বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

সৌদি আরবের ইতিহাসে

মঙ্গলবার, ০৭ নভেম্বর ২০১৭
774 ভিউ
সৌদি আরবের ইতিহাসে

কক্সবাংলা ডটকম(৭ নভেম্বর) :: ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে বাদশাহ আবদুল আজিজ তাঁর অধিকৃত গোটা অঞ্চল নিয়ে তাঁরই বংশের নামকরণে সৌদের আরব তথা সৌদি আরব নামকরণ করেন। সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে বাদশাহ ঘোষণা দিয়ে রাজতন্ত্রের সূচনা করেন।

একসময় সৌদি আরবসহ জজিরাতুল আরব তথা আরব উপদ্বীপের বিশাল অঞ্চল শত শত বছর ইস্তাম্বুলস্থ তুর্কি সুলতানদের অধীনে ছিল। অন্যদিকে বর্তমান সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চল নজদ দীর্ঘ দিন সৌদ বংশের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তুর্কিরা তাদের হটিয়ে দিলে তারা কাতার, বাহরাইন হয়ে কুয়েতে আশ্রয় নেয়।
১৯০২ খ্রিস্টাব্দে বাদশাহ আবদুল আজিজ কিছু সহযোদ্ধা নিয়ে কুয়েত থেকে এসে রিয়াদ দখল করে। তুর্কি বাহিনীর সঙ্গে প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে প্রায় ১০ বছর সময় যায়। অতঃপর বাদশাহ আবদুল আজিজ বিশাল সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলে। ঘনিষ্ঠ মিত্র ব্রিটিশের কাছ থেকে যুদ্ধাস্ত্র পেয়ে জজিরাতুল আরবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে।
ফলে যুবক সাহসী পুত্র বাদশাহ ফয়সালের সহযোগিতা নিয়ে ছোট বড় অঞ্চল দখল করতে থাকে। পরে অধিকৃত অঞ্চল সুসংগঠিত করে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে এসে সৌদি আরব নামকরণ ও রাজতন্ত্র প্রবর্তন করেন। সে হতে কঠোর হস্তে আইনের শাসন চালু করে। সঙ্গে সঙ্গে তুর্কিদের স্থলে ইবনে তায়মিয়া পরবর্তী মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদীর ধর্মীয় মতাদর্শ শক্তভাবে প্রবর্তন করা হয়।
তুর্কি আমলে জজিরাতুল আরবে আইনের শাসন খুবই দূর্বল ছিল, ছিল নিরাপত্তার অভাব। কিন্তু সৌদি রাজতন্ত্রীয় শাসন চালু হওয়ার পর তাদের কঠোর নিয়ন্ত্রণের দ্বারা বিশাল সাম্রাজ্যে আইনের শাসন চালু হয়ে যায়। তবে এ সাম্রাজ্য আর্থিক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়। এ প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে যথেষ্ট সময় লাগে।১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে তেল প্রাপ্তির সূচনা হলেও তার প্রকৃত মূল্য সৌদি আরব পেত না। পশ্চিমা বিশ্ব তথা ব্রিটিশরা নিয়ে যেত। তার পরেও তেলের মূল্য ও হজযাত্রীদের থেকে পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রাসহ নানাভাবে সৌদি আরব পর্যায়ক্রমে এগিয়ে যেতে থাকে। এরই মধ্যে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে এসে বাদশাহ আবদুল আজিজ ইন্তেকাল করলে তার প্রথম পুত্র সউদ বাদশাহ হন।

সউদের যোগ্যতার অভাবে বিশাল সাম্রাজ্যের বৃহত্তর স্বার্থে বাদশাহ আবদুল আজিজের তৎপরবর্তী পুত্র বাদশাহ ফয়সাল ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে এসে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করেন। বাদশাহ ফয়সালের আমলে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগের চাহিদায় রেডিও-টেলিভিশন চালু নিয়ে দেশের ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে চরম মতবিরোধ শুরু হয়।

অন্যদিকে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে মিসর-ইসরাইল যুদ্ধে বাদশাহ ফয়সাল মিসরের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করায় পরবর্তীতে তেল অবরোধ বাদশাহ ফয়সালের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। পশ্চিমা বিশ্বের চক্রান্তে সৎ ভাইয়ের পুত্রের হাতে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিহত হন।

বাদশাহ ফয়সাল অসাধারণ সাহসী ব্যক্তিত্ব ছিলেন, ছিলেন বিশাল সৌদি আরব প্রতিষ্ঠায় পিতার সহযোগী। আরো ছিলেন মুসলিম বিশ্বের অভিভাবক। পশ্চিমা বিশ্ব তা বুঝতে পেরে ঘরের সন্তানকে শত্রু বানিয়ে এ মহান নেতাকে হত্যা করায় বলে প্রচার রয়েছে।
অতঃপর ক্ষমতায় এলেন তাঁরই সৎ ভাই বাদশাহ খালেদ। তার ৭ বছরের বাদশাহী জীবনে উন্নয়নের মহা পরিকল্পনার সূচনা বলা যায়।

১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে হজ্বের দুই সপ্তাহ পর উগ্রবাদীদের দ্বারা পবিত্র কাবাকে কেন্দ্র করে মসজিদুল হারাম অবরোধ ও তাদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনা একটি কঠিন পরীক্ষা ছিল তাঁর জন্য। এটি ঘটেছে বাদশাহ ফয়সালকে শহীদ করার মাত্র ৪ বছরের মাথায়।

১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে খালেদ ইন্তেকাল করলে যুবরাজ ফাহাদ বাদশাহ হন। তিনি সুদাইরি পরিবারের মেয়ের সন্তান। তিনি বাদশাহ আবদুল আজিজের নবম স্ত্রী। এ ঘরে ১৩ জন সন্তান-সন্ততি জন্মগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ৭ পুত্র রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে গিয়েছিল। এদের সুদাইরি সেভেন বলা হয়। সুদাইরি সেভেনের বড় ভাই হচ্ছেন ফাহাদ। ফাহাদের দীর্ঘ বাদশাহি আমলে সৌদি আরবে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যায়।

বিশেষ করে পবিত্র মদিনাকে নতুনভাবে সাজিয়ে দেওয়া তাঁর অমরকীর্তি। যেখানে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার জেয়ারতকারী নামাজ পড়ার ধারণ ক্ষমতা না থাকায় রাস্তাঘাট পরিপূর্ণ হয়ে যেত। বর্তমান ৭ থেকে ৮ লাখ জেয়ারতকারী শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় অতি আরামে নামাজসহ ইবাদত-বন্দেগি করছেন।

এটা বিশ্বের বুকে একটি দৃষ্টিনন্দন ইমারত। তার আরেক অবদান স্মরণযোগ্য। অর্থাৎ দুই হারাম শরিফে লাখ লাখ হজ-ওমরাহকারীর জন্য জমজমের পানি খাওয়ার ব্যবস্থা। পবিত্র মসজিদুল হারামের পশ্চিম দিকে বিশাল আকৃতির সম্প্রসারণও তাঁর কৃর্তি। তিনিই বাদশাহি উপাধির স্থলে ‘খাদেমুল হারামাইনিশ শরীফাইন’ উপাধি বুকে ধারণ করে বিশ্বের বুকে প্রচারের মাধ্যমে আত্মতৃপ্তি লাভ করেছিলেন।

অবশ্য বাদশাহ ফাহাদের আমলে ইরাকের সাদ্দাম হোসেনকর্তৃক কুয়েত দখলের সুযোগে আমেরিকান সৈন্য সৌদি আরবের মাটিতে ঝেঁকে বসা তাঁর সময়ের একটি বেদনাদায়ক ঘটনা। যোগ্য পুত্রের ইন্তেকাল রাষ্ট্রীয় নানান ঝড়ঝাণ্ডায় বাদশাহ ফাহাদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমনি পরিস্থিতিতে যুবরাজ আবদুল্লাহকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে হতো।

শেষ পর্যন্ত বাদশাহ ফাহাদ ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করলে যুবরাজ আবদুল্লাহ পূর্ণাঙ্গভাবে বাদশাহি ক্ষমতা লাভ করেন। রাষ্ট্রীয় কৌশলগত কারণে বা অন্যভাবে হোক বাদশাহ আবদুল আজিজ বিভিন্ন গোত্র প্রধানের মেয়েদের বিয়ে করেছিলেন। তেমনি আবদুল্লাহর মাতা রিয়াদস্থ আল রশিদি বংশের কন্যা। এ রশিদি রিয়াদস্থ তুর্কি গভর্ণর তথা প্রতিনিধি। এদের হটিয়ে বাদশাহ আবদুল আজিজ রিয়াদ দখল করেছিলেন। ইতিহাস বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাদশাহ ফয়সালের বিশাল ব্যক্তিত্ব ও প্রভাবে বাদশাহ আবদুল্লাহর রাজ পরিবারের উত্থান।

বাদশাহ আবদুল্লাহর আমলেও সৌদি আরবে বিশাল উন্নয়ন হয়। বিশেষ করে পবিত্র মক্কায় মসজিদুল হারাম পুনঃনির্মাণ। উত্তর দিকে বিশাল আকারের সম্প্রসারণ ও পবিত্র মদিনায় মসজিদে নববীর আবারো সম্প্রসারণ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ উল্লেখ করারমতো।

২০১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইন্তেকাল করলে সুদাইরি সেভেনের কনিষ্ঠ সন্তান তথা বাদশাহ আবদুল আজিজের ২৫তম পুত্র সালমান বাদশাহ হন। তাঁর আমলে দুই বছর যেতে না যেতে সৌদি আরবের নানা ঘটনা ও সংস্কারের জন্য উল্লেখ হয়ে থাকবে। বিশেষ করে ইয়ামেনের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া।

এতে ইয়ামেনি বংশীয় স্ত্রীর ছেলে যুবরাজ মুকরিনকে সরিয়ে দেওয়া, গত জুন মাসে নিজ ভ্রাতা নায়েফের পুত্র মুহাম্মদকে সরিয়ে দিয়ে নিজ পুত্র মুহাম্মদ বিন সালমানকে উপ-যুবরাজ থেকে যুবরাজ মনোনীত করা ইত্যাদি রাজ পরিবারের পাশাপাশি সৌদি আরবের উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বাদশাহ সালমান ক্ষমতা গ্রহণ করে মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে পররাষ্ট্রনীতিতেও পরিবর্তন এনেছেন। বিশেষ করে প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্র কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে তাঁর পুত্র মুহাম্মদের হাত আছে।মুসলিম বিশ্বে বিশেষ করে আরব রাষ্ট্রসমূহে রাজনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া গৃহযুদ্ধে লিপ্ত। কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন, ইরানের ব্যাপকভাবে উত্থান, শিয়া আধিপত্য ঠেকাতে ইয়ামেনের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া সৌদি আরবে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এরই মধ্যে বিশ্ব যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতা প্রত্যক্ষ করছে!

লেখক : ইতিহাস গবেষক

774 ভিউ

Posted ৬:৪৭ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৭ নভেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com