কক্সবাংলা ডটকম(৬ এপ্রিল) :: আমার পিতামহী ছিলেন রেঙ্গুনবাসী বৌদ্ধ। পিতামহ সেকালে অনেক চাটগাঁইয়ার মত রেঙ্গুনে ব্যবসা করার সূত্রে রেঙ্গুনী নারীকে শাদী করেছিলেন। তিন পুত্র, তিন কন্যা নিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় খালিহাতে দাদা সপরিবারে হেঁটে স্বদেশে ফিরেছিলেন। পরে তিনি করাচিতে টাকশালে চাকুরি নিয়ে সেখানেই দুর্ঘটনায় মারা যান। দাদাকে করাচিতেই সমাহিত করা হয়েছিল। আমার দাদী পুত্রকন্যাসহ কথা বললে নিজেদের মধ্যে বার্মিজ ভাষায় কথা বলতেন। আমরা কিছু না বুঝে হা করে তাকিয়ে থাকতাম। দাদীকে নিয়ে আমার এই পদ্যখানি আমার মত অনেকেরই প্রিয়।
ভাবের গভীরে ভাবি ধানরঙ-মুখ
জনমের পুরাসত্য, প্রবীণ সুলুক।
আমি হাঁটি, পিছু পিছু পিতামহ আসে
সঙ্গিনী রেঙ্গুনী নারী চোখে উদ্ভাসে।
চন্দন-তামাকগন্ধ, নীল থামি পরা
‘এসো নাতি, ডাবা খাই’— করে মস্করা।
আমার পোষাকে আজ প্যারিসের ঘ্রাণ
দেখেও দেখে না যেন বোকা দাদীজান।
‘তোর দাদা, তোর কালে ঠিক যেন তুই
রুপার সন্ধানে গেল বিদেশবিভুঁই।
করাচির টাকশালে কুটিকুটি দেহ
আমাকে কাটিল সঙ্গে, দেখিল না কেহ।
ভাসিল রক্তের গাঙে যুবা লখিন্দর
আমারে পিন্ধায়ে গেল ধবল কাপড়।
কত চান্দু টেরি কাটা শিস দিয়া যায়
সোনার বেশর হাতে ত্যারছা তাকায়।
যৈবন বান্ধিয়া রাখি, যইক্ষ্যার ধন
অকালে শুকায়ে আসে চোরাবালি-মন।
ফলনা দছানা কত এসে ঠ্যাস মারে
সেসব দুঃখের কথা বুঝাইব কারে?
আমি ছুটি, পিছুপিছু পিতামহী ছোটে
‘ পানি দিয়া যা রে নাতি কাঠফাটা- ঠোঁটে ‘।
দাদীকে মাটিতে রেখে ছুটি ঊর্ধ্বশ্বাস
টেবিলে শীতল হয় গুরু -প্রাতরাশ।
ইস্টিমারে শিটি মারে, নোঙরেতে টান
করাচি বন্দরে ছোটে দাদীর পরান।
সূত্র : ফেইস বুক
Posted ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৭ এপ্রিল ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta