ্যুত হন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। অক্টোবর বিপ্লবের পর ক্ষমতাসীন হয় লেনিনের নেতৃত্বাধীন বলশেভিক সরকার।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর রুশ রাজকীয় রোমানভ পরিবারের জার নিকোলাস রোমানভ, তার স্ত্রী জারিনা আলেকজান্দ্রা, তাদের পাঁচ সন্তান ওলগা, তাতিয়ানা, মারিয়া, আনাস্তাসিয়া ও আলেক্সি এবং তাদের সঙ্গী ইউজিন বটকিন, আনা দেমিদোভা, আলেক্সি ট্রাপ ও ইভান খারিতোলভ গ্রেফতার হন। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তর হন। ভূগর্ভস্থ সেলারসহ সদ্যনির্মিত ইপাটিয়েভ হাউজে তাদের আনা হয়।
২৯ জুন ১৯১৮ উরাল আঞ্চলিক সোভিয়েত রোমানভ পরিবারের সবাইকে হত্যা করার ব্যাপারে একমত পোষণ করে। সিদ্ধান্তটি মস্কোয় ২৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলে লেনিনসহ তিনজন সদস্যের উপস্থিতিতে আঞ্চলিক সোভিয়েতকে ক্ষমতা প্রদান করা হয়।
১৬-১৭ জুলাই মধ্যরাতে তাদের সবাইকে বেজমেন্টের সেলারে ঢুকিয়ে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জার শাসনের নির্মমতা আর বিপ্লবীদের নির্মমতার মধ্যে কোনো তফাত থাকে না।
১৯২৬ সালের আগে সোভিয়েত সরকার এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকারই করেনি। ১৯৮৯-এর গ্লাসনস্তের সময় একজন শখের গোয়েন্দা জার পরিবারকে মাটিচাপা দেয়া স্থানটি আবিষ্কার করেন এবং ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে মৃতদের যথার্থ বলেই শনাক্ত করা হয়।
লেনিনও একসময় রোমানভ পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্কিত ছিলেন। হত্যার সম্মতি তারই, এ দাবি অনেকেরই, তিনি অন্তত শিশুদের বাঁচাতে পারতেন। রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেিসন এ হত্যাকাণ্ডের বহু বছর পর বলেছেন, এটি রুশ ইতিহাসের লজ্জাজনক পৃষ্ঠা।
রাষ্ট্রকথন
অক্টোবর বিপ্লবের প্রধান লক্ষ্য রাষ্ট্রচরিত্র পরিবর্তন। একটি সরলীকৃত ব্যাখ্যা হচ্ছে, মানব সৃষ্টির পর রাষ্ট্র বলে কিছু ছিল না। সুবিধালোভী চতুর মানুষ তার প্রয়োজন চরিতার্থ করার জন্য রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছে।
লেনিন লিখেছেন:
‘আদিম সমাজে মানুষ যখন ছোট ছোট পারিবারিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে বসবাস করত এবং যখন তারা ক্রমবিকাশের নিম্নতম ধাপে, প্রায় বন্য অবস্থায় ছিল— আধুনিক সভ্য মানবসমাজের সঙ্গে যে অবস্থার কয়েক হাজার বছরের ব্যবধান— তখন রাষ্ট্রের অস্তিত্বের চিহ্নমাত্র ছিল না… কোথাও এমন বিশেষ ধরনের লোক দেখা যেত না, যাদের হাতে অন্যদের শাসন করার ভার এবং শাসন চালানোর জন্য যাদের হাতে নিয়মিত ও স্থায়ীভাবে রয়েছে বলপ্রয়োগের বিশেষ যন্ত্র, পীড়নের যন্ত্র। আপনারা সবাই বোঝেন, আজকের দিনে ওই যন্ত্র হল সশস্ত্র সৈন্যবাহিনী, কারাগার ও বলপূর্বক অন্যের ইচ্ছাকে আয়ত্তে আনার অন্যান্য উপায়, এর সবই হলো রাষ্ট্রের আসল মর্মবস্তু।’— রাষ্ট্র হলো মানবসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এক ধরনের শাসন ও শোষণযন্ত্র, যার মাধ্যমে একশ্রেণীর মানুষ অন্যশ্রেণীর মানুষের ওপর আধিপত্য বজায় রাখে।
দুর্ভাগ্যবশত সোভিয়েত রাষ্ট্রও জনগণের দোহাই দিয়ে একশ্রেণীর মানুষের শোষণের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল। সে দৃশ্যটি ‘গুলাগ আর্কিপািলাগো’ নামের উপন্যাসে তো বটেই, বিপ্লবোত্তর বহু লেখকের রচনায় তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জর্জ অরওয়েলের ব্যঙ্গাত্মক ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ তো সমাজতান্ত্রিক শোষকদেরই কাহিনী।
সমাজতন্ত্রই একমাত্র পথ
ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থা শ্রেণীবৈষম্য প্রকট করে তোলে। ৯৯ শতাংশ মানুষ সস্তা শ্রম দিয়ে ১ শতাংশ মানুষের লাভের জোগান দেয়। সমাজতন্ত্র এই শ্রেণী বিভাজন ভেঙে দেয়।
সমাজতন্ত্রই যে একমাত্র পথ, এর পক্ষে আরো কিছু কথা:
ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণতন্ত্র একটি মায়া মাত্র। জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটে সমাজতন্ত্রে। ধনতন্ত্রে মালিকের স্বার্থ ও লাভ মুখ্য— শ্রমিকের অধিকার গৌণ। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিয়ন্ত্রণ থাকে। ধনতান্ত্রিক গণতন্ত্রে পুলিশ হচ্ছে ধনতান্ত্রিক স্বার্থের সশস্ত্র প্রহরী, ন্যায়বিচারের স্থান সেখানে নেই। সমাজতন্ত্র সাম্য ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। ধনতন্ত্রে মানুষের মৌলিক অধিকার বিপন্ন, সমাজতন্ত্রে তার নিশ্চয়তা রয়েছে। সমাজতন্ত্রে গণমাধ্যম জনশক্তি সমর্থিত গণতন্ত্রে রাজত্ব করে মারডক মিডিয়া।
বিপ্লব রফতানিযোগ্য পণ্য!
১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯২০ মার্কিন সংবাদ সংস্থা ইউনিভার্সাল সার্ভিসের প্রতিনিধি কার্ল ভিগান্দের প্রশ্ন ছিল, রাশিয়া কি পোল্যান্ড ও রোমানিয়া আক্রমণের ইচ্ছা রাখে?
লেনিনের জবাব, না। ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ অভিলাষের কথা আমরা জন কমিশার পরিষদ ও সারা রুশ কেন্দ্রীয় কমিটির তরফ থেকে একান্ত গুরুত্ব দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছি। খুবই দুঃখের কথা যে, ফরাসি পুঁজিবাদী সরকার পোল্যান্ডকে (এবং সম্ভবত রোমানিয়াকেও) আমাদের আক্রমণ করার জন্য উসকানি দিচ্ছে।’
(১৯৩৯ সালে জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন দেশটিকে দখল করে নেয় এবং ১৯৪৭ থেকে সোভিয়েত অনুগত সমাজতান্ত্রিক সরকারের শাসন চলতে থাকে। রোমানিয়া ১৯৪৪ সালে সোভিয়েত সেনাবাহিনীর অধিকারে চলে আসে এবং সোভিয়েত নির্ধারিত সমাজতান্ত্রিক সরকার রাজত্ব করতে থাকে। ১৯৮৯তে দুটো দেশই পুরনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসে। পোল্যান্ডে লেস ওয়ালেসার ক্ষমতাগ্রহণ, রোমানিয়ায় নিকোলাই চসেস্কুর উচ্ছেদের ঘটনা ঘটে।)
তাকে আবার জিজ্ঞেস করা হয়: এশিয়ায় সোভিয়েত পরিকল্পনা কী?
লেনিনের জবাব: ইউরোপের মতোই। নতুন জীবন শোষণহীন। জমিদারহীন, পুঁজিপতিহীন, ব্যবসায়ীহীন, এক জীবনে জাগরণোন্মুখ সব জনগণের সঙ্গে, সব জাতির শ্রমিক ও কৃষকের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহবসবাস। ১৯১৪-১৮-এর সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ, জার্মান-অস্ট্রীয় পুঁজিপতি জোটটির বিরুদ্ধে বিশ্ববণ্টনের জন্য ইঙ্গ-ফরাসি (এবং রুশীয়) পুঁজিপতি জোটটির যুদ্ধ এশিয়াকে জাগিয়ে তুলেছে এবং অন্যান্য দেশের মতোই এখানেও স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ শ্রম ও ভবিষ্যৎ যুদ্ধ নিরোধের আকাঙ্ক্ষা তীব্রতর করছে।
(দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে রাশিয়ার দখলে যাওয়া এশীয় দেশ বা দেশের অংশ— উত্তর কোরিয়া, উত্তর ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ায় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে। উত্তর কোরিয়ায় কিম ইল সুং নিজস্ব ভাবধারা প্রচার করেছেন। ওদিকে চীনে প্রবর্তিত হয়েছে কমিউনিস্ট শাসন।)
কৃষক–মজুরের রাষ্ট্র কি টিকে আছে?
বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান অক্টোবর বিপ্লবের কথা বলতে গিয়ে ফ্রেঞ্চ কথাসাহিত্যিক অঁরি বারবাসের লেখা একটি গল্প শুনিয়েছেন। রাশিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে তৈরি তার সম্পর্কটি পুরনো। ১৯১৭-এর সফল রুশ বিপ্লবের পর বহুসংখ্যক ফ্রান্সবাসী রুশ গ্রেফতার হয়ে কারাবাস করতে থাকেন। নতুন কোনো রুশ বন্দি কারাগারে ঢুকলে আগে ঢোকা রুশ বন্দিরা তার ওপর প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে, খোঁজখবর জানতে চায়, স্বজনদের কথা জিজ্ঞেস করে। নতুন কেউ ঢোকা মানেই কারাগারের ভেতর সাজ সাজ রব পড়ে যাওয়া। কিন্তু একজন কারাবন্দি একেবারে নিশ্চুপ, কাউকে কিছু জিজ্ঞেসও করে না। অন্যরা তাকে দেখে এবং অবাক হয়— কারো সম্পর্কে যে জানবেন, হয়তো এমন কেউ নেই এ নির্বিকার লোকটির।
অনেকদিন পর আরো একজন রুশ বন্দি কারাগারে ঢুকলেই সবাই তাকে নিয়ে মেতে ওঠে। সেদিন দেখা গেল, সেই নির্বিকার সহবন্দি এগিয়ে আসছে। হয়তো তারও কিছু জিজ্ঞেস করার আছে। তাকে দেখে অন্যরা নিশ্চুপ হয়ে কিছুটা সরে গিয়ে তার এগোনোর পথ করে দিল।
নতুন বন্দির মুখোমুখি হয়ে নির্বিকার লোকটি কেবল জিজ্ঞেস করল: রাশিয়ার কৃষক-মজুরের জন্য একটি রাষ্ট্র তৈরি হয়েছিল। তা কি এখনো আছে?
ম্যাক্সিম গোর্কি কী লিখেছেন?
কালজয়ী উপন্যাস গোর্কির ‘মা’।
বিপ্লব ও বিপ্লবোত্তর কালকে ম্যাক্সিম গোর্কি যেভাবে দেখেছেন:
১. টাকা ছাড়া আর কী পয়দা করে এই পুঁজিবাদীরা। হতাশা, ঈর্ষা, লোভ ও ঘৃণা, যাহা তাহাদের অনিবার্য ধ্বংসের মুখে লইয়া যাইবে, কিন্তু বিস্ফোরণকালে যাহা মানুষের সাংস্কৃতিক সম্পদের একটা বড় অংশ ধ্বংস করিবে। আপনাদের এই ভূরিভোজস্ফীত বিকৃত সভ্যতা আপনাদের জীবনে আনিয়াছে এক মর্মান্তিক ধ্বংসের অভিশাপ।
২. শ্রমিক ও কৃষকের সরকার ও ইচ্ছাশক্তি যে নতুন ইতিহাস রচনা করিতেছে, সিংহদরজার ছিদ্র ও ফাটল দিয়া তাহা দেখিয়া পণ্ডিতমূর্খরা মনে করিতেছে, তাহারা সবকিছু দেখিয়াছে, জানিয়াছে। একটি মাত্র জিনিস তাহারা অবশ্য ভালো জানে— তাহারা জানে, তাহাদের জ্ঞাতিভাই পণ্ডিতমূর্খরা তাহাদের ক্ষীণশক্তি দিয়া যথাসাধ্য চেষ্টা করিতেছে রাশিয়ায় আবার নির্বোধতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করিতে, আবার বুর্জোয়া ব্যবস্থা ফিরাইয়া আনিতে। হয়তো তাহারা বুঝিতেছে, শ্রমিক-কৃষকের সরকার যত দৃঢ়পদে সমাজতান্ত্রিক অভিযানে অগ্রসর হইবে, ততই বিচিত্রভাবে আত্মপ্রকাশ করিতে তাহার প্রতি অনিবার্য ধ্বংসের পরোয়ানাপ্রাপ্ত এই আবিলদৃষ্টি নির্বোধের বিদ্বেষ।
৩। লেনিন। বিংশ শতাব্দী ধরিয়া পৃথিবীর সমস্ত শ্রেষ্ঠ মানুষ মানুষের যতখানি কল্যাণ করিয়াছেন, তাহার বেশি করিয়াছেন তিনি সাত বত্সরে। তুলনা করুন, নিজেই বিচার করিয়া দেখুন। দীর্ঘজীবী হোন লেনিন। আজ হইতে ১০০ বছর পরে পৃথিবীতে এমন একটি শহর অথবা গ্রাম থাকিবে না, যেখানে লেনিনের একটি চমত্কার স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠিত হইবে না। যেখানেই থাকিবে মর্যাদার আসন, সেখানেই সে আসন থাকিবে লেনিনের জন্য।
(উদ্ধৃতি তিনটির অনুবাদ সরোজকুমার দত্তের)
লেখকের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা দোষের কিছু নয়। ফরাসি বিপ্লবের ২০০ বছর পূর্তির বছর ১৯৮৯ সালে সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা গুঁড়িয়ে দেয়ার আন্দোলন হয় এশিয়া ও ইউরোপে। প্রতিটি গ্রামে ও শহরে ম্যাক্সিম গোর্কি লেনিনের স্মৃতিসৌধ আশা করেছিলেন। আশা পূরণ হয়নি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। অভ্যুদয় ঘটেছে বহু রাষ্ট্রের। লেনিনের শত শত মূর্তি তার নিজে দেশে ভেঙে গুঁড়ো করেছে তারই দেশবাসী। ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর সর্ববৃহৎ কিয়েভের লেনিন মূর্তি গলায় ফাঁস পরিয়ে নামিয়েছে তারই অনুসারীদের সন্তানসন্ততিরা। কেবল কিয়েভে ভাঙা হয়েছে ১৩২০ লেনিন স্ট্যাচু। একালের গণতান্ত্রিক ও ধনতান্ত্রিক বিপ্লবীরা শতবর্ষ আগের আক্টোবর বিপ্লবকে হঠকারিতা হিসেবে নস্যাৎ করে দিচ্ছেন।
অ্যান্টি-সোস্যালিস্ট, অ্যান্টি-কমিউনিস্ট বিপ্লব ছিল অবিশ্বাস্য রকম অহিংস। রোমানিয়া ছাড়া অন্যত্র তেমন রক্তপাতের ঘটনা ঘটেনি। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব যত দ্রুত পৃথিবীতে ছড়িয়েছে, এর চেয়ে বেশি দ্রুতিতে ছড়িয়েছে সমাজতন্ত্রবিরোধী বিপ্লব। যে শ্রমিকশ্রেণী সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে, সেই শ্রমিকশ্রেণীই পোল্যান্ডে এর বিরুদ্ধাচরণ করেছে।
অক্টোবর বিপ্লবোত্তর বলশেভিক শাসনের শক্তিমত্তা ও কর্যকারিতা প্রশ্নাতীত— সে শাসনকে চ্যালেঞ্জ করার পরিণতি যে গুলাগ-বাম, এটা কবি-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদরা সবাই জানতেন। রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর আনুগত্যের একটি কৌতুক স্মরণ করা যেতে পারে।
বেডরুমে কোথায় হাতঘড়িটা রেখেছেন, স্ট্যালিন মনে করতে পারছেন না। শুনেই কেজিবিপ্রধান বললেন, অবশ্যই চুরি হয়েছে। চোর ধরার জন্য তিনি তিনদিন সময় চেয়ে নিলেন। পরদিন বালিশের নিচে ঘড়িটি খুঁজে পাওয়ার আগক্ষণে কেজিবিপ্রধান তাকে জানান: এ পর্যন্ত নয়জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছি, ছয়জন চুরির কথা স্বীকার করেছে। আশা করছি, আজকের মধ্যে বাকি তিনজনও স্বীকার করবে। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজের রাষ্ট্রসীমানার মধ্যে সৃষ্ট বিপ্লব সামাল দিতে পারল না। মূল দেশ হিসেবে রয়ে গেল রাশিয়া। আরো ১৪টি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটল এ ভূখণ্ড থেকে। দেশগুলো হচ্ছে: ইউক্রেন, বেলারুশ, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, মলদোভা, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ও জর্জিয়া।
বিপ্লবীদের বিজয়ের পর
ডিক্রি হয়ে গেছে— জমির আল ভেঙে ফেলে বিশাল একেকটা রাষ্ট্রীয় খামার সৃষ্টি করা হবে— এর নাম কালেক্টিভাইজেশন। প্রবল উত্সাহে বলশেভিক বিপ্লবীরা কোদাল ও বেলচা নিয়ে জমির আল গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন। সন্ধ্যা নেমে এসেছে, দিনের মতো কাজের সম্পাপ্তি। কাল ভোরে আবার নতুন উদ্যমে সামনের জমিগুলোকে সমান করে দিতে হবে। জমির ওপর ব্যক্তিমালিকানা বলে কিছু থাকবে না। এ বিপ্লবীদেরই একজন দেখলেন আগামীদিনের অপারেশনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে তার জমির আল, মিশে যাবে হাজার হাজার একরের মধ্যে তার নিজস্ব ভূখণ্ড, আর কখনো তা শনাক্তও করতে পারবেন না।
সে রাতের অন্ধকারে শাবল আর একটি খুঁটি নিয়ে নিজের জমির দিকে রওনা হলেন সেই বিপ্লবী, জমিতে পৌঁছলেন। জমিতে গর্ত খুঁড়তে শুরু করলেন। গর্তের অনেক গভীরে পুঁতলেন তার সঙ্গে আনা খুঁটিটি। খুঁটি পোঁতা শেষ হলে জমি সমান করে ধীর-ক্লান্ত পায়ে ফিরে আসছেন আর ভাবছেন, মাটির যত গভীরেই হোক, একদিন না একদিন এ খুঁটির অনুসন্ধান করতে করতেই নিজের জমিটিকে খুঁজে পাবেন।
বিপ্লবী গোষ্ঠীগত সত্তা আর ব্যক্তির আত্মসত্তার বিরোধ নিয়ে লেখা এ গল্পটি একজন রুশ লেখকেরই। আরো অনেক উপাদানের সঙ্গে এ বিরোধটিও বিস্ফোরিত হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনকে ত্বরান্বিত করেছে।
প্রোলেতারিয়েত সাহিত্য
শ্রেণিসচেতন শ্রমিকশ্রেণীর জন্য যে সাহিত্য, যা শেষ পর্যন্ত বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ করে, সচেতন মার্ক্সীয় প্রভাব থাকুক বা না-ই থাকুক, যদি সাম্য প্রতিষ্ঠার প্রেসক্রিপশন তাতে থাকে, তাকেই বলা যায় প্রোলেতারিয়েত সাহিত্য। পেছনের প্রেরণা অক্টোবর বিপ্লব। প্রোলেতারিয়েত সাহিত্য সোভিয়েত সীমান্ত পেরিয়ে প্রায় সব দেশের সব ভাষায়ই কমবেশি রচিত হয়েছে। আরো আগে, এমনকি মার্ক্সীয় থিসিসের উদ্ভব ঘটার আগে রচিত হয়েছে চার্লস ডিকেন্সের ‘হার্ড টাইমস’ ও উইলিয়াম ব্লেকের কবিতা ‘দ্য চিমনি সুইপার’।
সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠন হওয়ার আগে ১৯০৬ সালে প্রকাশিত হয় ম্যাক্সিম গোর্কির উপন্যাস ‘দ্য মাদার’ ও নাটক ‘দ্য এনিমিস’।
বিপ্লবের পরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রোলেতারিয়েত উপন্যাস নিকোলাই অস্কোভস্কির ‘হাউ দ্য স্টিল ওয়াজ টেম্পারড’ (১৯৩২) এক কোটিরও বেশি বিক্রি হয়েছে। আরেকটি উপন্যাস লিওনিদ লেনভের ‘দ্য রাশান ফরেস্ট’ (১৯৫৩)।
যুক্তরাষ্ট্রে থিওডোর ড্রাইসার, জন ভস প্যামোস ও জন স্টাইনবেকের লেখায় প্রোলেতারিয়েত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। চিহ্নিত প্রোলেতারিয়েত লেখকদের মধ্যে রয়েছেন— জর্জ ফিঙ্ক, মাইক গোল্ড, বি ট্যাভার্ন, জ্যাক কনোরি, জেমস টি ফ্যারেল, রবার্ট ক্যান্টওয়েল; লাতিন আমেরিকান লেখকদের মধ্যে হোসে রেভেলতাস, নিকোমেদেস গুজম্যান, হোর্হে ইকাজা।
প্রোলেতারিয়েত ব্রিটশ লেখক: জন ক্লেয়ার, টমাস মার্টিন উইলার, টমাস কুপার (পেশায় মুচি, কবি), ওয়াল্টার গ্রিনউড, জেমস হেনলে, জর্জ গ্যারেট, জন সমারফিল্ড, জজ রিলি, রাইস ডেভিস, হেরল্ড হেমলপ, রবার্ট ট্রেমেল ও আরো অনেকে।
ফরাসি লেখকদের মধ্যে জ্যঁ জিয়োনো, অঁরি পলেলি, জাপানি লেখকদের মধ্যে ওমি কোমাকি, ইয়োশিক হায়ামা, তাকেজি কোবায়াশি উল্লেখযোগ্য। বিপ্লবোত্তর সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় প্রোলেতারিয়েত ছকে সাহিত্যচর্চার ধুম পড়ে যায়।
অক্টোবর বিপ্লবের ঢেউ বাংলা কবিতায়
এ বিষয়ে পৃথক ও বৃহৎ প্রবন্ধ রচিত হতে পারে। কেবল স্মৃতিকে জাগিয়ে দেয়ার জন্য সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কয়েকটি পঙিক্ত:
প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা
চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য
কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া।
কিংবা কবির সেই আহ্বান:
কমরেড আজ নতুন নবযুগ আনবে না?
কুয়াশাকঠিন বাসর যে সম্মুখে
লাল উল্কিতে পরস্পরকে চেনা
দলে টানো হতবুদ্ধি ত্রিশঙ্কুকে
কমরেড আজ নবযুগ আনবে না?
সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘লেনিন’ও তো বিস্মৃত হওয়ার কথা নয়:
লেনিন ভেঙেছে রুশে জনস্রোতে অন্যায়ের বাঁধ
অন্যায়ের মুখোমুখি লেনিন প্রথম প্রতিবাদ
আজকেও রুশিয়ার গ্রামে ও নগরে
হাজার লেনিন যুদ্ধ করে
মুক্তির সীমান্ত ঘিরে বিস্তীর্ণ প্রান্তরে
বিদ্যুৎ ইশারা চোখে আজকেও অযুত লেনিন
ক্রমশ সংক্ষিপ্ত করে বিশ্বব্যাপী প্রতীক্ষিত দিন
বিপর্যস্ত ধনতন্ত্র, কণ্ঠরুদ্ধ, বুকে আর্তনাদ
আসে শত্রুজয়ের সংবাদ।
…
লেনিন ভূমিষ্ঠ রক্তে, ক্লীবতার কাছে নেই ঋণ
বিপ্লব স্পন্দিত বুকে, মনে হয় আমিই লেনিন।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জয়ধ্বনি কবিতায় অক্টোবরের সেই বিপ্লবেরই জয়গান।
সমাজতান্ত্রিক ঘরানার বিরুদ্ধে
জর্জ অরওয়েলের ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ তো সমাজতন্ত্রের নেতাদের শোষণের অন্যতম প্রধান উপাখ্যান। সেই পশু আমারে (স্ট্যালিনের রাজত্ব) অল অ্যানিমেলস আর ইকুয়াল বাট সাম অ্যানিমেলস আর মোর ইকুয়াল দ্যান দ্য আদার্স।
জোসেফ স্ট্যালিনের ওপর তৈরি চরিত্র নেপোলিয়ন আসলে একটি শূকর, অন্য একটি শূকর যে নেপোলিয়নকে চ্যালেঞ্জ করে, তার নাম স্নোবল— লিওন ট্রটস্কির ওপর ভিত্তি করে গড়া।
অরওয়েলের ‘নাইনটিন এইটটি ফোর’ও সমাজতান্ত্রিক মোহমুদগরের কাহিনী। আর্থার কোয়েশলারের ‘ডার্কনেস অ্যাট নুন’ ও ‘অ্যারাইভাল অ্যান্ড ডিপারচার’ উপন্যাস দুটো সমাজতন্ত্রের সীমাবদ্ধতার কথা বলে। বরিস পাস্তেরনাকের ‘ডক্টর জিভাগো’ সাম্যবাদবিরোধী উপন্যাস সোভিয়েত ইউনিয়নে নিষিদ্ধ ছিল। আলেকজান্ডার সোলঝেনিিসনের ‘ক্যান্সার ওয়ার্ড’, ‘দ্য গুলাগ আর্কিপিলাগো’ ও ‘ওয়ানডে ইন দ্য লাইফ অব ইভান দেনিসোভিচ’ এ ধারার উপন্যাস।
হালের নোবেল বিজয়ী হের্টা মুলারের লেখাও সমাজতান্ত্রিক ঘরানার বিরোধী শিবিরের।
রুশ বিপ্লব নিয়ে সেরা বই
শুধু বই ও লেখকের নাম উল্লেখ করছি।
* হিস্ট্রি অব দ্য রাশান রেভল্যুশন: লিওন ট্রটস্কি
* টেন ডেজ দ্যাট শুক দ্য ওয়ার্ল্ড: জন রিড
* থ্রু দ্য রাশান রেভল্যুশন: আলবার্ট রিস উইলিয়ামস
* ইয়ার ওয়ান অব রাশান রেভল্যুশন: ভিক্টর সার্জ
* দ্য কমিশরেট অব এনলাইটেনমেন্ট: শিলা ফিটজপ্যাট্রিক
* রাশান রেভল্যুশন ১৯১৭ এ পার্সোনাল রেকর্ড: এনএন সুগানভ
* দ্য অটোবায়োগ্রাফি অব এ সেক্সুয়ালি ইমানসিপেটেড ওমেন: আলেকজান্দ্রা কল্লোনতাই
* দ্য টাস্ক অব দ্য প্রোলেতারিয়েত ইন দ্য প্রেজেন্ট রেভল্যুশন: ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন
* টুয়ার্ডস দ্য ফ্লেইম- এম্পায়ার, ওয়ার অ্যান্ড দ্য এন্ড অব জারিস্ট রাশিয়া: ডোমেনিক লিভেন
* রুটস অব রেভল্যুশন- এ হিস্ট্রি অব পপুলিস্ট অ্যান্ড সোস্যালিস্ট মুভমেন্ট ইন দ্য নাইনটিন্থ সেঞ্চুরি রাশিয়া: ফ্রাঙ্কো ভেনচুরি।
পৃথিবীর কজন সেরা লেখকের ফিকশনেও উঠে এসেছে অক্টোবরের বিপ্লব। সেরা কয়েকটি ফিকশনের মধ্যে রয়েছে বরিস পাস্তেরনাকের ‘ডক্টর জিভাগো’, মিখাইল শলোকভের ‘অ্যান্ড কোয়ায়েট ফ্লোজ দ্য ডন’, মিখাইল বুলগাকভের ‘দ্য হোয়াইট গার্ড’, আলেকজান্ডার সোলঝেনিিসনের ‘নভেম্বর নাইন্টিন সিক্সটিন’, ওরল্যান্ডো ফিগসের ‘দ্য পিপলস ট্র্যাজেডি’, হেলেন র্যাপাপোর্টের ‘ফোর সিস্টার্স’, জেমস মিকের ‘দ্য পিপলস অ্যাক্ট অব লাভ’, ভ্যানোরা বেনেটের ‘মিডনাইট ইন সেন্ট পিটার্সবার্গ’ আর ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মাদার’ নিশ্চয়ই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
গোয়েন্দা সমারসেট মম
নিজের সুরক্ষার জন্য অস্ত্র কেনা, থাকা-খাওয়া, যাওয়া-আসা, বই ও পত্রপত্রিকা কেনা— সবকিছুর জন্য ২ হাজার ১০০ ডলার কবুল করে ব্রিটিশ সরকারের স্পাই হিসেবে লেনিনের নেতৃত্বাধীন রুশ বিপ্লব পর্যবেক্ষণ করতে পরবর্তীকালের বিখ্যাত লেখক সমারসেট মম সে সময় রাশিয়ায়ই ছিলেন। মম আগে কিছুটা রাশান শিখেছিলেন, অল্প দিনের মধ্যেই তিনি রুশ ভাষায় লেখা শেখভের নাটক পড়ার মতো পর্যায়ে চলে এলেন।
মম ছাড়া আরো চারজন ইংরেজি ভাষার লেখক তখন রাশিয়ায়— উইলিয়াম গেরহার্ড, আর্থার র্যানসাম, হিউ ওয়ালপোল ও রবার্ট ব্রুস লকহার্ট।
গেরহার্ড এসেছেন প্রথম মহাযুদ্ধের সৈনিক হিসেবে, র্যানসাম ছিলেন ব্রিটিশ পত্রিকার কূটনৈতিক প্রতিনিধি, ওয়ালপোল রেড ক্রসের ভলান্টিয়ার আর লকহার্ট ছিলেন দূতাবাসের কূটনীতিবিদ।
রুশ বিপ্লব নিয়ে সিনেমা
১৯২৭ সালের সাদা-কালো নির্বাক চলচ্চিত্র সের্গেই আইজেনস্টাইন ও গ্রিগরিও আলেকসান্দ্রভ পরিচালিত ‘অক্টোবর: টেন ডেজ দ্যাট শুক দ্য ওয়ার্ল্ড’ সত্তরের দশকে বহুবার ঢাকায় প্রদর্শিত হয়েছে। আরো কয়েকটি সিনেমা: আলেকজান্দার ডোভচেঙ্কো লিখিত ও পরিচালিত ‘আর্সেনাল’, আর পুদভকিন পরিচালিত ‘দ্য এন্ড অব সেন্ট পিটার্সবার্গ’ একই বছরের আরো একটি স্মরণীয় ছবি; মিখাইল রম ও ই অ্যারন পরিচালিত ‘লেনিন ইন নাইনটিন এইটটিন’, ১৯২৬-এর সাদা-কালো নির্বাক ছবি মিখাইল বুলগাকভের ‘দ্য হোয়াইট গাড’, ডেভিড লিন পরিচালিত ১৯৬৫-এর ছবি ‘ডক্টর জিভাগো’, ওয়ারেন বেটির ১৯৮১-এর ছবি ‘রেডস’।
Posted ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta