কক্সবাংলা ডটকম(১৬ মে) :: ভারতে মোদীর অশ্বমেধের ঘোড়া ছুটছে। যদিও সরকার গড়ার মত সংখ্যাগরিষ্ঠতা অল্পের জন্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু ২০১৯ এর লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসকে সরিয়ে কর্ণাটকে একক বৃহত্তম দল হিসাবে উঠে এসেছে সেই বিজেপিই। কর্ণাটক রাজ্যপাল, একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে বিজেপিকেই প্রথম রাজ্য সরকার গড়তে ডাক দিতে পারেন।
কর্ণাটকে সরকার গড়া সম্পূর্ণ হলে দেশের মোট ১২ টি রাজ্যে সরকারে থাকবে বিজেপি। দিল্লি আর পুদুচেরি ধরে ৩১ টি রাজ্য সরকারের মধ্যে মাত্র ১০ টি বাকি রইল যেখানে বিজেপি ক্ষমতায় নেই। উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম, মোদীর অশ্বমেধের ঘোড়া ছুটছে গোটা ভারত জুড়ে। অপরাজেয়।
কংগ্রসের হাত থেকে কর্ণাটক কেড়ে গোটা ভারতকে গেরুয়া বানাবার দিকে আরও একধাপ এগিয়ে গেল মোদীর বিজেপি। কয়েক মাস আগেই, তিন রাজ্য নির্বাচনের ফলাফলে ত্রিপুরায় সরাসরি এবং নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়তে বিজেপি জোট ক্ষমতায় এসেছিল। গেরুয়া ভারত করার লক্ষ্যে তখনই একধাপ এগিয়ে গিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর দল৷ আর কর্ণাটক দখল করে সেই জয় আরও পোক্ত করল বিজেপি।
কর্ণাটকে সরকার গড়লেই ৩১ টি সরকারের মধ্যে বিজেপি ও বিজেপি জোট ২১টি রাজ্যে ক্ষমতায় থাকবে৷ ২৯ টি রাজ্য এবং ২ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লি ও পুদুচেরি সহ মোট শতাংশের হিসাবে ৬৭.৭৪ শতাংশের বেশি ভারত মোদীর করায়ত্বে৷ বাকি মাত্র ১০ টি রাজ্য৷ মোদীর নেতৃত্বে কি গোটা দেশের দখল নেবে বিজেপি? আগামী দিনে গোটা দেশেই কি গেরুয়া ঝড় লক্ষ্য করা যাবে? গুজরাত, হিমাচলপ্রদেশ, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও কর্ণাটক জয়ের পর এই প্রশ্ন কিন্তু উঠছে৷
কর্ণাটক নিয়ে, দেশের ৩১ টি রাজ্য সরকারের মধ্যে এখন ২১ টি রাজ্যে বিজেপি বা বিজেপি জোট ক্ষমতায়৷ শতাংশের হিসাবে ৬৭.৭৪ শতাংশ দেশ গেরুয়া পতাকার তলায়৷ এর মধ্যে ১৬ টি রাজ্যে সরাসরি ক্ষমতায় বিজেপি৷ বাকি ৫টি রাজ্যে তাদের ন্যাশন্যাল ডেমক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা জোটসঙ্গীরা ক্ষমতায়। রাজনৈতিক দলের পতাকা অনুযায়ী ভারতের ম্যাপ রঙ করলে এখন পুরো ভারতবর্ষকেই গেরুয়া মনে হয়৷
বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর আছেন যেসব রাজ্যে- ১. অরুণাচল প্রদেশ ২. আসাম ৩. ছত্তিশগড় ৪. গোয়া ৫. গুজরাত ৬. হরিয়ানা ৭. হিমাচল প্রদেশ ৮. ঝাড়খন্ড ৯. উত্তরাখন্ড ১০. মধ্যপ্রদেশ ১১. মহারাষ্ট্র ১২. মণিপুর ১৩. রাজস্থান ১৪. ত্রিপুরা ১৫. উত্তরপ্রদেশ। কর্ণাটকে বিজেপি সরকার গড়লে সেই সংখ্যাটা দাঁড়াবে ১৬ তে।
মোট ৫ টি রাজ্যে এখন এনডিএ জোট ক্ষমতায়। ১. বিহার ২. জম্মু কাশ্মীর ৩. মেঘালয় ৪. নাগাল্যান্ড ও ৫. সিকিম
মোট ১০ টি রাজ্য সরকারে এখনও বিজেপি নেই। ১.দিল্লি ২. অন্ধ্রপ্রদেশ ৩. ওড়িশা ৪. পুদুচেরি ৫. পাঞ্জাব ৬. কেরল ৭. মিজোরাম ৮. তামিলনাড়ু ৯. তেলেঙ্গানা ও ১০. পশ্চিমবঙ্গ
২৪ বছর আগে কংগ্রেস ও তার জোট ১৮ টি রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল৷ গুজরাত ধরে রেখে হিমাচল প্রদেশ জেতার পর কংগ্রেসের সেই রেকর্ড স্পর্শ করেছিল বিজেপি৷ আর ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়তে সরকার গঠন করে, কর্ণাটকও দখল করতে পারলে নিজেদের সেই রেকর্ড আরও উন্নত করবে বিজেপি৷
২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে মোদীর নেতৃত্বে দেশের ক্ষমতায় আসে বিজেপি৷ তারপর থেকে তেলেঙ্গনা, বাংলা, দিল্লি পাঞ্জাব, বিহার ছাড়া সব রাজ্য নির্বাচনেই বিজেপির জয়-জয়কার৷ বিহারে প্রথমে হেরে গেলেও পরে নিতীশ কুমারকে ভাঙিয়ে এখন ক্ষমতায় বিজেপি জোট৷
২০১৪ র মোদী ঝড়ের আগে ভারতের ৫ টি রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি৷ গুজরাত, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং নাগাল্যান্ডে৷ ২০১৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ, সিকিম, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, জম্মু কাশ্মীর, ঝাড়খন্ড ক্ষমতায় আসে বিজেপি৷ এর মধ্যে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও ঝাড়খন্ডে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে উঠে আসে বিজেপি মোদীর হাত ধরেই।
সব মিলিয়ে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর গোটা দেশের ২১টি রাজ্যে এখন বিজেপির শাসন৷ যা আগে কখনও হয় নি৷ এমনকি পারেনি জাতীয় কংগ্রেসও৷ তারাও সবচেয়ে বেশি ১৮ টি রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল৷
এই মূহূর্তে কংগ্রেস ও তার জোটের হাতে রয়েছে মাত্র ৩ টি রাজ্যের ক্ষমতা৷ পাঞ্জাব, মিজোরাম ও পুদুচেরি৷ দেশকে কংগ্রেস মুক্ত সরকার দেওয়ার ঘোষণা করেই দিয়েছে পদ্ম শিবির৷ ফলে এই ৩ টি রাজ্যে ক্ষমতা দখলই যে তাদের প্রধান টার্গেট তা পরিস্কার বলেই দিচ্ছেন গেরুয়া নেতারা৷ বাকি কেরলে এই মূহুর্ত্বে বাম শাসন৷ তেলেঙ্গানায় তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি, তামিলনাড়ুতে এআইএডিএমকে, দিল্লিতে আপ, ওডিশায় বিজু জনতা দল, অন্ধ্রপ্রদেশে তেলেগু দেশম ও বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস৷ এই ১০ টি সরকারও যে বিজেপি গড়তে চায় তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন নেতারা।
নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে, অমিত শাহের পরিকল্পনায় গেরুয়া রথ যে তরতরিয়ে এগুচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷ আগামী দিনেও মোদীর অশ্বমেধের ঘোড়া ভারতের বাকি রাজ্যগুলিতেও দৌড়ায় কিনা তার দিকেই নজর থাকবে ভারতবাসীর৷ তবে, গোটা ভারতবর্ষকেই গেরুয়া রঙে রাঙাবার বিজেপির স্বপ্ন যে আপাতত: যে সত্যি হয়েই চলেছে তা আর অস্বীকার করার কোন উপায়ই নেই৷
Posted ১২:৪০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৬ মে ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta