কক্সবাংলা ডটকম(২ এপ্রিল) :: যুক্তরাষ্ট্র বলেছে তারা ভারতের সাথে নতুন একটি আমেরিকান আইন নিয়ে আলোচনা করেছে। ওই আইন অনুযায়ী রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম কেনার বিষয়টি নিষেধাজ্ঞা আরোপের উপযোগী হিসেবে বিবেচিত হবে।
হিন্দুস্তান টাইমসকে খুব সতর্কভাবে লেখা এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর অবশ্য সরাসরি বলেনি ভারতের এই সিস্টেম কেনাটা নিষেধাজ্ঞা আরোপের অধীনে পড়বে কি-না।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এ ধরনের আলোচনার কথা নিশ্চিত বা অস্বীকার না করে নয়াদিল্লীর এক ভারতীয় কর্মকর্তা বলেছেন, “তৃতীয় কোন দেশের (যেমন রাশিয়া) সাথে ভারতের সম্পর্কের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার বিষয় নয় এবং আমাদের প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রয়োজনীয় জিনিসের বিষয়টি শুধু আমরাই নির্ধারণ করি। বাইরের কোন চাপ ছাড়াই স্বাধীনভাবে আমরা এটা নির্ধারণ করি।”
২০১৬ সালের অক্টোবরে এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কেনার ব্যাপারে ভারত ও রাশিয়ার সরকারের অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে চুক্তি চূড়ান্ত হয়। বর্তমানে সেটা অনেকটা এগিয়েছে এবং পাঁচটি সিস্টেম কেনার জন্য দর-কষাকষি চলছে যার মূল্য ৪.৫ বিলিয়ন ডলার। দামের মতপার্থক্যের কারণে দর-কষাকষির ব্যাপারটি বর্তমানে থমকে আছে বলে জানান ভারতীয় কর্মকর্তারা।
বিভিন্ন রিপোর্টে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের আসন্ন মস্কো সফরের সময় এই মতপার্থক্যের বিষয়টির সমাধান হতে পারে। রাশিয়ার সামরিক-প্রকৌশল সহযোগিতা বিষয়ক ফেডারেল সার্ভিসের ডেপুটি প্রধান ভ্লাদিমির দ্রোজজোভ বৃহস্পতিবার মস্কোতে সাংবাদিকদের বলেছেন যে, ২০১৮ সালেই মস্কো নয়াদিল্লীর সাথে চুক্তি চূড়ান্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মকর্তা ও ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কারা এবারক্রমবি বর্তমানে কার্নেগির সাথে রয়েছেন। তিনি অনলাইন সংবাদ মাধ্যম এক্সিওসে এক খোলা-কলাম লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, এই চুক্তি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রকে দ্বন্দ্বের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্টারিং অ্যামেরিকান অ্যাডভার্সারিজ থ্রু স্যাংশান্স অ্যাক্টের (সিএএটিএসএ) অধীনে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে ভারত। এই আইনে মার্কিন প্রশাসনকে এই অধিকার দেয়া হয়েছে যে, রাশিয়ার সাথে “প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লেনদেন করলে” সেই দেশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে তারা।
২০১৭ সালের আগস্টে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই বিলটিকে আইনে পরিণত করেন। জানুয়ারি থেকে সেটা কার্যকর করা হচ্ছে। ইউক্রেন ও সিরিয়ায় ‘অপকর্ম’ করার দায়ে এবং ২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনে নাক গলানোর কথিত অভিযোগে রাশিয়াকে শাস্তি দেয়ার জন্য এই আইন করা হয়েছে।
ভারতের নিরাপত্তা প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে তাদেরকে এই চুক্তিটির ব্যাপারে মার্কিন কংগ্রেসের ছাড়া দেয়া উচিত বলে পরামর্শ দিয়েছেন এবারক্রমবি।
এস-৪০০ চুক্তি সিএএটিএসএ আইনের আওতায় পড়তে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র শুক্রবার জানান, “ভারত সরকারের সাথে আমরা সিএএটিএসএ নিয়ে আলোচনা করেছি। যুক্তরাষ্ট্র তার সহযোগীদের সাথে কাজ করতে চায় এবং তাদেরকে সাহায্য করতে চায় যাতে তারা নিষেধাজ্ঞা কর্মকাণ্ডের উপযোগী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরে থাকতে পারে।”
মুখপাত্র আরও বলেন, “ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতিরক্ষা কেনাকাটা এড়াতে বেশ কিছু দেশের সাথে আলোচনা করছি আমরা। কখনও কেউ যদি এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।”
আমেরিকার এই নীতির ফলে রাশিয়ার সাথে ভারতের দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা সম্পর্কও হুমকির মুখে পড়েছে, যেটা আমেরিকা ভাল করেই জানে। কয়েক দশক ধরেই ভারতকে রাশিয়ার কাছ থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
খোলা-কলামে এবারক্রমবি লিখেছেন, “ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ৬০ শতাংশই রাশিয়ার তৈরি।” তিনি আরও লিখেছেন, শীতল যুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ভারতের যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, বর্তমান সম্পর্ক সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।
তিনি আরও লিখেছেন, “রাশিয়ান সরবরাহ হঠাৎ বাদ দিলে সেটা ভারতের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থার জন্য হুমকি নিয়ে আসবে। যদি শক্তিশালী, সুসজ্জিত সামরিক বাহিনী ও মার্কিন স্বীকৃতির মধ্যে ভারতকে যে কোন একটি বেছে নিতে হয়, তাহলে তাদের প্রথমটি বেছে নেয়ার সম্ভাবনাই বেশি।”
Posted ৫:২০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০২ এপ্রিল ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta