বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

২০২১-২২ অর্থবছরে চালের উৎপাদন ঘাটতি সাড়ে ছয় লাখ টন

মঙ্গলবার, ০৮ নভেম্বর ২০২২
125 ভিউ
২০২১-২২ অর্থবছরে চালের উৎপাদন  ঘাটতি সাড়ে ছয় লাখ টন

কক্সবাংলা ডটকম(৮ নভেম্বর) :: দেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টন। যদিও এ সময় চালের মোট ভোগ ও ব্যবহার ছিল ৩ কোটি ৬৫ লাখ টন। সে অনুযায়ী গত অর্থবছরে দেশে চালের ঘাটতি ছিল সাড়ে ছয় লাখ টন। আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ টন। গত পাঁচ অর্থবছরে চাল উৎপাদন এবং ভোগ ও ব্যবহারের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এ সময়ের পুরোটাই চালের ঘাটতি মোকাবেলা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করা হয়েছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। যদিও দেশের কৃষি উৎপাদন পরিসংখ্যানে উঠে আসছে এর ভিন্ন চিত্র। গত পাঁচ অর্থবছরে প্রধান খাদ্যশস্য চালে আমদানিনির্ভর থাকতে হয়েছে বাংলাদেশকে। সরকারি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) সন্নিবেশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এ পাঁচ বছরে চালের ভোগ ও ব্যবহার হয়েছে উৎপাদনের চেয়ে বেশি। স্থানীয় উৎপাদন দিয়ে চাহিদা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং চালের জন্য আমদানিনির্ভরতা দিনে দিনে বেড়েছে।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৯ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমদানির লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। এজন্য ৩২৯টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক ছাড়ে চাল আমদানির অনুমতিও দেয়া হয়েছে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ঋণপত্র খুলেও চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের তথ্যানুযায়ী, ১ জুলাই থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে দেশে বেসরকারিভাবে চাল আমদানি হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৭৫ হাজার টন। আর সরকারিভাবে চাল আমদানি হয়েছে ২৭ হাজার টন।

দেশে কখনই চালের সংকট দেখা দেবে না বলে মনে করছেন কৃষি খাতের নীতিনির্ধারকরা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া বলেন, চাল উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে এখন তৃতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। সুতরাং চাল আমরা যথেষ্ট উৎপাদন করছি। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ মাথায় রেখে উৎপাদনকে আরো বেশি বেগবান করার জন্য বেশকিছু পরিকল্পনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য ভাত। এ দেশে কখনই চালের সংকট সৃষ্টি হবে না। এ লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।

এখন আমন, সামনে বোরো আসছে, আমরা বড় ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে চলেছি। আমনের পরপর মিডটার্ম ক্রপ হিসেবে তেল-জাতীয় ফসলে মনোনিবেশ করব, যাতে মাটি যেন পড়ে না থাকে। কারণ তেল আমদানিতেও প্রচুর টাকা ব্যয় করতে হয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং ভবিষ্যতে আমাদের চাল ও অন্যান্য দানাদার খাদ্যগুলোয় সংকট হবে না। আমরা সে পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি।

প্রধান খাদ্যশস্যে আমদানিনির্ভরতা এখন বড় বিপদের আশঙ্কা তৈরি করেছে বাংলাদেশে। গোটা বিশ্বেই খাদ্যোৎপাদন এখন কমতির দিকে। ব্যাপক খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কায় পড়েছে এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ। বাইরে থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী বছর ৪৫টি দেশে খাদ্য ঘাটতি বড় সংকটের আকার নেবে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার হুমকিতে থাকা এসব দেশের তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশেরও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা এখন মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। জ্বালানি সংকট ও আন্তর্জাতিক পণ্যবাজারের অস্থিরতায় ক্রমেই জটিল রূপ নিচ্ছে পরিস্থিতি। বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটেছে সার ও কৃষিপণ্যের সরবরাহ চেইনেও। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোয় এ সংকটকে স্থানীয় পর্যায়ে আরো মারাত্মক করে তুলছে অভ্যন্তরীণ নানা প্রভাবক।

এ অবস্থায় আসন্ন বোরো মৌসুমের উৎপাদন বাংলাদেশের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষকরা। তারা বলছেন, গত আউশ মৌসুমে ফলনের বড় ক্ষতি করেছে ভয়াবহ বন্যা। খরার কারণে আমন উৎপাদনও সময়মতো শুরু করা যায়নি। দেশে চালের সবচেয়ে বড় জোগান আসে বোরো মৌসুমের উৎপাদন থেকে। বর্তমান আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে বোরো মৌসুমের উৎপাদনই আগামী বছর চালের বাজারের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করবে।

বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বোরো মৌসুমের জন্য সার, বীজসহ প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণের মজুদ নিশ্চিত করার দাবি তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে কৃষি উৎপাদনে সারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের চাহিদা এ সময়টিতেই থাকে সবচেয়ে বেশি। সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশে রাসায়নিক সারের বার্ষিক ব্যবহারের ৭০ শতাংশেরও বেশি হয় শুধু বোরো ও রবি মৌসুমে। যদিও এবার মৌসুমটিতে সারের প্রয়োজনীয় জোগান নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি।

রাসায়নিক সারের চাহিদা পূরণের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ। দেশে রাসায়নিক সারের বার্ষিক চাহিদা ৬০ লাখ টনেরও বেশি। এর প্রায় ৮০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। আমদানীকৃত রাসায়নিক সারের মধ্যে প্রধানতম হিসেবে বিবেচিত হয় চারটি—ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডাইঅ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি)।

এর মধ্যে টিএসপি ও ডিএপি আমদানি হয় সৌদি আরব, চীন, কাতার, মরক্কো ও তিউনিশিয়া থেকে। এমওপি সারের ৪০ শতাংশ আসে কানাডা থেকে। বাকি ৬০ শতাংশের জন্য বেলারুশ ও রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া টিএসপি ও ডিএপি সারও কিছু পরিমাণে রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয়। তবে বর্তমানে এমওপি সার আমদানি নিয়েই সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারের আন্তর্জাতিক বাজার এমনিতেই মারাত্মক অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তার ওপর আমদানির প্রধান উৎস যুদ্ধ উপদ্রুত এলাকা হওয়ায় সেখান থেকে আমদানি ও পরিবহন অব্যাহত রাখা নিয়ে বড় ধরনের সংশয় রয়েছে। বিকল্প উৎস থেকে আমদানি বৃদ্ধি ও তা টেকসই করা না গেলে দেশের কৃষি উৎপাদনে বড় ধরনের সংকটের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।

শুধু চাল নয়, বড় আমদানিনির্ভরতা রয়েছে দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য গমের ক্ষেত্রেও। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে গম আমদানি করতে হয়েছে ৫১ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে তা ৭০ লাখ টনে উন্নীত হওয়ার প্রক্ষেপণ রয়েছে। প্রধান দুই খাদ্যশস্যের বর্তমান উৎপাদন ও বাজার পরিস্থিতি দেশের গোটা খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তাকে বিপন্ন করে তুলেছে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।

ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইএফপিআরআই) এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, কভিডের অভিঘাত কাটিয়ে ওঠার আগেই ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব দেশের খাদ্যনিরাপত্তায় বড় ধরনের হুমকি তৈরি করেছে।

যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি ও সারের দামে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এ ভারসাম্যহীনতায় আরো প্রভাব ফেলেছে। এতে উন্নয়নশীল দেশ ও তাদের উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, খাদ্যনিরাপত্তা ও দারিদ্র্যের হারে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছে। বাংলাদেশেও খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টিকর খাদ্যের সমতা নষ্টের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে গ্রামীণ খানাগুলোয় খাদ্যের পেছনে ব্যয় কমিয়ে পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জানতে চাইলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রিপন কুমার মণ্ডল বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে, যার কারণে এ মুহূর্তে আমরা ঘাটতিতে আছি। প্রতি বছর যে আমরা আমদানি করি, তার কারণ দুটো। একটা হলো অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রভাব সৃষ্টি করা।

আমদানি হচ্ছে এমন বার্তা বাজারে যখন যায়, তখন যারা মজুদ করে তাদের মধ্যে চাপ সৃষ্টি হয়। তখন তারা মজুদ ছেড়ে দেয়। এ পরিবেশটার জন্য সরকার অভ্যন্তরীণ বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নিয়মিত আমদানি করে। ২০১৫ সালের পর আমদানির পরিমাণ খুবই কম ছিল। এখন আবার বাড়ছে।

এবার আমরা চালের ক্ষেত্রে ঘাটতিতে আছি, কারণ চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। গম হলো চালের বিকল্প। দানাদার এ শস্যের চাহিদার ৮০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। গমের দাম যখন বিশ্ববাজারে বেড়ে যায়, আমদানির ওপর স্বভাবতই চাপ পড়ে। যখন চাপ পড়ে তখন রুটি-আটার দাম বেড়ে যায়। ওই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত চাপ চলে আসে চালের ওপর, যার কারণে চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে চাহিদার হিসাবটাও পরিবর্তন করতে হয়।

125 ভিউ

Posted ৮:৫৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৮ নভেম্বর ২০২২

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com