কক্সবাংলা ডটকম :: পশ্চিম আফগানিস্তানের একটি প্রধান জেলাকে নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা, যেখানে ইরানের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ক্রসিং রয়েছে। দেশজুড়ে সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধাদের ক্রমাগত সামরিক আক্রমণ চলামান থাকা অবস্থায় এ তথ্য জানিয়েছেন আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
গত সপ্তাহে তালেবানরা ইরান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, চীন ও পাকিস্তানের সাথে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে ত্রাস চালিয়েছে। দীর্ঘ ২০ বছর পর মার্কিন সেনারা আফগানিস্তানের বাগরাম বিমান ঘাঁটি ত্যাগ করার পরপরই দেশটিতে নিজেদের ক্ষমতা আরও জোরদার করতে নেমেছে তালেবান গোষ্ঠী। ফলে আফগানিস্তানের সার্বিক পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে।
উজবেকিস্তানের সাথে সীমান্তবর্তী, উত্তরের বালখ প্রদেশে তালেবান যোদ্ধা ও আফগান সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষও এখনো চলমান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, হেরাত প্রদেশে অবস্থিত, ইরানের সাথে সংযুক্ত ‘ইসলাম কালা’ সীমান্ত ক্রসিং তালেবানরা দখলে নিয়েছে। তবে তার আগেই আফগান নিরাপত্তা বাহিনী ও কাস্টমসের কর্মকর্তারা সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে গেছেন।
ইরানের সরকারি আরবি ভাষার গণমাধ্যম- আল আলালাম টিভি রিপোর্ট করেছে, আফগান সেনারা তালেবানের হাত থেকে পালিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ইরানে প্রবেশ করেছে।
কিন্তু, আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র, তারিক আরিয়ান এ প্রতিবেদনকে অস্বীকার করে বলেন, সীমান্তগুলো এখনো সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে প্রাদেশিক গভর্নর ও পুলিশকে কল দেওয়া হলেও- তারা কোনো সাড়া দেননি।
অন্য একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, তালেবান যোদ্ধারা বিনা লড়াইয়েই হেরাত প্রদেশের পাঁচটি জেলা দখলে নিয়ে নিয়েছে।
চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত থাকা বাদাখশান প্রদেশের অধিকাংশ এলাকা তালেবানরা দখলে নেওয়ায় চলতি সপ্তাহেই এক হাজারেরও বেশি আফগান সেনা তাজিকিস্তানে পালিয়ে যায়।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, গেল বৃহস্পতিবার আফগান সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী বাদঘিস প্রদেশের রাজধানী কালা-ই-নাও কে পুনরায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে; এর আগে গত বুধবার সেখানে তালেবানরা ত্রাস সৃষ্টি করেছিল।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, এ অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে শত শত সেনা নিয়োগ করা হয়েছে। তালেবানরা কালা-ই-নাও অঞ্চলে যেখানে পুলিশের প্রধান কার্যালয়সহ প্রধান প্রধান সরকারি ভবন নিজেদের কব্জায় নিয়েছিল, সেখানে এখনো দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ফাওয়াদ আমান বলেন, “কালা-ই-নাও শহর এখন পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে এবং আমরা শহরের অন্যান্য অংশে তালেবানদের বিরুদ্ধে অপারেশন চালাচ্ছি।”
মন্ত্রণালয় জানায় যে কালা-ই-নাও সীমান্তে সংগঠিত অপারেশনে ৬৯ জন তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে।
বাদঘিস প্রদেশের বাকি অংশ এখনো তালেবানদের হাতেই রয়েছে। পশ্চিমের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত তালেবানরা আফগানিস্তানের ১০০র’ও বেশি জেলা নিজেদের দখলে নিয়েছে।
তবে তালেবানদের দাবি, তারা দেশের ৩৪টি প্রদেশের ২০০র’ও বেশি জেলা দখল করেছে। প্রধান শহরগুলো এখনও সরকারের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই তালেবানরা দেশের অধিকাংশ অঞ্চল দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু, প্রধান আফগান ঘাঁটি থেকে মার্কিন সেনারা বিদায় নেওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই তাদের এই প্রচেষ্টা আরও তীব্রতর হয়েছে। ২০০১ সালে তালেবান সরকারকে উৎখাতের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে যে কর্তৃত্ব বজায় রেখেছিল, অবশেষে তার সমাপ্তি ঘটেছে।
বিশেষ করে, উত্তরাঞ্চলের প্রদেশগুলোতে তালেবানদের কর্তৃত্ব চোখে পড়ার মতো এবং দীর্ঘদিন ধরেই তারা তা বজায় রেখেছে।
সরকার ও তালেবানদের মধ্যে বারবার শান্তি বজায় রাখার ব্যাপারে আলোচনা হলেও, তার কোনো মীমাংসা আজও হয়নি। তালেবান প্রতিনিধিরা বুধবার ইরান ও বৃহস্পতিবার মস্কো পরিদর্শন করেছেন।
এই বাস্তবতায়- আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বৃহস্পতিবার বলেন, তিনি প্রত্যাশা করেননি যে তালেবান পুরো দেশকে দখলে নিয়ে নিবে এবং আফগান সেনাবাহিনীর উপর তার আস্থা ছিল।
এসময় বাইডেন বলেন, “‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দীর্ঘতম যুদ্ধের অবসান ঘটাচ্ছি।”
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবানের হাতে অন্তত সাতজন আফগান পাইলট নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনীর দুইজন সিনিয়র কর্মকর্তার বরাতে ব্রিটিশ নিউজ এজেন্সি রয়টার্স এই খবর প্রকাশ করেছে।
খবরে বলা হয়েছে, আফগান পাইলটরা সরকারি বাহিনীর মহামূল্যবান সম্পদ। এ কারণে পাইলটরা তালেবানের হিটলিস্টে রয়েছে। তালেবানের বিমান বাহিনী না থাকায় পাইলটদের হত্যা করে তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করছে।
রয়টার্স হত্যাকাণ্ডের শিকার সাত পাইলটের মধ্যে অন্তত দুইজন পাইলট হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পেরেছে। এসব পাইলটদেরকে ঘাঁটির বাইরে গুপ্ত হত্যা করা হয়েছে বলে খবরে বলা হয়েছে।
আফগানিস্তান থেকে বিদেশি বাহিনী চলে যাবার খবরে তালেবান হামলা করে একের পর এলাকা দখল করছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা ধারণা করছে, সেপ্টেম্বরের পরবর্তী ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে তালেবান কাবুল দখল করবে।
পাইলট হত্যার বিষয়ে রয়টার্স নিউজ এজেন্সি তালেবানের কাছে মন্তব্য জানতে চাইলে তালেবানের মুখপাত্র জাবিনুল্লাহ মুজাহিদ ‘জামারায়’ নামে একজন পাইলটকে হত্যার তথ্য নিশ্চিত করেন। পাইলটদের হত্যার মিশন শুরু করার সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, এই পাইলটরা আমাদের লোকদের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে।
চলতি বছর জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরের প্রথম তিন মাসে তালেবানের হাতে ২২৯ জন বেসামকি নাগরিক নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, একই সময় আফগান বিমান বাহিনীর হাতে ৪১ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
তালেবান মোট কতজন পাইলটকে হত্যা করছে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো জবাব দেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক দপ্তর পেন্টাগন বলেছে, তালেবানের হাত তারা বেশ কয়েকজন পাইলট হত্যার তথ্য পেয়েছেন। তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদন কিংবা তদন্ত প্রতিবেদন দিতে অস্বীকৃতি জানান তারা।
সূত্র: রয়টার্স / আল-জাজিরা
Posted ২:১৫ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta