কক্সবাংলা ডটকম(২০ এপ্রিল) :: উৎক্ষেপণের কিছু পরেই বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে গেল এ যাবৎকালে তৈরি হওয়া সব চেয়ে শক্তিশালী মহাকাশযান স্পেসএক্স-এর স্টারশিপ।
আমেরিকার দক্ষিণ টেক্সাসের বোকা চিকায় স্পেসএক্স-এর লঞ্চ প্যাড থেকে বৃহস্পতিবার সকালে (স্থানীয় সময়) সফল ভাবেই যাত্রা শুরু করেছিল যানটি।
রকেট উৎক্ষেপণের মিনিট তিনেকের মধ্যেই উপরের অংশ থেকে বুস্টারটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা ছিল। তা না ঘটে বিস্ফোরণ হয়! ধ্বংস হয়ে যায় স্টারশিপ।
স্পেসএক্স অবশ্য একে ব্যর্থতা বলে মানতে নারাজ। বিশাল মহাকাশযানটি যখন বিস্ফোরণে ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে পরিণত হয়েছে, তখন সদর দফতরে চলছে উদ্যাপন!
তাদের বক্তব্য, মহাকাশযানটি যে মাটি থেকে ঠিকঠাক ভাবে উৎক্ষেপণ করা গিয়েছে, সেটি যে লঞ্চ প্যাডেই বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যায়নি, সেটাই বড় সাফল্য বলে মনে করছে তারা।
স্পেসএক্সের কর্মীদের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন সংস্থার কর্ণধার ইলন মাস্ক। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘‘কয়েক মাসের মধ্যেই পরবর্তী পরীক্ষামূলক লঞ্চ। আর তার জন্য আজকের উৎক্ষেপণ থেকে অনেক কিছু শেখা সম্ভব হয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, স্পেসএক্স এমন একটি মহাকাশযান তৈরি করতে চাইছে, যা বার বার ব্যবহার করা যাবে। স্টারশিপের উচ্চতা ৩৯৪ ফুট, যা স্ট্যাচু অফ লিবার্টির চেয়েও ৯০ ফুট বেশি উঁচু।
এই মহাকাশযানে ৩৩টি শক্তিশালী র্যাপ্টর ইঞ্জিন রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে তিন মহাকাশচারীকে এই মহাকাশযানে করে চাঁদে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে নাসার।
Liftoff of Starship! pic.twitter.com/4t8mRP37Gp
— SpaceX (@SpaceX) April 20, 2023
ইলন মাস্ক বলেছেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরও একটি রকেট উৎক্ষেপণের পরীক্ষা চালাবে। এক টুইট করে তিনি স্পেসএক্সের টিমকে রোমাঞ্চকর স্টারশিপ রকেট উৎক্ষেপণের জন্য শুভকামনা জানান। তিনি বলেন, ‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নতুন পরীক্ষামূলক রকেট উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে অনেক কিছু শিখলাম।’
প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত ইলন মাস্ক রকেট উৎক্ষেপণের আগেই বলেছিলেন, এটি ভূমি থেকে উৎক্ষেপণ করতে পারলেই বা উৎক্ষেপণস্থলে বিস্ফোরণ না হলেই একে সাফল্য হিসেবে গণ্য করবেন তিনি।
ইলন মাস্কের ইচ্ছাপূরণ হয়েছে। এটি সফলভাবে উৎক্ষেপণের পর দ্রুতগতিতে মেক্সিকো উপকূলের দিকে যেতে থাকে। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যায় সবকিছু পরিকল্পনামতো হয়নি। রকেটটির দুটি অংশ ছিল। এ দুটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময়ে বিস্ফোরণ ঘটে। এটি উঁচুতে উঠতে থাকলে এর ৩৩টি ইঞ্জিনের মধ্যে ছয়টি বন্ধ হয়ে যায়। সেখান থেকে ধোঁয়া উঠতে শুরু করে। তিন মিনিট ওড়ার পর রকেটটি কাঁপতে শুরু করে। পরে আকাশে বড় বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা যায়।
দ্য গার্ডিয়ান জানায়, ‘স্টারশিপ’ নামের ১২০ মিটার দৈর্ঘের রকেট উড্ডয়নের পর প্রয়োজনীয় গতি পেলেও হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাক খেতে শুরু করে। ভূমি ছেড়ে যাওয়ার ৪ মিনিটের মাথায় সেটি বিস্ফোরিত হয়। রকেটটির মূল দুটি অংশ (বুস্টার এবং যাত্রীবাহী অংশ) ঠিকঠাক বিচ্ছিন্ন না হওয়াই বিস্ফোরণের কারণ বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
অভিযানটির উদ্দেশ্য ছিল মূলত তথ্য সংগ্রহ। উড্ডয়ন সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে আগেই সতর্ক করেছিল স্পেসএক্স। সে কারণেই বিস্ফোরণের পরও স্পেসএক্স কর্মীদের উল্লাস করতে দেখা যায় ভিডিওতে।
নকশা চূড়ান্ত হওয়ার পর স্টারশিপে করে মঙ্গলে একবারে ১০০ জন পর্যন্ত মানুষ যেতে পারবে বলে জানিয়েছে স্পেসএক্স। তবে গতকালের পরীক্ষামূলক অভিযানে রকেটটিতে কোনো নভোচারী ছিলেন না।
রকেট উড্ডয়নে প্রয়োজনীয় থ্রাস্টের (ধাক্কা) জন্য মোট ৩৩টি র্যাপ্টর ইঞ্জিন আছে এতে। দৈর্ঘ্যে সেটি প্রায় তিনটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের সমান। ১৯৬৯ সালে চাঁদে মানুষবাহী স্যাটার্ন ফাইভ রকেটের চেয়ে স্টারশিপ ১০ মিটার বেশি দীর্ঘ। রকেটটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছিল যেন তা পরবর্তী সময়ে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। এতে মহাকাশে অভিযান পরিচালনা অনেক সুলভ হয়ে যাবে।
রকেট উড্ডয়নের জন্য টেক্সাসে নিজস্ব খরচে স্পেসপোর্ট তৈরি করেছে স্পেসএক্স। সেখানে আরও কয়েকটি স্টারশিপ রকেট পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছে।
ভবিষ্যতে মানুষ বিভিন্ন গ্রহে বসবাস করবে বলে মনে করেন ইলন মাস্ক। সে উদ্দেশ্যে মঙ্গলে উপনিবেশ গড়তে চান তিনি। পারমাণবিক যুদ্ধ কিংবা গ্রহাণুর ধাক্কায় পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও মানুষ যেন নিঃশেষ না হয়ে যায়, সেটিই লক্ষ্য বলে জানান তিনি।
SpaceX #Starship launches, explodes minutes after takeoff.#StarshipLaunch pic.twitter.com/OaRCV14ilX
— Rahul Sisodia (@Sisodia19Rahul) April 20, 2023
Posted ৮:১১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta