শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

পুঁজিবাজারে কারসাজি বন্ধে নতুন বিধি-বিধান সংযুক্ত

মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০২৩
53 ভিউ
পুঁজিবাজারে কারসাজি বন্ধে নতুন বিধি-বিধান সংযুক্ত

কক্সবাংলা ডটকম(১৩ মার্চ) :: পুঁজিবাজারের প্রতারকদের জন্য আসছে বড় দুঃসংবাদ। বেআইনিভাবে সম্পদ উপার্জন করেছে—তদন্তে এমন কিছু প্রমাণ হলে তা বিচারিক প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একইভাবে পুঁজিবাজারে প্রতারক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কিংবা সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী এককভাবে অথবা সম্মিলিতভাবে কোনো কারসাজি বা প্রতারণার কারণে যেসব বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তারা এর দ্বারা সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতির দ্বিগুণ অর্থ পাবেন।

পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণে এমন বিধান রেখে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ২০২২ প্রণয়ন করেছে সরকার। বর্তমানে একই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এবং দ্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ কার্যকর রয়েছে।

তবে এই আইন ও অর্ডিন্যান্সের কোনোটিতেই সম্পদ বাজেয়াপ্তের বিধান নেই। এমনকি ক্ষতিগ্রস্তদের দ্বিগুণ আর্থিক সুবিধা প্রদানের কোনো রেওয়াজও ছিল না। নতুন আইনে শুধু সম্পদ বাজেয়াপ্তের ক্ষমতাই রাখা হয়নি। শান্তির দণ্ডও দ্বিগুণ হয়েছে। কমিশন আইন ১৯৯৩-এ শাস্তির বিধান ছিল ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। নতুন আইনে তা বাড়িয়ে ১০ বছর এবং ১০ লাখ টাকা অথবা উভয় দণ্ড আরোপ করা হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ২০২২-এ শুধু কমিশনের ক্ষমতা, কাজের পরিধিই বৃদ্ধি ঘটেনি। সঙ্গে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগে যোগ্যতার মানদণ্ডও কড়াকড়ি হয়েছে।

আগের আইন ও অর্ডিন্যান্সের সঙ্গে নতুন প্রণীত আইন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ২০২২ অনেকটা পুঁজিবাজারবান্ধব। এতে বাড়ানো হয়েছে কমিশনের কাজের আওতা। নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতাও বেড়েছে বহুগুণ। শাস্তির বিধান হয়েছে দ্বিগুণ। তবে নতুন এই আইনেও থাকছে আগের সব কিছুই। এখানে আরও স্পষ্ট করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সময়ের বাস্তবতার আলোকে প্রয়োজনীয় বিধি-বিধানও সংযুক্ত করা হয়েছে।

আগের আইনে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে শুধু কোম্পানি ও সিকিউরিটি মার্কেট সংক্রান্ত বিষয়ে পারদর্শিতা অথবা অর্থনীতি, হিসাব রক্ষণ, আইন কিংবা সরকারের বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন বেসরকারি ব্যক্তিকে নিয়োগের যোগ্যতা হিসাবে দেখা হতো; কিন্তু নতুন আইনে এ ধরনের নিয়োগে ২০ বছরের অভিজ্ঞতাকে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

বলা হয়েছে, বাণিজ্য, ব্যবসায় প্রশাসন, আইন অথবা অর্থনীতি বিষয়ে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রিধারী ও সরকারের বিবেচনায় কমিশনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্য কোনো বিষয়ে জ্ঞানসহ কর্মক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০ বছর কর্ম অভিজ্ঞতা থাকা চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা বিবেচিত হবে।

এদিকে নতুন আইনে চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে যোগ্যতার মানদণ্ড কড়াকড়ি করা হলেও বাড়ানো হয়েছে কমিশনে নিযুক্তদের ক্ষমতা ও সম্মান। অর্থাৎ, কমিশনের চেয়ারম্যানকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আর কমিশনাররা ভোগ করবেন সচিবের মর্যাদা, যা আগের আইনে ছিল না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও বাজার অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ জানান, ‘খুবই ভালো উদ্যোগ। দেশে পুঁজিবাজারের ক্রম বিকাশ ও বর্তমান আকার এবং চাহিদার বাস্তবতায় নিয়ন্ত্রক আইন ও অর্ডিন্যান্স খুব একটি কার্যকর নয়। আইনের ব্যপ্তি বৃদ্ধি, স্পষ্ট এবং শাস্তির বিধানও আরও কঠিন হওয়া দরকার ছিল। নতুন আইন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণে সেই ঘাটতি দূর করবে। আমি মনে করি এ আইনটি দ্বারা আমরা বৈশ্বিক বাস্তবতায় প্রবেশ করলাম।

তবে শাস্তির আওতা বাড়ানো হলেও কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে ২০ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতাকে অতি কড়াকড়ি বলেই মনে করেন তিনি। এটি আরও কমানো উচিত বলেই মনে করেন এই পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি ও শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাকিল রিজভী  জানান, ‘আইন যত পরিষ্কার হবে, কাজ করতে তত সুবিধা। এটি যত ধূসর হবে—তার প্রায়োগিক বাস্তবতার সীমাবদ্ধতাও তত বেশি থাকবে। সেক্ষেত্রে যদি নতুন আইন আরও স্পষ্টীকরণ হয়, শৃঙ্খলার স্বার্থে শাস্তির আওতা বাড়ে, তাহলে সেটি পুঁজিবাজার উন্নয়নেই সহায়ক হবে। তবে যেহেতু এখনো আমরা এই খসড়াটির সম্পর্কে বোধগম্য নই, আপনার মাধ্যমেই অবহিত হলাম। এখন আমরা এ বিষয়ে পর্যালোচনা করব। পরে ডিএসইর মাধ্যমে আমরা আমাদের মতামত জানাব।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে পুঁজিবাজার আগের তুলনায় বেশ বড়। অস্থিরতাও বেশি। লোকচক্ষুর অন্তরালে দিনের পর দিন চলছে সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর প্রতারণা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুঁজিবাজার। সর্বস্ব হারাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। এর বিপরীতে একটা গোষ্ঠী আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন। সরকার বিষয়টি অবগত। অথচ এর বিপরীতে ওই পুরোনো আইন ও অর্ডিন্যান্স বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকটাই অকার্যকরে পরিণত হয়েছে। তা ছাড়া আগের আইন ও অর্ডিন্যান্স দুটিই খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরের।

ধারা-উপধারাও কম, যা আছে, তাও অনেকটা অস্পষ্ট। ফলে বাস্তবিক প্রয়োগ ও সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রায় সমস্যায় পড়তে হতো। তাই অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও বৈশ্বিক বাস্তবতার বিবেচনায় নিয়ে পুঁজিবাজারের ওপর বিনিয়োগকারীর আস্থা ফেরাতে সরকার এই নতুন আইন তৈরি করেছে। এই আইন এতটাই স্পষ্ট ও কম্প্রিহেনসিভ, এটি বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজার আরও শক্তিশালী হবে। কমিশনও স্বাধীনভাবে আরও ক্ষমতা নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে।

জানা গেছে, গত ৫ মার্চ আইনটির পূর্ণাঙ্গ খসড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আইনটির বিষয়ে খাত সংশ্লিষ্টদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কারও কোনো মতামত থাকলে তা জানাতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন অংশীজনের থেকে পাওয়া মতামত ইতিবাচক গ্রহণযোগ্য হলে তা চূড়ান্ত খসড়ায় সংযুক্ত করা হবে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ২০২২-এর সূচনা পর্বে বলা হয়, সিকিউরিটিতে বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সংরক্ষণ, সিকিউরিটিজ মার্কেট ও ইস্যুর নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়ন, লেনদেন এবং এ-সংক্রান্ত বিষয়াবলি বা আনুষঙ্গিক বিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে এ আইন তৈরি করা হয়েছে।

আইনটি গেজেট আকারে কার্যকরের দিন থেকে আগের সব আইন ও অর্ডিন্যান্সে বাতিল হবে। ৩১ পৃষ্ঠার নতুন এই খসড়া আইনে ১১টি অধ্যায়ে ৬৬টি ধারা এবং দেড় শতাধিক উপধারা রয়েছে। এতে পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও শৃঙ্খলায় রাখার নিয়ম-কানুন, বিধি-নিষেধ, কমিশনের আওতাধীন কার্যাবলি, পরিস্থিতি বোঝে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর দণ্ড আরোপ ও কার্যকরের ক্ষমতা সুস্পষ্ট করা হয়েছে।

এতে অধ্যায় ৭-এর ৩৬ ধারায় বেআইনিভাবে সম্পদ অর্জনের বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন—কারসাজি, প্রতারণা, কৌশল, ফন্দি, চাতুরি, শঠতা, প্ররোচনা, শেয়ারের মূল্যকে প্রভাবিত করা, অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে অপকৌশল অথবা মিথ্যা তথ্য প্রদান ইত্যাদি। আর আইনের ৪৩ ধারায় ৮ম অধ্যায়ে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি এই আইনের দ্বারা ৩৬-এর কোনো বিধি-বিধান লঙ্ঘন করেন, লঙ্ঘন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন, বা লঙ্ঘনে প্ররোচনা বা সহায়তা করেন।

এক্ষেত্রে কমিশন যদি ওই ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে মামলা দায়ের করে তাহলে সংশ্লিষ্ট আদালত এ ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতির দ্বিগুণ আর্থিক সুবিধা প্রদানের আদেশ দিতে পারবেন।

53 ভিউ

Posted ১:৫৪ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০২৩

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com