শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ব্যাংকে মুনাফা পাচ্ছেন না আমানতকারীরা

শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০
2277 ভিউ
ব্যাংকে মুনাফা পাচ্ছেন না আমানতকারীরা

ঢাকা :: রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার। বেসরকারি একটি ব্যাংকে দশ লাখ টাকা আমানত রয়েছে তার। এক বছর মেয়াদি আমানতে আগে সুদ পেতেন সাড়ে ৯ শতাংশ হারে। তবে গত জুলাই মাসে নবায়ন করেছেন ৬ শতাংশ সুদে। তার কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন নেই। থাকলে বেশি সুদে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারতেন। ব্যাংকবহির্ভূত কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাকে ৯ শতাংশের বেশি সুদ দিতে চেয়েছে। ফেরত পাবেন কিনা সেই অনিশ্চয়তার কারণে সেখানে টাকা রাখেননি। ঝুঁকির কারণে শেয়ারবাজারের দিকেও যাননি। ফলে নিরুপায় হয়েই ব্যাংকে টাকা রেখেছেন।

আব্দুস সাত্তার জানান, এই করোনাকালে ঋণগ্রহীতাদের নিয়েই নীতিনির্ধারকদের সব ভাবনা। আমানতকারীদের জন্য কেউ ভাবে না। করোনার সময়ে এমনিতেই তার জীবনযাত্রা কঠিন হয়েছে। সঞ্চয় থেকে আয় কমে যাওয়ার কারণে তিনি আরও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তার মতে, ৬ শতাংশ সুদে ব্যাংকে টাকা রেখে প্রকৃতপক্ষে তার কোনো মুনাফা হবে না। কেননা বছরে জিনিসপত্রের দাম গড়ে ৬ শতাংশের বেশি হারে বাড়ছে। এছাড়া ব্যাংক সার্ভিস চার্জ কাটবে। পাশাপাশি উৎসে কর, ভ্যাট ও আবগারি শুল্ক্ক কাটবে। তবে বছর শেষে অন্তত সময় মতো টাকা ফেরতের নিশ্চয়তার কারণেই ব্যাংকের বাইরে অন্য কোথাও টাকা রাখছেন না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসেবে গত আগস্টে বার্ষিক গড় মূল্যস্ম্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর মানে এক বছর আগে পণ্য ও সেবা কেনায় গড়ে একশ’ টাকা ব্যয় হলে আগস্টে ১০৫ টাকা ৬৫ পয়সা ব্যয় করতে হয়েছে। একই হারে থাকলে আব্দুস সাত্তারের ৬০ হাজার টাকা সুদের ৫৬ হাজার ৫শ’ টাকা খেয়ে ফেলবে মূল্যস্ম্ফীতি।

টিআইএন না থাকায় ১০ শতাংশ হারে তাকে উৎসে কর দিতে হবে ৬ হাজার টাকা। আবার ৩ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক্ক বা এক্সাইজ ডিউটি দিতে হবে। ব্যাংক সার্ভিস চার্জ হিসেবে বছরে দুইবার তিনশ’ টাকা করে ৬শ’ কেটে নেবে। এই ৬শ’ টাকা সার্ভিস চার্জের বিপরীতে আবার ১৫ শতাংশ হারে অর্থাৎ ৯০ টাকা ভ্যাট কাটা হবে। মূল্যস্ম্ফীতি এবং সব ধরনের চার্জ মিলে তার চলে যাবে ৬৬ হাজার ১৯০ টাকা। আসল থেকে তার ক্ষয় হয়ে যাবে ৬ হাজার ১৯০ টাকা। এতে করে আমানত থেকে প্রকৃতপক্ষে কোনো মুনাফা হচ্ছে না। বরং লোকসান হবে।

ব্যাংকাররা জানান, কয়েক মাস আগেও ব্যাংকগুলো ৯ থেকে সাড়ে ১০ শতাংশ পর্যন্ত সুদে মেয়াদি আমানত নিত। গত এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণের পর মেয়াদি আমানতে এখন বেশিরভাগ ব্যাংক ৬ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। আমানতের পরিমাণ ও মেয়াদ ভেদে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাড়ে ৬ থেকে ৭ শতাংশ সুদ দেওয়া হচ্ছে। আর অধিকাংশ ব্যাংক বেশি সুদের আমানত স্কিম বন্ধ করে দিয়েছে।

এ ধরনের মেয়াদি স্কিমে যাদের টাকা রয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে তাও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আবার চাকরি হারিয়ে বা আয় কমে যাওয়ায় অনেকেই নিজ থেকে মেয়াদপূর্তির আগেই স্কিম ভাঙিয়ে ফেলছেন। এক্ষেত্রে তারা সুদ পাচ্ছেন সঞ্চয়ী হারে। বর্তমানে সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাবে ব্যাংকগুলো ২ থেকে ৪ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। অবশ্য সমস্যাগ্রস্ত কয়েকটি ব্যাংক মেয়াদি আমানতে এখনও ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মূল্যস্ম্ফীতি, আবগারি শুল্ক্ক, উৎস কর, সার্ভিস চার্জ বিবেচনায় নিলে ব্যাংকে টাকা রেখে প্রকৃতপক্ষে কোনো লাভ হয় না। সব মিলে হিসাব করলে দেখা যাবে মূলধনই কমে যায়। এ প্রবণতা ভালো নয়। এতে মানুষ সঞ্চয়ের প্রতি নিরুৎসাহিত হবে। তখন ব্যাংকগুলোর হাতে ঋণযোগ্য তহবিল কমে বেসরকারি বিনিয়োগ কমবে। কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য যা বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

এনসিসি ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, মূল্যস্ম্ফীতি, আবগারি শুল্ক্ক, বিভিন্ন ধরনের চার্জ বিবেচনায় নিলে ব্যাংকে টাকা রেখে মানুষ প্রকৃতপক্ষে কোনো মুনাফা পাচ্ছে না। তবে ব্যাংকের ভালো বিকল্প না থাকায় মনের কষ্ট নিয়ে সেখানেই টাকা রাখতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্র, বন্ড, শেয়ারবাজার ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের বিকল্প হতে পারে। তবে সঞ্চয়পত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা, সীমা আরোপ করে দেওয়াসহ নানা কারণে মানুষ সেদিকে কম যাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বার বার বিজ্ঞাপনের পরও বন্ডে প্রতিষ্ঠানের বাইরে ব্যক্তি পর্যায়ের কেউ বিনিয়োগে আসছে না। শেয়ারবাজার নিয়ে ভয়ের কারণে সেদিকেও অনেকে যাচ্ছে না। আবার ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়েও মানুষের মধ্যে নানা অনীহা রয়েছে। এসব কারণে বাধ্য হয়ে ব্যাংকেই টাকা রাখছে। অবশ্য সুদহার কমার কারণে যেভাবে আমানত বৃদ্ধির কথা সেভাবে হয়তো বাড়বে না।

সংশ্নিষ্টরা জানান, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের ব্যাংকে টাকা রেখে দুই আড়াই শতাংশ বা তার কম সুদ পাওয়া যায়। তবে ওই সব দেশে মূল্যস্ম্ফীতি খুব কম হওয়ায় এবং বিনিয়োগ করার মতো নির্ভরযোগ্য অনেক উপায় থাকায় সেখানে সঞ্চয়কারীদের ঠকতে হয় না। তবে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ম্ফীতি রয়েছে ৬ শতাংশের আশপাশে। আবার ব্যাংকের বিকল্প তেমন ভালো কোনো সঞ্চয়ের জায়গা গড়ে ওঠেনি। ফলে অনেকেই বেশি সুদের আশায় ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ বা অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখে। এরকম বাস্তবতায় ঋণের সুদ কমাতে শুধু আমানতের সুদ কমানোর ওপর জোর না দিয়ে খেলাপি ঋণ আদায়, বাহুল্য খরচ কমানো ও উচ্চ মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ব্যাংকগুলোকে সরে আসার পরামর্শ বিশিষ্টজনের।

করোনার প্রভাব শুরুর আগেও অধিকাংশ ব্যাংক আমানত সংগ্রহে উদগ্রীব ছিল। আমানত সংগ্রহের জন্য ব্যাংকারদের একটি লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়ে তা অর্জনে ব্যাপক চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তবে এখন চাপ অনেক কম। সমস্যাগ্রস্ত কয়েকটি ব্যাংক ছাড়া বেশিরভাগ ব্যাংকে উদ্বৃত্ত তারল্য থাকায় অনেক ব্যাংক এখন আর ছোট আমানতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এই উদ্বৃত্ত তারল্যের অন্যতম কারণ হলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্স ও বিদেশি ঋণের কারণে গত এপ্রিল থেকে গত চার মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৬৩৬ কোটি ডলার।

কোনো না কোনোভাবে এই অর্থ আবার ব্যাংকে এসেছে। আবার করোনাভাইরাসের ক্ষতি পোষাতে সরকার ঘোষিত এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সিআরআর বা নগদ জমার হার দেড় শতাংশ কমিয়ে দেওয়ায় ব্যাংকগুলোতে ১৮ হাজার কোটি টাকার মতো ঋণযোগ্য তহবিল তৈরি হয়েছে। যেভাবে ব্যাংকের হাতে তারল্য বেড়েছে সেভাবে ঋণ চাহিদা নেই।

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী বলেন, নানা কারণে ব্যাংকগুলোতে উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো, ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ কম করছেন। অন্যদিকে করোনার এ সময়ে ভালো রেমিট্যান্স আসছে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন ও সিআরআর কমানোর কারণে বাজারে টাকা বেড়েছে। এছাড়া বিদেশি ঋণ পরিশোধে সময় পাওয়া যাচ্ছে। তবে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ অনেক পরিশোধ শুরু হবে। তখন টাকার চাহিদা বেড়ে এ অবস্থা হয়তো থাকবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানত রয়েছে ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। আর ঋণের পরিমাণ রয়েছে ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা। এতে করে ব্যাংকগুলোর গড় ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) দাঁড়িয়েছে ৭৬ দশমিক ২২ শতাংশ। হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাংক ছাড়া সব ব্যাংকের এডিআর রয়েছে নির্ধারিত সীমার নিচে। এর মানে বেশিরভাগ ব্যাংকের হাতে এখন প্রচুর ঋণযোগ্য তহবিল রয়েছে।

2277 ভিউ

Posted ২:৫৭ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com