শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় জনসমাগম

বৃহস্পতিবার, ২৩ আগস্ট ২০১৮
714 ভিউ
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় জনসমাগম

কক্সবাংলা ডটকম(২৩ আগস্ট) :: ধর্মীয় অনুষ্ঠান হোক, কিংবা রাজনৈতিক সমাবেশ হোক, কোনো স্থানে খোলা ময়দানে এবং তার আশেপাশের রাস্তাগুলোতে কত পরিমাণ মানুষ সমবেত হয়, তা নির্ণয় করা কঠিন। এছাড়াও এরকম ক্ষেত্রে আয়োজক রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান এবং তাদের পক্ষের গণমাধ্যমগুলো অনেক সময়ই অতিরঞ্জিত সংখ্যা প্রকাশ করে থাকে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাঁচটি বা দশটি জনসমাগমের তালিকা তৈরি করা তাই বেশ কঠিন। এ ধরনের তালিকা একদিকে নির্ভুল হওয়ার সম্ভাবনা তো খুবই কম, অন্যদিকে তালিকায় একই ধরনের অনুষ্ঠানই পরপর একাধিকবার স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যেহেতু ঐ অনুষ্ঠানগুলোতে প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ মানুষ জমায়েত হয়।

তবে নির্ভরযোগ্য তালিকা না থাকলেও চলুন জেনে নিই বিশ্বের ইতিাহাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ সমবেত হওয়া ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর কথা। উল্লেখ্য এর বাইরেও অনেক দেশে অনেক অনুষ্ঠান আছে, স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো যেখানে অনেক বেশি লোক সমাগমের দাবি করেছে।

ভারতের কুম্ভমেলা

কুম্ভমেলায় যোগ দিতে যাচ্ছে পূণ্যার্থীরা; Image Source: indiapilgrimagetours.blogspot.com

কুম্ভমেলা হিন্দুদের একটি ধর্মীয় উৎসব। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, দেবতা এবং অসুরদের মধ্যে অমৃত নিয়ে যুদ্ধের সময়  ভগবান বিষ্ণুর হাত থেকে চারটি স্থানে কয়েক ফোঁটা করে অমৃত পড়ে গিয়েছিল। সেই স্মরণে ঐ চার স্থানে প্রতি ১২ বছর পরপর মেলার আয়োজন করা হয়। এ চারটি স্থান হচ্ছে হরিদ্বার, এলাহাবাদ, নাশিক এবং উজ্জয়িনী। প্রতিটি স্থানেই মূল মেলা অনুষ্ঠিত হয় কোনো একটি নদীর তীরে। হিন্দুদের বিশ্বাস, মেলা উপলক্ষ্যে নদীতে স্নান করলে সকল পাপ মোচন হয়ে যায়। সাধারণত ১২ বছর পরপর অনুষ্ঠিত হলেও ৬ বছর পরপর অর্ধ কুম্ভ মেলা এবং প্রতি ১৪৪ বছর পরপর মহা কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয়।

কুম্ভমেলাকে বলা হয় জনসমাগমের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ২০১৩ সালে এলাহাবাদে গঙ্গা ও যমুনার মিলনস্থলে অনুষ্ঠিত মহা কুম্ভমেলাটিকে বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশিমানুষের সমাগমবিশিষ্ট অনুষ্ঠান বলে মনে করা হয়। যদিও সঠিকভাবে উপস্থিত মানুষের সংখ্যা নিরুপণের কোনো পদ্ধতি নেই, কিন্তু দুইমাস ধরে চলমান এ মেলায় সর্বমোট ১২ কোটি মানুষ অংশ নিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে শুধু ১০ ফেব্রুয়ারিতেই প্রায় ৩ কোটি পূণ্যার্থী উপস্থিত ছিল।

কুম্ভমেলায় যোগদেওয়া পূণ্যার্থীরা; Image Source: Daniel Berehulak/Getty Images

কুম্ভমেলা ছাড়াও ভারতের আরো কয়েকটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতির রেকর্ড আছে। উদাহরণস্বরূপ কেরালার আতুকল মন্দিরে প্রতি বছর আতুকল পঙ্গলা অনুষ্ঠানে প্রায় ৩০ লাখ নারী সমবেত হয়। এটি বিশ্বের নারীদের সর্ববৃহৎ মিলনমেলা। এছাড়াও মকর্জ্যোতি নামক একটি রাশিচক্র সংক্রান্ত ঘটনা, যাকে হিন্দুরা পবিত্র জ্ঞান করে থাকে, তা প্রত্যক্ষ করার জন্য প্রতি বছর ১৪ই জানুয়ারি বিপুল সংখ্যক মানুষ কেরালায় সমবেত হয়। ২০১০ সালে সেখানে ১৫ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

ইরাকের আরবায়ীন

আরবায়ীন উপলক্ষ্য সমবেত হওয়া লক্ষ লক্ষ মানুষ; Image Source: shia-muslem.blogspot.com
আরবায়ীন উপলক্ষ্য সমবেত হওয়া লক্ষ লক্ষ মানুষ; Image Source: MEHR

আরবায়ীন হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বার্ষিক ধর্মীয় জনসমাগম। এটি প্রতি বছর ইরাকের কারবালায় অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে শিয়ারা অংশগ্রহণ করে থাকে। আরবি আরবায়ীন শব্দটির অর্থ চল্লিশ। ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা) এর পুত্র ইমাম হোসেনের শাহাদাত বার্ষিকী অর্থাৎ আশুরার দিন থেকে শিয়ারা চল্লিশ দিনের শোক পালন করে। শোকের শেষ দিনে তারা ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে পায়ে হেঁটে কারবালার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কারবালা থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরবর্তী বসরা শহর থেকেও অনেকের যাত্রা করার উদাহরণ আছে।

প্রতি বছরই বিপুল সংখ্যক শিয়া আরবায়ীনে যোগ দিয়ে থাকে। তবে ২০১৬ সালে ইরাকের অধিকাংশ এলাকা জঙ্গি সংগঠন আইএসের দখল থেকে মুক্ত হওয়ার পর অনুষ্ঠিত আরবায়ীনে লোক সমাগম ছিল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। এক্ষেত্রেও সঠিক সংখ্যা নিরুপণ করা কঠিন। তবে বিভিন্ন অনুমান অনুযায়ী সে বছর আরবায়ীনে যোগ দিয়েছিল প্রায় ২ থেকে ৩ কোটির মতো মানুষ। এছাড়াও মহররমের ১০ তারিখে আশুরা উপলক্ষ্যেও কারবালায় প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হয়। ২০১৫ সালে এ সংখ্যাটি ছিল ৭০ থেকে ৯০ লাখের মতো।

আয়াতুল্লাহ খোমেনির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া

খোমেনির জানাযায় জনসমাগম; Image Source: worldpressphoto.org
খোমেনির জানাযায় জনসমাগম; Image Source: Kaveh Kazemi/ Getty Images

আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি ছিলেন আধুনিক ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের প্রতিষ্ঠাতা। তার নেতৃত্বেই ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লব সংঘটিত হয়। এর মাধ্যমে সিআইএ-র দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শাহ রাজবংশকে উৎখাত করা হয়। বিপ্লবের পর খোমেনি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার পদ গ্রহণ করেন। একাধিক অভ্যত্থান এবং গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে ১৯৮৯ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন।

মৃত্যুর পর ৪ জুন ইরানের রাজধানী তেহরানে তাকে শেষ সম্মান জানানোর জন্য জনতার ঢল নামে। ইরানের রাষ্ট্রীয় হিসাব অনুযায়ী তেহরানের বেহেশত-ই-জাহরা কবরস্থানে যাওয়ার ৩২ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে প্রায় ১ কোটি মানুষ তাকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য উপস্থিত হয়েছিল। পশ্চিমা গণমাধ্যমের হিসেবে অবশ্য এ সংখ্যা আরো কম, প্রায় ২০ লাখ।

পোপের ম্যানিলা সফর

ম্যানিলানে জনসমাগম; Image Source: Times of Manila

এশিয়ার মধ্যে ফিলিপিনে সবচেয়ে বেশি ক্যাথলিক খ্রিস্টানের বসবাস। ২০১৩ সালে দেশটিতে ইওলান্দা টাইফুনে প্রায় ৬ হাজার ৩০০ মানুষের প্রাণহানির পর খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস দেশটি সফরে আগ্রহী হন। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ফিলিপিন্স সফরে গিয়েছিলেন। এটি ছিল তৃতীয়বারের মতো কোনো পোপের ফিলিপিন্স সফর। একইসাথে এটি ছিল একবিংশ শতাব্দীতে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র সফর।

সফরের শেষ দিনে রাজধানী ম্যানিলার রিজাল পার্কে অনুষ্ঠিত ফাইনাল মাস-এ প্রায় ষাট থেকে সত্তর লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল। এটি ছিল খ্রিস্টানদের কোনো অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ লোক সমাগম। এর আগে ১৯৯৫ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল যখন ম্যানিলা সফর করেছিলেন, তখন অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ডে এর অনুষ্ঠানেও রেকর্ড সৃষ্টিকারী প্রায় ৫০ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিল।

ঢাকার বিশ্ব ইজতেমা

রাস্তায়, বাসের উপরে বসে নামাজ পড়ছে ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীরা; Image Source: Getty Images
নামাজ পড়ছে ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীরা; Image Source: Daily Star

জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। ১৯৪৯ সালে দেশটিতে প্রতি বছর তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই বাংলাদেশি হলেও সর্বমোট ১৫০টি দেশ থেকে মানুষ এতে অংশ নিতে ছুটে আসে। লক্ষ লক্ষ মুসলমান শান্তিপূর্ণভাবে তিন দিনব্যাপী এখানে অবস্থান করে। পাঁচ ওয়াক্ত নামায একসাথে আদায় করে এবং কুরআন তিলাওয়াত ও ধর্মীয় ওয়াজ শোনে। ইজতেমার শেষ দিনে আখেরি মোনাজাতে সবচেয়ে বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করে, যেখানে বিশ্বের শান্তির জন্য দোয়া করা হয়। বর্তমানে এতে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের সমাগম হয়। এটি বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় জমায়েত।

সৌদি আরবের পবিত্র হজ্জ্ব

কাবাঘর তাওয়াফ করছেন হজ্জ্বযাত্রীরা; Image Source: AP
আরাফাতে সমবেত হজ্জ্বযাত্রীরা; Image Source: AP

বিশ্বের অন্য সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানের চেয়ে হজ্জ্ব অনেক দিক থেকেই ভিন্ন। সংখ্যায় কম হলেও এটিই প্রকৃত অর্থে আন্তর্জাতিক কোনো ধর্মীয় জনসমাগম। প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ মুসলমান সৌদি আরবে ছুটে যায় এ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। আর্থিক এবং দৈহিক সামর্থ্য থাকলে প্রতিটি মুসলমানের উপর জীবনে অন্তত একবার হজ্জ্ব করা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বাধ্যতামূলক। এটি ইসলাম ধর্মের প্রধান পাঁচটি খুঁটির মধ্যে একটি।

আরবি জিলহজ্জ্ব মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত হজ্জ্বের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। জিলহজ্জ্ব মাসের ৯ তারিখ তথা আরাফা দিবসে লক্ষ লক্ষ মুসলমান মিনা থেকে পায়ে হেঁটে আরাফার ময়দানে গমন করে এবং বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে পরদিন ঈদ পালন করে। হজ্জ্বে প্রতি বছরই প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ সমবেত হয়, যার প্রায় অর্ধেকের বেশি আসে সৌদি আরবের বাইরে অন্যান্য দেশ থেকে। ২০১২ সালের এক হিসেব অনুযায়ী সে বছর প্রায় ৩০ লাখ মুসলমান হজ্জ্বে অংশগ্রহণ করেছিল।

714 ভিউ

Posted ১০:৪১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ আগস্ট ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com