কক্সবাংলা ডটকম :: যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের নতুন নেতা নির্বাচিত হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। এতে দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন তিনি।
লিজ ট্রাস তার প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনাককে বিপুল ব্যবধানে হারিয়েছেন।
স্থানীয় সময় সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টায়) ঘোষণা করা হয়েছে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম। খবর বিবিসি।
গণ্যমাধ্যমটি জানায়,মার্গারেট থ্যাচার, টেরেসা মে-র পর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসলেন আরও এক মহিলা। ভারতের জামাই ঋষি সুনককে হারিয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হলেন লিজ ট্রাস (Liz Truss)। আগামিকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার শপথ নেবেন তিনি।
ইতিপূর্বে বরিস জনসনের মন্ত্রিসভায় বিদেশ সচিবের দায়িত্ব সামলেছিলেন কনজারভেটিভ পার্টির (Conservative Party) নেত্রী ট্রাস।
এদিন দলীয় সদস্যদের ভোটাভুটিতে জয়ের পর লিজ ট্রাস বলেন, “কনজারভেটিভ দলের নেতা নির্বাচিত হয়ে আমি গর্বিত। আমার প্রতি আস্থা রাখার এবং দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ায় সকলকে ধন্যবাদ। কঠিন অবস্থা থেকে সকলকে বের করে আনতে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ করার কথা দিচ্ছি।”
এদিকে হার স্বীকার করে নিয়ে ঋষি বলছেন, “ক্ষমতা অনুযায়ী ব্রিটেনের কনজারভেটিভ সরকারকে সহায়তা করব।”
জয়ের ভাষণে একাধিকবার উঠে এসেছে ব্রিটেনের (Britain) প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কথা। ট্রাস আরও বলেন, “ব্রেক্সিট সম্পন্ন করেছেন বরিস জনসন। করোনার টিকা বাজারে এনেছেন। ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন।” মনে করিয়ে দেন এবার তাঁর পালা। আর ব্রিটেনের মানুষকে পরিষেবা দিতে বদ্ধ পরিকর তিনি।
বিতর্কের মুখে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়েছিলেন বরিস জনসন (Boris Johnson)। তাঁর উত্তরসূরি কে হবেন তা নিয়ে ব্রিটেনের কনজারভেটিভ দলের অন্দরেই চলছিল ব্যাপক লড়াই। যার একেবারে চূড়ান্ত পর্বে লিজ ট্রাস বনাম ঋষি সুনকের লড়াই ছিল জমজমাট। তবে সময় যত এগিয়েছে, ততই পিছিয়ে পড়েছেন ঋষি। ফলাফলটাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
তবু চমৎকারের প্রত্যাশা করছিলেন সুনক। কিন্তু শেষবেলায় কোনও চমক মেলেনি। দলের টোরি সদস্যদের প্রায় ৮১ হাজার ভোটে জনসনের মন্ত্রিসভার প্রাক্তন অর্থ সচিব সুনককে হারিয়ে দিলেন ট্রাস। সেই সঙ্গে ব্রিটেনের মাটিতে ফের এক নয়া ইতিহাসের সূচনা হল।
কেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হল না ঋষি সুনকের? নেপথ্য এই কারণগুলি
আশা জাগিয়েও ছোঁয়া হল না মাইলস্টোন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর (Britain PM) কুরসির জন্য জোরদার লড়াই করেও শেষ হাসি হাসতে পারলেন না ঋষি সুনক (Rishi Sunak)।
কনজারভেটিভ দলের নেতারা ভরসা রাখলেন ব্রিটিশ নেত্রী লিজ ট্রাসের উপর। কিন্তু কেন? এত লড়াই করেও কেন ব্রিটেনের কুরসিতে বসা হল না তাঁর?
প্রথম থেকে জোর লড়াই দিচ্ছিলেন ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির জামাই। বহু পোড়খাওয়া সাদা চামড়ার রাজনীতিবিদকে পিছনে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষদফায় এসে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েন তিনি। রাজনৈতিক মহল বলছে, এর অন্যতম কারণ তাঁর স্ত্রী অক্ষতাকে ঘিরে চলতে থাকা বিতর্ক।
কথায় বলে পতির পুণ্যে স্বর্গলাভ। সুনকের ক্ষেত্রে কিন্তু পত্নীভাগ্যে বিতর্ক লাভ হয়েছিল। একদিকে বিপুল সম্পত্তি, তো অন্যদিকে আয়কর ফাঁকি, আবার রাশিয়ার সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের জেরে তদন্তের আওতায় চলে আসেন পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার অক্ষতা। পেশার কারণে অন্যান্য দেশ থেকে ব্রিটেনে আসা নাগরিকদের বিশেষ কর দিতে হয়।
সুনকের স্ত্রীর বিরুদ্ধে সেই কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। তিনি নাকি প্রভাব খাটিয়ে সেই করের আওতার বাইরে চলে আসেন। বলা হয়ে থাকে, অক্ষতার সম্পত্তি নাকি ব্রিটেনের রাণি এলিজাবেথের চেয়েও বেশি। এই বিতর্কের আঁচ আসে সুনকের গায়েও।
অভিযোগ, ব্রিটেনের অর্থসচিবের হওয়ার আগে সুনকের নামে থাকা সংস্থার কিছু শেয়ার অক্ষতার নামে স্থানান্তরিত হয়। ইনফোসিসের দপ্তর রয়েছে রাশিয়াতেও। ফলে মস্কোর সঙ্গে অক্ষতার বিশেষ সম্পর্কের অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে ইউক্রেন-রাশিয়ার দ্বন্দ্বের মাঝে ব্রিটেনের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্কের অবনতি হয়। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সঙ্গে অক্ষতার সম্পর্ক প্রভাব ফেলে প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে থাকা সুনকের ভাবমূর্তিতে।
তবে সমস্ত দোষ যে অক্ষতার তা বললে ভুল করা হবে। অর্থসচিব হিসেবে সুনকের পারফরম্যান্সে খুশি নয় কনজারভেটিভ দলের সদস্যরাই। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এক সমীক্ষা বলছে, সুনকের করনীতি না পসন্দ ছিল ৮ শতাংশ সদস্যর। আবার ৫ শতাংশ সদস্য বলেছেন সহজে তাঁর কাছে পৌঁছনো যেত না। ‘ডিপ্রাইভড আরবান এরিয়াস’ -এর তহবিলের অর্থ কেন্ট কমিউটারস বেল্ট প্রকল্পে ঢালার পরামর্শ দিয়েছিলেন সুনক। যা আদও পছন্দ হয়নি দলের একাংশের।
আবার কেউ কেউ মনে করেন, নিজের স্বার্থে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পিছন থেকে ছুরি মেরেছিলেন। বরিসকে ইস্তফা দিতে কার্যত বাধ্য করেছিলেন সুনক বলেও অভিযোগ। আর এসব কারণেই সুনকের ঠোঁট আর কাপের মধ্যে পার্থক্যটা রয়েই গেল।